করোনাভাইরাস ভয়ংকর ছড়িয়ে পড়বে আগেই জানত চীন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ভয়ংকর আকারে ছড়িয়ে পড়বে- এটি আগেই জানতেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ভাইরাসটি প্রাদুর্ভাবের এক সপ্তাহ পরেই কমিউনিস্ট পার্টির সবচেয়ে শক্তিশালী পলিটব্যুরো কমিটির বৈঠকে নেতাদের এ ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন তিনি।

বৈঠকের ভাষণে ভাইরাস রোধে সব ধরনের উদ্যোগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। শনিবার শি’র সেই বক্তব্য পার্টির দ্বিবার্ষিক জার্নাল কিউশিতে প্রকাশিত হয়। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও প্রচার করা হয়।

এর মাধ্যমে করোনা নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়া প্রেসিডেন্ট এখন সব ব্যর্থতার দায় নেতাদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন। খবর আলজাজিরার।

শি জিনপিংয়ের শাসনামলে সবচেয়ে বড় সংকটের নাম করোনাভাইরাস। এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শুধু চীনেই মারা গেছেন ১ হাজার ৬৬৫ জন। আক্রান্ত হয়েছেন ৬৮ হাজার ৫০০ জন। ফলে বেশ চাপেই আছেন তিনি। আগে কখনও এত বড় সংকটের মুখে পড়েননি শি।

পলিটব্যুরো স্থায়ী কমিটির তিনটি বৈঠকে এ ভাইরাসের ভয়াবহতা সম্পর্কে তিনি নির্দেশনা দেন। প্রথমে ৭ জানুয়ারি, দ্বিতীয় ধাপে ২২ জানুয়ারি এবং সর্বশেষ ৩ ফেব্রুয়ারি ওই বৈঠক হয়। ৩ ফেব্রুয়ারির ভাষণ প্রকাশ করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন।

গত ৩১ ডিসেম্বর চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকেই এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটে।

এক সপ্তাহ আগে ‘জাতীয় বীর’ খেতাব পাওয়া চিকিৎসক লি ওয়েনলিয়াংয়ের মৃত্যুতে চীনের জনগণের মাঝে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। ওই চিকিৎসক করোনাভাইরাস নিয়ে প্রথম তার বন্ধুদের সতর্ক করেছিলেন এবং তাকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়।

পরে অবশ্য ওই চিকিৎসককে ছেড়ে দেয়া হয়। অবশেষে সেই করোনায় আক্রান্ত হয়ে তিনি ৭ ফেব্রুয়ারি মারা যান। এরপর থেকেই চীনা নাগরিকদের মধ্যে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে।

এমন সংকটে পলিটব্যুরো নেতাদের দিকে ব্যর্থতার তীর ছুড়লেন শি। এ প্রসঙ্গে পলিটব্যুরোর কাছে শি বলেন, স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারা কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা পালনে ব্যর্থ হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তাদের শাস্তির প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

ইতিমধ্যে হুবেই ও উহানের কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের বরখাস্ত করেছেন জিনপিং। ৩ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে তিনি দাবি করেন, গত দুই সপ্তাহ আগেই এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছিলেন তিনি।

বৈঠকে তিনি বলেন, এই ভাইরাস শুধু চীনের মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করবে না। এটা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থাকেও বিপন্ন করে তুলবে। এমনকি চীনের উন্মুক্ত ব্যবসা নীতিতেও প্রভাব ফেলবে।

তিনি বলেন, ‘৭ জানুয়ারি পলিটব্যুরো স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভাইরাস রোধে সব ধরনের উদ্যোগের নির্দেশ দিয়েছি। ২২ জানুয়ারিও ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছি। আমি উহানকে অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলাম। সবাইকে বলেছি, এই মুহূর্তে আমাদের এটাতেই বেশি মনোযোগী হতে হবে।’

চীনের উহান থেকে উৎপত্তি লাভ করা করোনাভাইরাস বিশ্ববাসীর কাছে এখন এক আতঙ্কের নাম। এই ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগ অন্তত ৩০টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে আনুমানিক ৬০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চীনের বাইরে এশিয়ার আরও তিন দেশ- ফিলিপাইন, হংকং এবং জাপানে একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন। ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ফ্রান্সেও এক চীনা নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে মিসরে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এ নিয়ে দক্ষিণ আমেরিকা আর জনমানবশূন্য অ্যান্টার্কটিকা বাদে বিশ্বের পাঁচ মহাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস।

কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে জাপানে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। দেশটিতে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫২ জন। এছাড়া জাপানে ইয়োকোহোমা বন্দরে আটকে পড়া ব্রিটিশ প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসে এখন পর্যন্ত ৩৫৫ যাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, যা চীনের পর সর্বোচ্চ।

প্রমোদতরীটি এখন কোয়ারেন্টাইনে আছে। আর এতে প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সিঙ্গাপুরে ৭২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশটিতে বসবাসরত পাঁচজন বাংলাদেশি নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হংকংয়ে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৬ জন। মারা গেছেন একজন।

থাইল্যান্ডে ৩৪, দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৮, মালয়েশিয়ায় ২২, তাইওয়ানে ১৮, ম্যাকাউয়ে ১০, ভিয়েতনামে ১৬ এবং অস্ট্রেলিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ জন। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার ভারতে ৩ এবং শ্রীলংকা ও নেপালে একজন করে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।

ফিলিপাইনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজনের মৃত্যু রেকর্ড করা হয়েছে। দেশটির আরও দু’জন নাগরিক ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন। কম্বোডিয়ায় এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা একজন।

উত্তর আমেরিকা মহাদেশের প্রথম দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। দেশটির ১৫ জন এখন করোনা আক্রান্ত হয়েছে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওই অঞ্চলের আরেক দেশ কানাডায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮ জন।

ইউরোপের প্রথম দেশ হিসেবে ফ্রান্সে শনিবার এক প্রবীণ চীনা পর্যটক করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। দেশটিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১১ জন। জার্মানিতেও ১৬ জনের চিকিৎসা চলছে।

এছাড়া যুক্তরাজ্যে ৯, রাশিয়ায় ২, স্পেনে ২ এবং ফিনল্যান্ড, সুইডেন আর বেলজিয়ামে একজন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম দেশ হিসেবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রথমবার করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। দেশটিতে এ ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে আটে। শনিবার আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে মিসরে করোনা থাবা বসায়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর