পুরনো ইটে নতুন সড়ক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অর্থায়নে সড়ক নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সড়কে বালুর বদলে পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহারের জন্য কাটা হচ্ছে ছোট-বড় পাহাড়।

অপরদিকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত সড়কের ইটগুলো খুলে তা নতুনভাবে বসিয়ে একই স্থানে তৈরি করা হচ্ছে সড়ক।

পিআইও অফিস ও স্থানীয়রা জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের আলেক্ষ্যং এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের অর্থায়নে প্রায় ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে এক কিলোমিটার ব্রিক সলিং (ইটের) রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের লাইসেন্সে কাজটি বাস্তবায়ন করছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কয়েক নেতা। স্থানীয়দের অভিযোগ, আলেক্ষ্যং ব্রিক সলিং ইটের সড়কটি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে করা হয়েছিল। কিন্তু গত বছরের বর্ষায় কয়েকটি স্থানে ভেঙে যায়।

তবে ইট বিছানো রাস্তাটির অধিকাংশই সম্পূর্ণ ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা ইটের পুরনো রাস্তাটির ইটগুলো খুলে নতুনভাবে বিছিয়ে নামমাত্র কাজ করে ৬২ লাখ টাকা অফিসের যোগসাজশে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

সড়কে বালুর বদলে পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে। লাল মাটির জন্য কাটা হচ্ছে ছোট-বড় পাহাড়। এক্সকেভেটর ও শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কাটার ফলে আগামী বর্ষায় ওই এলাকায় ব্যাপক হারে পাহাড় ধসের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দা জানে আলম, ছলিমুল্লাহসহ অনেকে অভিযোগ করে বলেন, কার্যাদেশ মোতাবেক রাস্তাগুলো ১০ ফুট বলা হলেও বাস্তবে কোথাও ১০ ফুট প্রস্থ নেই। বালু ব্যবহারের কথা থাকলেও পাহাড় কেটে ব্যবহার করা হচ্ছে লাল মাটি।

কোনো অনুমোদন ছাড়াই ঠিকাদাররা পাহাড়গুলো কাটছেন শুধুমাত্র বালুর খরচ কমাতে। স্থানীয়রা নিষেধ করার পরও প্রশাসন-পরিবেশ অধিদফতরের আইন অমান্য করে কাটা হচ্ছে পাহাড়।

কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই। নিয়ম মোতাবেক পুরনো রাস্তা থাকলে পুরনো ইট বাবদ সরকার দাম ধরে রাজস্ব কেটে নেয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটিও মানা হয়নি।

বাইশারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম বলেন, কাজটি আমার ইউনিয়নে হচ্ছে, কিন্তু ঠিকাদার আমি নই।

উন্নয়ন কাজটি নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শফিউল্লাহ করছেন। কাজটি দেখাশোনা করেন মিজান নামে চেয়ারম্যানের এক লোক।

এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. সোহেল রানা বলেন, পাহাড়ের লাল মাটি ব্যবহারের বিষয়ে আমি এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গেও পরামর্শ করেছি।

তাদের দাবি পাহাড়ের লাল বালুমাটি বালুর মতোই ঠেকসই হবে। তাই আমিও ঠিকাদারকে নিষেধ করিনি। কিন্তু পাহাড় কাটার বিপক্ষে আমিও। তবে পাহাড় কাটা বন্ধের এখতিয়ার আমার নেই।

সেটি পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসনের কাজ। পুরনো ইটের সড়কে নতুন প্রকল্প প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি যোগদানের পর পরিদর্শনে গিয়ে ইটের সড়কটি দেখতে পেয়ে কাজটি অন্যত্র বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারিনি।

তবে পুরনো সড়কটি মিলিয়ে আশপাশের বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসার রাস্তায় কাজ করিয়ে এক কিলোমিটার ইটের রাস্তা পুরোটাই আদায় করে নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর