বিষমুক্ত লাউ চাষে কৃষকের মুখে হাসি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় বিষমুক্ত লাউ চাষ করে বাড়তি দামে বিক্রি করতে পেরে লাভবান হচ্ছেন কৃষকেরা। বিষমুক্ত এসব লাউ দেখতে যেমন আকর্ষণীয় তেমনি খেতে সুস্বাদু। তাই বাজারে এর চাহিদা অনেক। দামও অনেক চড়া। শীতের শেষ ভাগে এসে বিষমুক্ত লাউ চাষ করে ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, সবজি হিসেবে লাউ খুবই জনপ্রিয়। লাউ গ্রীষ্ম ও শীতকালীন সবজি হিসেবে চাষাবাদ হলেও এখন প্রায় সারা বছরই চাষ করা হয়ে থাকে। উপজেলার একটি পৌরসভা ও নয়টি ইউনিয়নের প্রায় সকল গ্রামেই কমবেশি লাউয়ের চাষ হয়েছে।

এ সময়ে বাজারে লাউয়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। বাজার দামও বেশ চড়া। সবজি উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে জৈব সার ব্যবহারের পাশাপাশি সবজির পচন রোধ ও বিভিন্ন জাতের পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষার জন্য ফেরোমেন ট্র্যাপ ও ইয়েলো কালার ট্র্যাপ ব্যবহারে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে সবজির উৎপাদন যেমন বাড়ছে তেমনি বিষমুক্ত হওয়ায়  ক্রেতারাও বাড়তি দাম দিয়ে কিনছেন। শীতের শেষ ভাগে এসে মাঠে লাউয়ের মাচা খুব একটা চোখে না পড়লেও বাজারে রয়েছে যথেষ্ট কদর। যেখানে কিছুদিন আগেও ২০ থেকে ২৫ টাকায় একটি লাউ কেনা যেত। সেখানে এখন ৫০ থেকে ৬০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।  চড়া দামে লাউ বিক্রি হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন।
সরজমিন উপজেলার খামা ও আংগিয়াদী গ্রামের লাউ বাগানে গিয়ে দেখা যায়, মাচায় বিভিন্ন জাতের গোল, মাঝারি ও লম্বা আকৃতির লাউ ঝুলে আছে। হালকা সবুজ ও সাদা রংয়ের এসব লাউ দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। লাউ চাষিরাও খুশি মনে বাগানের পরিচর্যা করছেন।
আংগিয়াদী গ্রামের সিরাজ উদ্দিন বলেন, ২০ শতক জমিতে লাউ চাষ করেছি। কোনো কীটনাশক ব্যবহার করিনি। ফেরোমেন ট্র্যাপ ও ইয়েলো কালার ট্র্যাপ ব্যবহার করে লাউয়ের পচন ও পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পেয়েছি। তাছাড়া ফলনও ভালো হয়েছে, লাউ দেখতেও আকর্ষণীয় হয়েছে। এতে আমার ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতিমধ্যে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছি। আরও প্রায় ৩০ হাজার টাকার লাউ বিক্রয় করতে পারব। খামা গ্রামের লাউচাষি আজিম উদ্দিন জানান, ৫ থেকে ৭ দিন পরপর লাউ কাটা যায়। প্রতিবার কর্তনে ৪০ থেকে ৫০টা  কাটার উপযোগী হয়। প্রতিটি লাউ পাইকারি দরে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে বেশ লাভবান হচ্ছি।
এছাড়াও লাউ চাষি আংগিয়াদী গ্রামের হাদিউল ইসলাম, আবদুল খালেক ও খামা গ্রামের আল-আমিন জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে জমিতে কীটনাশক ব্যবহার না করে ফেরোমন ফাঁদ ও ইয়েলো কালার ট্র্যাপ ব্যবহার করেছি। যে কারণে এই লাউ কিনতে ক্রেতারা বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরাও লাভবান হচ্ছেন।
আংগিয়াদী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ হামিমুল হক সোহাগ বলেন, ধান আবাদ কমিয়ে সবজি চাষ বৃদ্ধির জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি। সবজি চাষটা যেন কীটনাশকমুক্ত নিরাপদ হয় সেজন্য কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল হাসান আলামিন মানবজমিনকে বলেন, নিরাপদ সবজি আবাদে আমরা নিয়মিত কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। ইতিমধ্যে উপজেলার দু’টি গ্রামকে নিরাপদ সবজি গ্রাম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে এ উপজেলায় নিরাপদ সবজি আবাদ বৃদ্ধি পাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর