ট্যানারি মালিকরা না কিনলে পশুর চামড়া সংরক্ষণে উদ্যোগ নেবে সরকার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গত বছরের কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে তিক্ত অভিজ্ঞার পর এবার কিছুটা আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে সরকার। বুধবার শিল্প মন্ত্রণালয়ে এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এবার কোরবানির পশুর চামড়া ট্যানারি মালিকরা না কিনলে সেগুলো সরকারি উদ্যোগে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্তত তিন মাস পর্যন্ত যাতে এ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ করা যায়, সে ব্যবস্থা করা হবে।

এছাড়া চামড়া সংরক্ষণের জন্য কওমি মাদ্রাসাগুলোকে প্রস্তুত রাখা হবে। এজন্য তাদের ভর্তুকি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে উপজেলা পর্যায়ে অন্তত দুই জন ডিলারকে চামড়া সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য নিয়োগ দেওয়া হবে। এজন্য তাদেরকে প্রণোদনা দেওয়া হবে। শুধু তা-ই নয়, পরিস্থিতি বিবেচনায় সাময়িকভাবে কাঁচা চামড়া বা ওয়েট-ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদনও দেওয়া হবে। এর জন্য সরকারের রপ্তানি নীতি সংশোধন করার দরকার হলে, তা-ও করা হবে বলে জানানো হয়।

রাজধানীর মতিঝিলে শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ঐ সভায় সভাপতিত্ব করেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। তিনি বলেন, আসন্ন কোরবানির চামড়া যথাযথভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটি আলোচনা করে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে একটি সুপারিশ পেশ করবে।

সভায় আরো জানানো হয়, গত ঈদুল আজহায় আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া ক্রয়ের জন্য ট্যানারি মালিকদের অনুকূলে ৬৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও ট্যানারিগুলো ৪৩৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। আগামী ঈদুল আজহায় ট্যানারি মালিকদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতবার অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে যেসব দীর্ঘসূত্রতা ও সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেগুলো নিরসনের চেষ্টা করা হবে। এছাড়া স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য পেশাদার ও মৌসুমি কোরবানির পশু প্রক্রিয়াজাতকারী, ফড়িয়া, মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ব্যাপকভাবে প্রচার করা হবে।

সভায় শিল্পমন্ত্রী বলেন, চীনে করোনা ভাইরাস বিস্তারের ফলে দেশীয় চামড়া শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার বিকল্প বাজার অনুসন্ধান করছে। ইউরোপের বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে ট্যানারিগুলোকে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সার্টিফিকেশন অর্জন করতে হবে। সার্টিফিকেশন অর্জনে অন্যান্য শর্ত পূরণে ট্যানারি মালিকদের আরো সক্রিয় হতে হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কোরবানির চামড়ার সঙ্গে ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত। দেশীয় চামড়া শিল্পের স্বার্থে ট্যানারিগুলোকে রক্ষা করতে হবে। সে সঙ্গে কোরবানির চামড়া যাতে নষ্ট না হয় এবং তৃণমূলের চামড়া ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টিও দেখতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর