টিউলিপের বাণিজ্যিক বাগান গাজীপুরে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মুগ্ধ হওয়ার মতো সৌন্দর্যের ফুল টিউলিপ। সাধারণত পৃথিবীর শীতল দেশগুলোতে এ ফুল বেশি চাষ হয়।  আমাদের দেশে এই ফুলের বেশ চাহিদা থাকায় এখন তা বিদেশ থেকে আনা হচ্ছে। নেদারল্যান্ডস আর কাশ্মীরে ব্যাপকভাবে চাষ হওয়া সেই টিউলিপ ফুল শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরে বাণিজ্যিকভাবে ফুটিয়েছেন একজন ফুলচাষি। এই ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন, ভীষণ আগ্রহী হচ্ছেন এলাকাবাসী। এর খবর পেয়ে দূর-দূরান্ত থেকেও ছুটে আসছেন ফুলপাগল মানুষ। শুধু তাই নয়, ফুলের জগতে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে এই টিউলিপ ফুল। লিলি, জারবেরা, চায়না গোলাপসহ নানা ধরনের ফুলের সঙ্গে নতুন করে বাণিজ্যিকভিত্তিক এই টিউলিপ ফুল চাষে দেলোয়ার হোসেন যে স্বপ্ন দেখালেন, তা অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বলে মনে করছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাগণ।

ছয় ঋতুর এই দেশে অনেকটাই অসম্ভব হলেও দৃষ্টিনন্দন ‘মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স’ নামের এই বাগানটিতে সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে, গাজীপুরের দেলোয়ার হোসেন দেশের মাটিতে ফুটিয়েছেন টিউলিপ ফুল। লাল, হলুদসহ চার রঙের এই ফুলে ফুলে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে বাগানে। আর বৃদ্ধ বয়সেও বাগানে কাজ করে খুবই খুশি পরিচর্চাকারী। তিনি জানান, জীবনে অনেক কাজ করেছি। তবে বৃদ্ধ বয়সে গাজীপুর এসে যে ফুলের বাগানে কাজ করছি, ঘুম থেকে ওঠেই ফুলের বাগানে এসে ঘুরাফেরা করি তাতে খুবই আনন্দ পাচ্ছি, শান্তিতেই আছি। মালিক আমাকে খুবই সম্মান করে, মাসে সাত হাজার টাকা করে বেতন দেন।

বাগানটি দেখতে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থী ও উদ্যোক্তারা ভিড় করছেন।

পাশের এলাকা থেকে ফুলের বাগান দেখতে আসা ফিরোজ মিয়া জানালেন, ফুলগুলো দেখতে খুবই সুন্দর। যখন মন খারাপ হয়, তখনই মাঝে মাঝে এই বাগানে চলে আসি নানা রকম ফুল দেখতে। ফুলগুলো দেখলে মনটাও খুব ভালো হয়ে যায়। বাগানে আসা অপর এক যুবক জানালেন, এই জায়গায় একটি ফুলের বাগান আছে, যেখানে বিদেশি ফুলের ভ্যারাইটি পাওয়া যায়, এমন খবরে অনেক দূর থেকে আমি এটা দেখতে এসেছি। তো এসে যা দেখলাম, সত্যি সত্যি এ ধরনের ফুল আমি কখনো দেখিনি। ফুল তো ইকো ফ্রেন্ডলি, যে কারোরই মন ভালো হয়ে যায়, তো আমার মনটাও ভালো হয়ে গেছে। দেখে ভালোই লেগেছে। ফুলতো মানুষের মনে দোলা দেয়। এতে আমার খুব ভালো লাগছে। আরেকটা বিষয় হলো দেখলাম এই বাগানের মালিক বিদেশ থেকে জাত এনে ইকো ফ্রেন্ডলি চাষ করে টাকা উপার্জন করছে। এ বিষয়টাও আমাকে নাড়া দিচ্ছে। এরই মাঝে দেখা গেল দুজন যুবক আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে এখান থেকে বিভিন্ন জাতের ফুল নিয়ে বিক্রির উদ্দেশ্যে ওই বাগানে এসেছেন আগাম বুকিং দিতে।
বাগান মালিক মো. দেলোয়ার হোসেন তার বাগানে টিউলিপ ফুলের চাষ প্রসঙ্গে জানান, শীত প্রধান এলাকার ফুল হলেও পরীক্ষামূলকভাবে এক হাজার টিউলিপ চারা (বাল্ব) নেদারল্যান্ডন থেকে এনে রোপণ করেন উদ্যোক্তা দেলোয়ার হোসেন। তিনি মনে করছেন, আমাদের দেশেও এ ফুলের বেশ চাহিদা রয়েছে। কেউ উদ্যোগী হলে তিনি টিউলিপ ফুলের জাত সরবরাহ থেকে শুরু করে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করবেন বলে জানান। ব্যাপকভাবে এর চাষ করে বর্তমানের চেয়ে কমদামে বিক্রি করেও অনেক টাকা আয় করা সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মাহবুবুর রহমান জানান, টিউলিপ ফুল বাংলাদেশে এটাই নতুন ফুল। ব্যক্তিগতভাবে অনেকেই বাড়ির টবে টিউলিপ ফুলের চাষ করতে শোনা যায়। কিন্তু শ্রীপুরের দেলোয়ার হোসেন নিজে উদ্যোগী হয়ে বিদেশ থেকে এনে তা চাষ করছেন। প্রয়োজনে তাকে কারিগরি ও ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত সব বিষয়ে সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। দেশে যদি এই ফুলের চাষ করা যায় তা হলে এর বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
নেদারল্যান্ডস আর কাশ্মীরের মনোমুগ্ধকর টিউলিপ বাগানগুলো পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশেও ব্যাপক চাষাবাদে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা সম্ভব। বিদেশ থেকে আনা টিউলিপ এখন প্রতিশত পিস বিক্রি হচ্ছে সাতশ’ থেকে আটশ’ টাকা দরে। সেখানে চারশ’ থেকে পাঁচশ’ টাকা দরে বিক্রি করলে অনেক লাভ করা সম্ভব হবে বলে জানান দেলোয়ার হোসেন। তার সহযোগিতায় বাণিজ্যিকভাবে যে কেউ টিউলিপ ফুল চাষে আসতে পারেন। এর আগে তিনি জারবেরা, রজনীগন্ধা, বাহারি রঙের চায়না গোলাপ চাষেও ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। ২০১৭ সালে অর্জন করেছেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক।
তিনি তার বাগানে ৩০ জন লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বছরে অন্তত ৪০ লাখ টাকা মুনাফা করছেন। পৃথিবীজুড়ে টিউলিপ ফুলের ব্যাপক কদর রয়েছে। হল্যান্ড, চীন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হয়। শীতপ্রধান জেলা পঞ্চগড়সহ বেশ কিছু অঞ্চলের তাপমাত্রা কম। তাই ওই এলাকাগুলোতে এই ফুল চাষে সফলতা সহজে পাওয়া যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর