ভেনিজুয়েলায় বিভিন্ন সময় ব্যাংক ও এটিএম বুথ বন্ধ রাখা হচ্ছে কেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভেনিজুয়েলা বিশ্বের বৃহত্তম তেল মজুদকারী দেশ এবং উৎপাদিত তেলের প্রায় সবটাই রপ্তানি করে থাকত। দেশটির সমস্যার শুরু যেন বিশ্ব বাজারে তেলের দরপতন দিয়েই।

বিশ্ব বাজারে তেলের দরপতন শুরু হয় ২০১৪ সাল থেকে। অথচ ২০০৪ থেকে ২০১৩ সাল, এই সময়ের মধ্যে ভেনিজুয়েলা ছিল বিশ্বে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আহরণ করা দেশগুলোর একটি।

যখন তেলের মূল্য বিশ্ব বাজারে বেশি ছিল এবং বেশি থাকাটাই যেন স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বর্তমানে সব তেলভিত্তিক অর্থনীতির দেশই ভুগছে কিন্তু ভেনিজুয়েলার অবস্থা আকাশ থেকে টেনে মাটিতে ফেলে দেওয়ার মত।

বর্তমানে দেশটি যেসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি, হ্রাসমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বাজেট ঘাটতি।

তেলের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতাকে কিছুটা দায়ী করা গেলেও বড় দোষটা গিয়ে পড়ে দেশের নেতাদের কাঁধে।তাদের অসামর্থ্যেই মূলত ভুগছে ভেনিজুয়েলা।

দেশটির অতিরিক্ত ব্যয় সমস্যা বহু পুরনো। ব্যয়ের বেশির ভাগই হচ্ছিল গোপনে, কিন্তু এর অধিকাংশই আবার প্রকাশ্যে চলে যাচ্ছিল ভোগ স্ফীতি তৈরিতে, যার আসল উদ্দেশ্য ছিল সরকারি দল পিএসইউভির নির্বাচনে জেতার সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।

২০১৩ সালে চাভেজ যুগের সমাপ্তি নাগাদ ভেনিজুয়েলার অর্থ ঘাটতি আনুমানিক জিডিপির ১৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। ওই সময়ে অন্য কোনো ওপেক দেশেই এমনটি ঘটেনি।

অধিকাংশই তেলের মূল্য বৃদ্ধির সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত আয় রিজার্ভ হিসেবে রেখে দিয়েছিল।

কিন্তু ভেনিজুয়েলা ব্যয় কমিয়ে রিজার্ভের দিকে কোন নজর দেয়নি। তেলের মূল্য কমতে শুরু করার আগে ব্যয় কমানো কী জিনিস, ভেনিজুয়েলা যেন ভুলেই গিয়েছিল। এই শতকের মধ্যভাগ থেকে তেল রিজার্ভ বেড়েছে অথচ উৎপাদন হ্রাস ও বর্ধিত ঋণের অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। এমন গোটাকয়েক রাষ্ট্রের মধ্যে ভেনিজুয়েলা একটি।

এর অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে, প্রশিক্ষিত কর্মীদের বদলে ‘বিপ্লবীদের’ এই খাতে নিয়োগ দেয়া, যারা প্রেসিডেন্টের যেকোনো ইচ্ছা বাস্তবায়নে ব্যাকুল। ফলশ্রুতিতে এখন পর্যন্ত সেখানে রয়ে গেছে উৎপাদনশীলতার সমস্যা।

সাধারণত দেখা যায়, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পেলে চাকরির সুযোগ তৈরি হয়। সেই হারও ধীরগতির হবে সেটাই স্বাভাবিক। প্রতিষ্ঠান লাভজনক না হলে সেখানে নতুন নিয়োগের সম্ভাবনা থাকে না।

২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কলম্বিয়ার তেল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৯২ শতাংশ, কিন্তু চাকরির হার বেড়েছে ৫ শতাংশ।

একই সময়ে ভেনিজুয়েলায় তেল উৎপাদন কমে যাওয়া সত্ত্বেও চাকরি বেড়েছে ২৫৬ শতাংশ। এছাড়া অধিক হারে রাষ্ট্রীয়করণ দেশের মুদ্রাস্ফীতির জন্যও দায়ী।

প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহ, দারিদ্র্য দূর এবং অসমতাকে ব্যালেন্স দেয়ার জন্য কিছু রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সবকিছু রাষ্ট্রীয়করণ করতে হবে এটা কোনভাবেই যুক্তিযুক্ত নয়। অথচ ভেনিজুয়েলায় সেটাই ঘটেছে।

২০১৭ সালের শুরুর দিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অব্যাহত নিষেধাজ্ঞার মুখে অর্থনৈতিক অস্থিরতা ও মুদ্রাস্ফীতি রুখতে ভেনিজুয়েলা নতুন ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেছিল।

‘পেট্রো’ নামের এই নতুন মুদ্রার মূল্যমানের নির্ণায়ক ছিল ল্যাটিন আমেরিকার দেশটির বিপুল তেলের রিজার্ভ। পশ্চিমের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীদের নতুন মুদ্রায় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাই ছিল মূল লক্ষ্য।

কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে এ ধরনের কারেন্সিতে কোন মার্কিন নাগরিক বিনিয়োগ করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়ে দেন। অর্থাৎ ভেনিজুয়েলা পেট্রো দিয়ে সমস্যার কোন সমাধান করতে পারে নি।

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, মুদ্রা সংকটের কারণে অনেক সময় ব্যাংক, এটিএম বুথ বন্ধ রাখা হচ্ছে। ভেনিজুয়েলার সরকার কিভাবে দেশের এই অর্থনৈতিক সংকট দূর করবে, সেটাই দেখার বিষয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর