ট্রেড লাইসেন্স দেবে বেপজা বেপজার সব শিল্পপ্রতিষ্ঠান: ইউপি নয়

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বেপজার আওতাধীন সব ধরনের শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স স্থানীয় সরকারের (ইউনিয়ন পরিষদ) কাছ থেকে নেয়ার বিধান বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে এই লাইসেন্স ইস্যু করবে বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা)। আর ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু থেকে প্রাপ্য ফির একটি অংশ সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে প্রদান করবে বেপজা।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেপজার গভর্নর বোর্ড সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকের কার্যবিবরণীতে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় অবস্থিত বেপজার অধীনে ইপিজেডের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে বেপজা ট্রেড লাইসেন্স প্রদান করবে।

তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান স্বনির্ভর হোক সেটিই প্রত্যাশা, তাদের আয়ের সংস্থান রাখার প্রয়োজন রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বর্ণিত আইন থেকে বেপজাকে অব্যাহতি প্রদান করা হলেও ইউনিয়ন পরিষদের আয় নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ট্রেড লাইসেন্স ফি বাবদ আয়কৃত অর্থের একটি অংশ বেপজা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে প্রদান করবে। আয়ের কত অংশ ইউনিয়ন পরিষদকে দেয়া হবে তা নির্ণয়ের জন্য একটি কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।

সূত্র জানায়, ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তের আলোকে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্য সচিব আছেন বেপজার সদস্য (অর্থ)। এই কমিটি বিদ্যমান আইন ও বিধি বিধানের আলোকে ইউনিয়ন পরিষদকে কতটুকু ট্রেড লাইসেন্স ফির অংশ প্রদান করবে তা নিরূপণ করে সুপারিশ করবে। এরপর এটি যাচাই-বাছাই করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।

জানা যায়, বেপজার গভর্নর বোর্ড সভায় ইপিজেডে স্থাপিত সব শিল্পকারখানার ওপর ইউনিয়ন পরিষদ আইন-২০০৯ এর প্রয়োগ অব্যাহতি প্রদানসহ কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা হয়।

সভায় বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল এসএম সালাউদ্দিন ইসলাম বলেন, ৮টি ইপিজেডের অধিকাংশের যাত্রা শুরু হয়েছে। বর্তমান সরকারের বিনিয়োগবান্ধব নীতির ফলে গত দশ বছরে ইপিজেডসমূহে ১৯৬টি নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়েছে। এখন মোট উৎপাদনরত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪৭৫টি। এসব শিল্পের অনুকূলে বিনিয়োগের পরিমাণ তিনগুণ বেড়ে ৫০৯ কোটি মার্কিন ডলার বা ৪৩ হাজার ২৬৫ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের অধীনস্থ বেপজার সব ইপিজেডের শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদ আইন-২০০৯ এর ৬৬ ধারায় এ ক্ষমতা দেয়া আছে। তবে ইউনিয়ন পরিষদের আদর্শ কর তফসিল ২০১৩ স্থগিত করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ উদ্যোগ গ্রহণ করে। যাতে ইপিজেডের আওতায় গড়ে ওঠা শিল্পপ্রতিষ্ঠান ট্রেড লাইসেন্স ইউনিয়ন পরিষদ থেকে গ্রহণ করতে না হয়।

এটি বাস্তবায়ন করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারির সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু আইনগত জটিলতা থাকায় প্রজ্ঞাপন জারির আগে আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে ভেটিংয়ের জন্য প্রেরণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভেটিং না পাওয়ায় এখন পর্যন্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা সম্ভব হয়নি।

সূত্র মতে, বেপজার গভর্নর বোর্ড সভায় এ বিষয়টি উপস্থাপনে করে বলা হয়, ইউনিয়ন পরিষদ আইনের ১(২) ধারা মতে স্থানীয় সরকার বিভাগ বেপজার অধীনে ইপিজেডগুলোর ওপর আইন প্রয়োগ থেকে অব্যাহতি দিতে পারে।

ওই বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, বর্তমান স্থানীয় সরকার বিভাগ (ইউনিয়ন পরিষদ) আইনে বেপজার অধীনে ইপিজেডগুলোর ওপর আইনের প্রয়োগ অব্যাহতি প্রদান করা যায়।

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বৈঠকে বলেন, ইপিজেডের বাইরে অবস্থিত প্রধান সড়কসহ অন্যান্য অবকাঠামো সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নের জন্য বেপজা ট্রেড লাইসেন্স থেকে আদায়কৃত অর্থের কিছুটা ইউনিয়ন পরিষদকে প্রদান করতে পারে।

ওই বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ তাদের বিদ্যমান স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ এর ধারা ১(২) অনুযায়ী গেজেড নোটিফিকেশনের মাধ্যমে বেপজার অধীনে ইপিজেডগুলোকে আইনের প্রয়োগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করার সিদ্ধান্ত হয়। বেপজা এখন থেকে ইপিজেডের ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু করবে।

জানা গেছে, বেজপার অধীনে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, আদমজী, কর্ণফুলী, মোংলা, ঈশ্বরদী ও উত্তরা ইপিজেড রয়েছে। এসব ইপিজেড থেকে উৎপাদিত পণ্য প্রতিবছরে রফতানি করে আয় করছে ৭৫২ কোটি মার্কিন ডলার। এটি মোট জাতীয় রফতানি আয়ের ১৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বর্তমান ইপিজেডের বিভিন্ন শিল্পে কাজ করছে ৫ লাখ ২১ হাজার ৫৬১ জন। কর্মরত শ্রমিকের মধ্যে ৬৬ শতাংশই নারী।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর