বিশাল প্রত্যাশা নগরবাসীর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বহুল আলোচিত-সমালোচিত ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে জনগণের ভোটে বিশাল ব্যবধানে ঢাকা উত্তরে আতিকুল ইসলাম এবং ঢাকা দক্ষিণে ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। ভোটের আগে তারা নগরবাসীকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন নতুন এক সচল ঢাকার যেখানে বৃষ্টি হলে ড্রেনেজ উপরে রাস্তায় পানি জমবে না, যানজটে পড়ে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় নষ্ট হবে না, বাতাসে থাকবে না ধূলাবালি, মাদক-সন্ত্রাস মুক্ত সমাজ, সকল নাগরিক সেবা ৯০ দিনের মধ্যে হবে নিশ্চিত করার। মেয়রদের এই প্রতিশ্রুতিতে সাড়া দিয়ে নগরবাসী তাদের রায় দিয়ে তাদের জয়যুক্ত করেছে। দুই মেয়র ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় হওয়ায় কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশাও বিশাল, তবে প্রত্যাশার চেয়ে বাস্তবায়ন যেন বেশি সবার। অপেক্ষা সচল ঢাকা উপহার দিতে মেয়রদের দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হতে কত সময় লাগবে এবং আদৌ কাক্সিক্ষত সেবা নিশ্চিত হবে কিনা কিংবা প্রতিশ্রুতিগুলো কী প্রতিশ্রুতি হিসেবেই পড়ে থাকবে কিনা তার দিকে দৃষ্টি এখন নগরবাসীর।

নগরের সাধারণ জনগণের মতে, অতীতের মেয়রগণ নির্বাচনের আগে অকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন কিন্তু তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি বরং ঢাকা ধীরে ধীরে অচল রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। অথচ সকলেই নিজেকে সফল দাবি করেছেন। বর্তমানে নির্বাচিত দুই মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় ও ক্লিন ইমেজের যোগ্যতা সম্পন্ন সংসদ সদস্য ছিলেন বিধায় তার প্রতি নগরবাসীর প্রত্যাশা বেশি। ঢাকা উত্তরের চেয়ে ঢাকা দক্ষিণ বেশি গিঞ্জি হওয়ায় এখানে জটিলতাও বেশি। তাপস নির্বাচিত হওয়ায় এসব সমস্যা সমাধান হবে বলে তারা বিশ্বাস করেন। এদিকে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম খুবই এনার্জেটিক হওয়ায় জনগণের আস্থা রয়েছে তার প্রতি। বিগত সময় ৯ মাস মেয়রের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি অনেক সমস্যার কথা জানেন। তার পক্ষে সেসব সমস্যা সামাধান করে নাগরিক সুবিধা দ্রুত নিশ্চিত করতে পারবেন বলে মনে করছেন নগরবাসী।

এছাড়া দুই মেয়র ক্ষমতাসীন সরকারের হওয়ায় উন্নয়ন হতে কোন ধরণের বাধা থাকবে না। কোন পদক্ষেপ নিলে তা বাধাপ্রাপ্ত হবে না এবং বাজেটের কোন সমস্যার কারণে কোন উন্নয়ন আটকে থাকবে না। ক্ষমতাসীন সরকার দলীয় মেয়র হওয়ায় জনগণের প্রত্যাশাও অনেক বেশি।

গতকাল ঢাকা দক্ষিণের নব নির্বাচিত মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, এ বিজয় ঢাকাবাসীর। নাগরিক সেবা এবং উন্নত ঢাকা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ঢাকার উন্নয়নের স্বার্থে কিছু ক্ষেত্রে দল মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে কাজ করবো।

সব ব্যানার-ফেন্টুন এবং পোস্টার আজকের মধ্যে পরিষ্কার করার আহবান জানিয়েছেন তাপস। তিনি বলেন, মেয়রের গুরু দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকবো, কোন অশুভ শক্তি যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে খেলাল রাখবো। দল মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করবো, পরাজিতদের প্রতিও সহানুভূতি থাকবে বলে জানান তাপস। এর আগে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে তাপস বলেছিলেন, মেয়র নির্বাচিত হলে দায়িত্ব গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে নাগরিকদের জন্য মৌলিক সেবা নিশ্চিত করা হবে। আমরা ত্রিশ বছর মেয়াদী মহাপরিকল্পনা করবো।

এদিকে ঢাকা উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলাম নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৮টি প্রতিশ্রুতির মধ্যে ১১টি প্রতিশ্রুতি ছিল পরিবহন ও যাতায়াত সংক্রান্ত। এছাড়া বস্তি ও হকার পূনর্বাসন, উন্নত ড্রেনেজ, তরুণদের কাজে লাগানো, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাসহ নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

মেয়রদের নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে বাস্তবায়ন দেখার আগ্রহ বেশি নগরবাসীর। সাধারণ জনগণের মতে, প্রতিশ্রুতি তো সবাই দেয় কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয় না, এখন দুই মেয়র কী করেন তা দেখার অপেক্ষা তাদের। বেসরকারি ব্যাংক কর্মকতা রফিকুল ইসলাম বলেন, মেয়ররা নির্বাচনের আগে অনেক ওয়াদা দেন। তাদের যা ক্ষমতা আছে তাও বলেন, যা ক্ষমতার বাইরে তাও বলেন। এখন শুধু দেখার অপেক্ষা তারা কী করতে পারেন।

ফারুক হোসাইন বলেন, সামনের বর্ষাকালেই দেখা যাবে আমাদের মেয়ররা কতটা যোগ্য। বনশ্রীর একটি বেসরকারি স্কুল শিক্ষক মোফাচ্ছের হোসেন বলেন, দুই মেয়রই যোগ্য। তাদের কথা ও আচার-আচরণে বুঝা গেছে তারা ঢাকা শহরের জন্য কিছু করতে চান। ভাল কিছুর প্রত্যাশা করি তাদের কাছ থেকে।
উত্তরার বাসিন্দা জান্নাত নূর বলেন, গণপরিবহনের সমস্যা দ্রুত সমাধান করা উচিত মেয়রদের। বর্তমান পরিবহন ব্যবস্থায় মেয়েদের যাতায়াত কতটা কঠিন তা একমাত্র মেয়েরাই জানে।

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইচ্ছা থাকলে সবই সম্ভব। মেয়ররা যদি ইচ্ছা করেন তাহলে ঢাকার চেহারা পাল্টে যাবে। বিশ্বের বিভিন্ন শহর পরিবর্তন হয়েছে ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। আধুনিক শহরে রুপান্তরীত হচ্ছে অনেক অনুন্নোত দেশের রাজধানীগুলো। আমাদের মেয়ররা চাইলেও ঢাকাকে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন শহরে রুপান্তরীত করতে পারেন।

এদিকে ঢাকার মেয়রদের সাথে অতীতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দূরত্ব বেশি থাকলেও নেতাকর্মীদের ব্যক্তব্য এ দূরত্ব অনেকটাই দূর হয়ে গেছে। নেতাকর্মীদের মাঝে প্রফুল্ল ভাব বিরাজ করছে ব্যারিস্টার তাপস ও আতিকুল ইসলাম নির্বাচিত হওয়ায়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর