ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচন সচল ঢাকা গড়তে জনতার মুখোমুখি হওয়ার প্রত্যয় আ’লীগের দুই মেয়র প্রার্থীর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নির্বাচনী প্রচারের শেষ মুহূর্তে এসে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাকার দুই সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস। প্রতি ওয়ার্ডের এ বাড়ি থেকে ওই বাড়ি, ওলিগলিতে গিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছেন তারা।

এ সময় সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে আধুনিক ও সচল ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রতিমাসে মেয়র ও স্থানীয় কাউন্সিলরদের জনতার মুখোমুখী করে সব সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দেন এ দুই মেয়র প্রার্থী।

সোমবার দিনব্যাপী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণসংযোগ, পথসমাবেশে নৌকার প্রার্থীরা এসব কথা বলেন। ১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দুই সিটির ভোট অনুষ্ঠিত হবে।

গণসংযোগকালে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম বলেন, নির্বাচিত হলে মেয়র এবং কাউন্সিলরদের প্রতিমাসে জনগণের মুখোমুখি করা হবে। তিনি বলেন, আপনাদের কাছে মেয়র আসবে কথা শুনতে, অভিযোগ জানতে। প্রশ্ন করবেন আপনারা, সমাধান দেব আমরা। এদিন সকালে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টর এলাকায় গণসংযোগ ও পথসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

আতিকুল ইসলাম বলেন, আমি যদি আপনাদের ভোটে নির্বাচিত হই, তাহলে আমি কথা দিতে চাই, প্রতি ওয়ার্ডে প্রত্যেক মাসে ওই এলাকার জনগণের সামনে মেয়র এবং কাউন্সিলর উপস্থিত করা হবে। এর মাধ্যমে সিটি কর্পোরেশন মেয়র এবং কাউন্সিলর জনগণের মুখোমুখি হয়ে জবাবদিহির আওতায় আসবে।

নৌকার প্রার্থী আতিকুল আরও বলেন, সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে চাই। সেই আন্দোলন হবে মাদকের বিরুদ্ধে। মাদকমুক্ত শহর গড়ার লক্ষ্যে আমরা সবাই মিলে কাজ করব। আমাদের মাদকমুক্ত সমাজ গড়তেই হবে।

উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আর মাত্র দু’দিন নির্বাচনী প্রচার চালাতে পারব। এখন একমুহূর্তও সময় নষ্ট করা যাবে না।’ নেতাকর্মীদের ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচারপত্র বিলি ও নৌকায় ভোট চাইতে হবে। উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট চাইতে হবে। আর খেয়াল রাখতে হবে যেন গণসংযোগের সময় জনগণের ভোগান্তি না হয়। গণসংযোগের নামে কোনোভাবেই জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা যাবে না। জনদুর্ভোগ হলে কিন্তু ভোট বাড়বে না, ভোট কমবে। তাই জনগণের ভোগান্তি বিষয় আপনারা গুরুত্বসহকারে নজর রাখবেন।

এদিন আতিকুল ইসলাম উত্তর ঢাকার উত্তরা ৭ ও ১১ নম্বর সেক্টর, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাউনিয়া, নলভোগ, কালিয়ারটেক, কামারপাড়া এলাকায় নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগ করেন।

বেলা পৌনে ১২টার সিটির ১ নম্বর ওয়ার্ডের মাসকট প্লাজার সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘যত বেশি লোক ভোট দিতে আসবেন, তত বেশি ভোট নৌকায় পড়বে।’

নির্বাচনী পথসভায় মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি চাই না আমার প্রচারে কোনো ছাত্র-শিক্ষার্থী আসুক। এটা মোটেও ঠিক না।’ আতিকুল ইসলাম উত্তরাবাসীর উদ্দেশে বলেন, তরুণদের জন্য মাদক একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মেয়র নির্বাচিত হলে উত্তরা এলাকায় কাউন্সিলর, আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করবেন।

নির্বাচনী প্রচারের সময় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান, ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী আফছার উদ্দিন খান, জামিয়াতুল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা রুহুল আমিন খান, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি মতিউর রহমানসহ ঢাকা-১৮ আসনের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

তাপসের প্রচার : ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘ঐতিহ্যের ঢাকা, সচল ঢাকা, সুশাসিত ঢাকা, আধুনিক ঢাকা ও উন্নত ঢাকা গড়তে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ শুরু করব। যেসব নতুন ওয়ার্ড ঢাকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, সেসব ওয়ার্ডে নগরের সব আধুনিক সুবিধা দেয়া হবে। আধুনিক ও সচল ঢাকা গড়তে যা যা প্রয়োজনীয়, সব ব্যবস্থাই নেয়া হবে।

এদিন সকালে রাজধানীর ডেমরা-সারুলিয়া এলাকায় গণসংযোগকালে সাংবাদিকদের তিনি এসব প্রতিশ্রুতির কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিনষ্ট করতে বিএনপির প্রার্থীরা পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করছে- অভিযোগ করে তাপস বলেন, সংঘর্ষ বাধিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে নির্বাচনের পরিবেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। সন্ত্রাসী কার্যকলাপের মাধ্যমে তারা অপরাজনীতির চর্চা করছে। নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টায় রয়েছে তারা।

নিজেরাই নিজেদের ওপর হামলা করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ১ ফেব্রুয়ারি জনগণ ভোটের মাধ্যমে বিএনপির প্রার্থীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জবাব দেবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দুপুর দেড়টায় ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার মোড়ে ইসলামী মার্কেটের সামনে নির্বাচনী প্রচারের সময় এক সংক্ষিপ্ত পথসভায় তাপস বলেন, নির্বাচনী প্রচারে ঢাকাবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পাচ্ছি। আমাদের রূপরেখা ঢাকাবাসী সাদরে গ্রহণ করেছে। আমরা নির্বাচিত হলে ৯০ দিনের মধ্যে সব নাগরিক সুবিধা দোরগোড়ায় পৌঁছে দেব।’

এর আগে তাপসের নির্বাচনী প্রচারকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে ডেমরা-সারুলিয়া এলাকায় জড়ো হতে থাকেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগসহ দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মিছিল ও নানা স্লোগানে তারা মুখরিত করে তোলেন আশপাশের এলাকা।

পথসভা শেষে ৬৮ ও ৬৯নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ শুরু করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। দুপুর দেড়টা থেকে শুরু হওয়া এই গণসংযোগ চলে রাত পর্যন্ত।

গণসংযোগে ঢাকা দক্ষিণ মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদসহ স্থানীয় ও নগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সর্মথকরা অংশগ্রহণ করেন। এ সময় ডেমরার রসুলপুর ও হাজীপুর এলাকায় মোড়ে মোড়ে ফুল ছিটিয়ে তাপসকে বরণ করে নেয় স্থানীয় নৌকা প্রতীকের কর্মী ও সমর্থকরা।

এদিন সকালে তাপসের গণসংযোগের আগে সংগঠনের সব স্তরের নেতাকর্মী নিয়ে বর্ধিত সভা করে যুবলীগ। সংগঠনের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে পরশ বলেন, একটি সফল নির্বাচন আমাদের দ্বারপ্রান্তে এসে গেছে। এই মুহূর্তে অপশক্তিগুলো ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

পরশ আরও বলেন, ভোট দেবে জনগণ, বিজয় নিশ্চিত করবে জনগণ। তাই প্রতিটি ভোটারের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইতে হবে। আমাদের হাতে সময় বেশি নেই। তাই যতটুকু সময় আছে, তা কাজে লাগাতে হবে।

এরপর বিকালে যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম এবং ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. কদম আলী মাদবরের সমর্থনে ২নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে পথসভা ও জনসংযোগ করে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে লিফলেট বিতরণ, ভোট ও দোয়া প্রার্থনা করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর যুবলীগ উত্তর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সাবেক সহসভাপতি শেখ মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহসভাপতি সাব্বির আলম লিটু, যুগ্ম সম্পাদক আলতাফ হোসেন, যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার মুক্তার হোসেন চৌধুরী কামাল প্রমুখ।

যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সহধর্মিণী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যূথির নেতৃত্বে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেবর শেখ ফজলে নূর তাপসের পক্ষে বাংলামোটর টাইলস মার্কেট থেকে শুরু করে ইস্টার্ন প্লাজা, মোতালেব প্লাজা, হাতিরপুল, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, টিএসসি মোড়, দোয়েল চত্বর, বিজয়নগরসহ বিভিন্ন স্থানে জনসংযোগ করে ভোট চান।

অপরদিকে শেখ ফজলে নূর তাপসের সমর্থনে যুবলীগের জাকিয়া সুলতানা শেফালীর নেতৃত্বে মহিলা স্পেশাল টিম, ইঞ্জিনিয়ার মৃণাল কান্তি জোয়াদ্দারের নেতৃত্বে ইঞ্জিনিয়ার টিম, অমিত খান শুভ্রর নেতৃত্বে খেলোয়াড়দের একটি টিম, মাওলানা খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে আলেম-ওলামা ও কাজীদের একটি টিম রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এছাড়া মুন্সিগঞ্জ জেলা যুবলীগ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী জেলা যুবলীগ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সব থানা ও ওয়ার্ডে কেন্দ্রীয় ও মহানগর সমন্বয়কদের নেতৃত্বে জনসংযোগ করে লিফলেট বিতরণ ও ভোট প্রার্থনা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর