নাগরিক সমস্যা সমাধানে কাজ করার অঙ্গীকার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ঢাকাকে নারীবান্ধব, দূষণমুক্ত, পরিচ্ছন্ন, নিরাপদ ও ইন্টেলিজেন্ট শহর হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

নির্বাচিত হলে নগর এবং নগরবাসীর সমস্যা সমাধানে প্রথম দিন থেকেই কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তিনি। ঢাকা শহরকে টেকসই ও বিশ্বমানের আধুনিক নগরে রূপান্তরিত করতে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে নয়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যাগুলো সমাধান করার কথাও জানান এই মেয়র প্রার্থী। গতকাল সোমবার সকালে গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন হলে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-২০৩০ এর আলোকে তৈরি ধানের শীষের প্রার্থীর ১৯ দফা নির্বাচনী ইশতেহারে এই প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়। তাবিথ আউয়াল বলেন, নগর প্রশাসন করে নাগরিক সেবা ওয়ার্ড পর্যায়ে বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। নগর সরকার গঠন করে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। ঢাকা সিটিতে মশার উপদ্রব একটি অন্যতম সমস্যা। বর্তমান সরকার ও মেয়রেরা মশা নিধনে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি নির্বাচিত হলে মশা নিধনে বছরব্যাপী কার্যক্রম গ্রহণ করবো। যানজট নিরসনে কাজ করবো। বায়ু দূষণ রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেবো। বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাজধানী হওয়া সত্তে¡ও ঢাকা আজ কোন দশায় পৌঁছেছে। সময়ের ব্যবধানে এখানে দুর্যোগ নামে, দুর্বিপাক আসে, অনেক কিছু তছনছ করে দিয়ে যায়। কিন্তু বিপর্যয়ই শেষ কথা নয়। প্রতিটি দুর্যোগ শেষেই আমাদের সাহসী-সংগ্রামী মানুষেরা মিলিতভাবে উঠে দাঁড়ায়। তিনি আরও বলেন, সরকার চায় আমরা মাঠ ছেড়ে চলে যাই। সেজন্য সবাইকে ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানাচ্ছি। হুমকি ও ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে ভোটাররা যেন কেন্দ্রে না যায়।

নির্ভয়ে সবাইকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাবিথ বলেন, বিশ্বাসের জায়গাটা হারাবেন না। নির্বাচিত হলে ৬০ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। বাসা ভাড়া নির্ধারণ ও আবাসনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যাচেলর স্টুডেন্টস হাউজিং, চাকরিজীবী নারীদের আবাসনের জন্য সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জনগণের ক্ষমতা ব্যবহার করে বিদ্যমান সংকট সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, সততা-সদিচ্ছা দিয়ে ওয়াসার সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

তাবিথ আউয়াল জানান, মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হলে তিনি ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে বছরব্যাপী কার্যক্রম গ্রহণ করবেন। ডেঙ্গুর ভাইরাস বহনকারী এইডিস মশা ও লার্ভা নিধনে কার্যকর কীটনাশক প্রয়োগ, ‘মশা প্রতিরোধী’ বৃক্ষ রোপন, নিয়মিত মশার প্রবলতা পরীক্ষা ও জলাশয় পরিষ্কার করতে উদ্যোগ নেবেন তিনি। তাবিথ বলেন, ডেঙ্গু অনেকটাই ম্যানেজেবল এখন। সেটা কিন্তু সিটি করপোরেশন স্ব উদ্যোগে করে নাই। তাদের অবহেলাতেই ডেঙ্গু রোগ বিস্তার পেয়েছে। মেয়র হলে আমি ১ ফেব্রুয়ারি থেকেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কর্মসূচি শুরু করব।

ঢাকাকে নারীবান্ধব শহর হিসেবে গড়ে তোলার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, নারীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করা হবে। আধুনিক ডে-কেয়ার সেন্টার ও বিশেষ নারী সেল গঠন করা হবে। প্রতিবন্ধীবান্ধব আইন প্রয়োগ ও রাত্রীকালীন আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। নারীদের মাতৃত্বকালীন ও পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসা দেওয়া হবে। নারী ও শিশুদের জন্য মানসিক পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। নারী শ্রমিকদের জন্য আবাসন ও যাতায়াত ব্যবস্থা করা হবে।

ইশতেহারে দূষণমুক্ত ঢাকা গড়ার প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরে ধানের শীষের প্রার্থী বলেন, ঢাকার উত্তরে তিনি যথাযথ সবুজায়ন করবেন। ‘ভার্টিকেল গার্ডেন’ প্রকল্প চালুর পাশাপাশি নগরবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনাও রয়েছে। পরিবেশবান্ধব দালানগুলোকে সনদ দেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে নগরীর আবর্জনা অপসারণ, রিসাইক্লিং সেন্টার স্থাপন ও পশু জবাইয়ের জন্য ‘আধুনিক ¯øটার হাউজ’ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

ঢাকাকে ইন্টেলিজেন্ট শহর হিসেবে গড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাবিথ আওয়াল বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহার সারা দুনিয়ায় বেড়েছে। ঢাকাকেও ইন্টেলিজেন্ট শহর হতে হবে। বিশ্বে ইন্টেলিজেন্ট শহর হচ্ছে, এটা নতুন ট্রেন্ড। আর্টিফিশয়াল ইন্টেলিজেন্ট টেকনোলজি আছে, ড্রোন, ইন্টারনেটসহ আধুনিক প্রযুক্তি আছে, এগুলো সব কাজে লাগালেই ইন্টেলিজেন্ট শহর করা যাবে। সব ট্রাফিক ব্যবস্থা ইন্টেলিজেন্ট প্রসেসে চলে গেছে, রাস্তায় গাড়ির চাপ, গতিবিধি দেখে অটোমেটিক সিগন্যাল ব্যবস্থাপনা করা হয়। ঢাকাতে অবশ্যই ইন্টেলিজেন্ট ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। শুধু ট্রাফিক নয়, অন্যান্য সেবার ক্ষেত্রেও ইন্টেলিজেন্ট ব্যবস্থা আমার নিতে পারি। এ লক্ষ্যে গণপরিবহনমুখী যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে পুলিশ ও বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ঢাকার রুটগুলোকে ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি ইলেকট্রিক ও হাইড্রোজেন চালিত বাস, রাত্রীকালীন নিরাপদ বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ এবং নগর ঘিরে রাজউকের রিংরোড তৈরিতে সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা উল্লেখ করে উত্তরের এই মেয়র প্রার্থী সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নগরে ‘কমন ইউটিলিটি বাইপাস ও টানেল’ নির্মাণ, ‘স্কাইওয়ার্ক’ প্রবর্তন, ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ ও পার্কিং ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

নগরে নিরাপদ ও সুপেয় পানির বন্দোবস্ত, প্রতিটি বাজারে ভেজাল খাবার পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ, ব্যবসায়ীদের দ্রুত ট্রেড লাইসেন্স প্রদান, অপরাধ দমনে ইমারজেন্সি পোর্টাল স্থাপন ও ক্রাইম ম্যাপিং চালু করার কথাও বলেছেন তাবিথ। নগরবাসীর বিনোদনের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তোলা, শিশুপার্ক ও বিনোদনকেন্দ্রগুলোর আধুনিকায়ন এবং আবাসন খাতে নাগরিক সমস্যা সমাধানে অনলাইন সার্ভিস চালু করা অঙ্গীকার করেন। তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী তাবিথ ডেটা অ্যানালাইসিস ও ফেইস রিকগনিশন চালু করে অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে চান।।

তাবিথ বলেন, আমি আপনাদের কাছে আমার স্বপ্ন ও পরিকল্পনার কথাগুলো বলবার আগে আবেদন জানাচ্ছি, দয়া করে আমাকে সহযোগিতা করুন, সমর্থন করুন, আমার পাশে দাঁড়ান। আমি আপনাদের সহানুভূতি চাই। আমি কথা দিচ্ছি, আপনাদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও সেবার বিষয়ে আমি কখনো আপোষ করব না। আমি কথা দিচ্ছি, নগরবাসীর সঙ্গে বিশ্বাসভঙ্গ ও প্রতারণা আমি কখনো করব না। আমি কথা দিচ্ছি, পশ্চাদপদতা নয়, সবসময় আমার ভাবনা ও পরিকল্পনা থাকবে সম্মুখপ্রসারী ও আধুনিক।

সরকারবিরোধী অবস্থানে থেকে ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পারবেন কিনা, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তাবিথ আউয়াল বলেন, জনগণ পাশে থাকলে আমার দেওয়া ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে পারবো।

ইশতেহার ঘোষণার সময় তার সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ইবরাহীম, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামান হায়দার, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, বরকত উল্লাহ বুলু, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য জয়নাল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু, শামা ওবায়েদ, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আমিনুল হক, নিপুণ রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, এলডিপির মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর