রাবণ রাজার দেশে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কথায় আছে ‘যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ।’ কিচ্ছা কাহিনীতে যায় থাকুক ভ্রমণ পিপাষুদের কাছে শ্রীলঙ্কা খুবই আকর্ষণীয়। শ্রীলঙ্কা দক্ষিণ এশিয়ার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র।  ১৯৭২ সালের আগে এই দ্বীপ সিলন নামেও পরিচিত ছিল। এর প্রশাসনিক রাজধানীর নাম শ্রী জয়াবর্ধেনেপুরা কোট্টে। এর প্রধান শহর কলম্বো।

ভারতের দক্ষিণ উপকূল হতে ৩১ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। প্রাচীনকাল থেকেই শ্রীলঙ্কা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। সিংহলি সম্প্রদায় এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। শ্রীলঙ্কা চা, কফি, নারিকেল, রাবার উৎপাদন ও রফতানিতে বিখ্যাত।

নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সংবলিত সমুদ্রসৈকত, ভূদৃশ্য তদুপরী সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শ্রীলঙ্কাকে সারা পৃথিবীর পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় করে তুলেছে। পৃথিবীতে শ্রীলংকা একমাত্র অমুসলিম দেশ যেখানে রেডিও ও টেলিভিশনে পাঁচ ওয়াক্ত আযান দেওয়া হয়।

শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার সময়

শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থান এর কারনে আবহাওয়া বেশ চমৎকার। চারদিকে সমুদ্র থাকার কারনে এর আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ। এখানে অক্টোবর এবং নভেম্বর মাসে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয়। তাই পর্যটকদের এই সময়টা এড়িয়ে চলাই ভালো। শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করার জন্য বছরের সবচেয়ে ভালো সময় হলো ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস।

শ্রীলঙ্কার আবহাওয়া

শ্রীলঙ্কাতে সারা বছর প্রায় একরকম তাপমাত্রাই থাকে। উপকূলবর্তী এবং নিম্নাঞ্চল গুলোতে গড়ে ২৬-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকে। ক্যান্ডির মত উঁচু এলাকা গুলোতে তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম (১৮-২২ ডিগ্রি)। সারা বছর জুড়ে আদ্রতা বরাবরই বেশি থাকে।

যেভাবে যেতে হবে

ঢাকা থেকে সরাসরি আকাশপথে কলম্বো যাওয়ার মাধ্যমে আপনার শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ শুরু করতে পারেন। অথবা যদি কম খরচে যেতে চান তাহলে ভারত হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে পাসপোর্টে ভারতের ডাবল এন্ট্রি ভিসা লাগাতে হবে। ঢাকায় অবস্থিত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশন থেকে ভিসা নিতে হবে।

ঢাকায় শ্রীলংকান হাই কমিশনের ঠিকানাঃ High Commission for the Democratic Socialist Republic of Srilanka,House #15, Road #50, Gulshan- 2, Dhaka.Telephone: 8810779, Fax: 8823971

ঢাকা – শ্রীলঙ্কা বিমান টিকিট

এয়ার ইন্ডিয়া, জেট এয়ারওয়েজ, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইন্স, মালিন্দ এয়ার, শ্রীলংকান এয়ারওয়েজসহ আরও অন্যান্য এয়ারলাইন্সে ঢাকা থেকে শ্রীলঙ্কা যেতে পারেন। টিকিট কাটার জন্য বিমান সংস্থাগুলোর অফিসে যেতে পারেন।

যেভাবে যাবেন

রাজধানী কলোম্বোর একটু বাইরেই তাদের অন্তর্জাতিক বিমান বন্দর। বন্দরনাইকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের পরেই আসলে শ্রীলঙ্কা ভ্রমন শুরু হয়ে যায়। কলম্বো হলো শ্রীলঙ্কার রাজধানী এবং সবচাইতে বড় শহর। এর লোক সংখ্যা আনুমানিক ১ মিলিয়ন।  শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ করছেন এমন পর্যটকদের কাছে পশ্চিমের উপকুলটা বেশি জনপ্রিয়। পশ্চিম উপকুলেই দেশের সবচাইতে বেশি পরিমান হোটেল এবং রিসোর্ট আছে।

দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে নেগম্ব ( কলম্বো থেকে ৩৭ কিমিঃ উত্তরে ), বেরুওালা ( কলম্বো থেকে ৫৫ কিমিঃ দক্ষিণে ) , বেন্ততা ( কলম্বো থেকে ৬৪ কিমিঃ দক্ষিণে ), হিক্কাদুয়া ( কলম্বো থেকে ১২০ কিমিঃ দক্ষিণে ) ইত্যাদি।

আপনি যদি ভিড় এড়িয়ে শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান, সেক্ষেত্রে কলোম্বোর উত্তর দিকটা আপনার জন্য বেশি ভালো হবে। কাল্পিটিয়া হ্রদ এবং উইল্পাত্তু ন্যাশনাল পার্কের সৌন্দর্য আর বন্যপ্রাণীর সমারোহ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

ক্যান্ডি

শ্রিলঙ্কার আরেকটি বিখ্যাত শহর হলো ক্যান্ডি। দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং সাংস্কৃতিক রাজধানী বলা হয় একে। এখানেই অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলঙ্কার সবচাইতে বর্ণাঢ্য উৎসব ‘’এসালা পেরাহেরা’। ক্যান্ডির দক্ষিণে আছে দেশের সবচাইতে উঁচু এলাকা ‘’নুয়ারা এলিয়া’’। একে দেশের প্রসিদ্ধ চা শিল্পের কেন্দ্র বিন্দু বলা চলে। ক্যান্ডি থেকে আরও উত্তরে গেলে পাওয়া যাবে প্রাচীন শহর অনুরাধাপুর, পলন্নারুওা এবং বিখ্যাত গুহা মন্দিরের শহর দাম্বুলা।

এই জায়গার অপর নাম হলো, “গোল্ডেন টেম্পলস ডামবুলের”। জায়গাটি কলম্বোর থেকে ১৪৮ কিঃমিঃ। ১৯৯১ সালে জায়গাটিকে World Heritage sight হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। Kandy-র থেকে ৭২ কিঃমিঃ উত্তরে। শ্রীলঙ্কার মধ্য ভাগে এই জায়গাটি। সমস্ত লঙ্কার মধ্যে এই মন্দিরগুলো ভীষণ ভালভাবে সংরক্ষিত। পাহাড়ের ১৬০-মিঃ ওপরে এই গুহা মন্দিরের অবস্থান।

এ পর্যন্ত ৮০-টি গুহা মন্দির লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এখনকার সমস্ত মূর্তি ও দেয়ালে অঙ্কিত ছবি গৌতম বুদ্ধের জীবন এবং জীবনী অবলম্বনে। মোট ১৫৩-টি বুদ্ধের মূর্তি, ৩-টি শ্রীলংকার রাজাদের এবং ৪-টি ভাস্কর হিন্দু দেব-দেবীদের।

এই সব ভাস্কর্য মোট ২,১০০ বর্গমিটার জায়গা নিয়ে ছড়ান। এখানকার গুহা চিত্রগুলোতে গৌতম বুদ্ধকে ডাকিনী “মারা” যে ছলনা ও ষড়রিপুর লোভ দেখিয়ে তার বোধিত্ব নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল সেই চিত্র অঙ্কিত আছে। বুদ্ধের সর্ব প্রথম বাণীর চিত্রও আছে।

ত্রিনকোমালি

সিডনির পর ত্রিনকোমালি হলো বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোত্তম প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়। এটা ইস্টার্ন প্রভিন্সের রাজধানীও। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যার জন্য সাবেক এলটিটিই মুখ্যমন্ত্রী পিলায়ান এখন জেলে রয়েছেন।

এখানে এলে অবশ্যই হারবার ক্রুইজ অবধারিত। আছে নেভি হাউজ, এলিফ্যান্ট পয়েন্ট। এলিফ্যান্ট পয়েন্টে ১২ ইঞ্চির ব্রিটিশ কামানগুলো শত বছরের বেশি সময় ধরে শত্রুদের দূরে রাখছে। ত্রিনকোর উত্তরে রয়েছে নিলাভেলি বিচ। এখানকার জায়গার দাম বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। প্রতি ইঞ্চি দাম সোনার মতো।

হিক্কাদুয়ার পরেই পাবেন শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ উপকুল। উন্নয়নের ছোঁয়া কম থাকায় এই এলাকাগুলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ শহর হলো গল। ক্রিকেট প্রেমিরা ইতিমধ্যে অবশ্যই গলের নাম শুনে থাকবেন।

এর পরেই পাবেন বেশ কিছু চমৎকার সমুদ্র সৈকত। এর মধ্যে আছে উনাওাতুনা, অয়েলিংমা, মেরিসসা, টাংগালা এবং মাতারা সৈকত। এখান থেকে আরও পূর্ব দিকে গেলে পাবেন দর্শনীয় ইয়ালা এবং বান্দারা ন্যাশনাল পার্ক। আরও আছে পুরাতন মন্দির বেষ্টিত শহর কাতারাগ্মা।

প্রথম থেকেই পরিকল্পনা করে পদক্ষেপ নিলে আপনার শ্রীলঙ্কা ভ্রমণ হবে নিরাপদ আর অনেক আনন্দময়। সময় নিয়ে ঘুরে আসুন রূপ সৌন্দর্যের দেশ শ্রীলঙ্কা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর