করোনাভাইরাস: চীনে একের পর এক গণপরিবহন বন্ধ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চীনে নিউমোনিয়া সদৃশ করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৫ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দেশটি নিশ্চিত করেছে। এ ভাইরাসে ৮৩০ আক্রান্ত হওয়ার তথ্যও দিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল হেলথ কমিশন। আক্রান্তদের মধ্যে ১৭৭ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতি সামলাতে উহান ও হুয়াংগাং শহরসহ বেশ কয়েকটি শহরে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বেইজিংয়ে সব বড় উৎসব ও মন্দিরে মেলা বন্ধ করা হয়েছে। চলচ্চিত্র মুক্তি স্থগিত এবং পর্যটনপ্রিয় নিষিদ্ধ নগরী বন্ধ রয়েছে।

চীনের বাইরে আরও সাতটি দেশে ভাইরাসটির অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও সেখানে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। পরিস্থিতি নিয়ে জেনেভায় বৈঠকও করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

শনিবার থেকে চীনে লুনার নববর্ষের সপ্তাহব্যাপী ছুটি শুরু হচ্ছে। এ অবস্থায় হুবেই প্রদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষকে অন্যদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে। উহানের সঙ্গে বিমান ও রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যাতায়াত বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগ সড়কেও।

উহানের সর্বত্র ফেসমাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে; কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে শহরটি একটি ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়েছে বলে বাসিন্দারা জানিয়েছেন।

এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে হুবেই প্রদেশজুড়ে একের পর এক শহরে গণপরিবহন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রথমে হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গণপরিবহন বন্ধ হওয়ার পর আরও চারটি শহরে গণপরিবহন বন্ধ হচ্ছে। শহরগুলো হল- হুয়াংগ্যাং, এঝু, সিয়ানতাও ও চিবি। এত শহরে একসঙ্গে গণপরিবহন বন্ধের ঘটনা ‘নজিরবিহীন’।

উহান শহরের বাসিন্দা ১ কোটি ১০ লাখ। বাসিন্দাদের শহর না ছাড়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সব বহির্গামী ট্রেন সার্ভিস ও উড়োজাহাজের ফ্লাইট সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা এবং দুপুর ১টা থেকে বাস, সাবওয়ে ও ফেরি সার্ভিসও বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয় স্থানীয় সরকার।

এর কয়েক ঘণ্টা পর একই ব্যবস্থা নেয় দ্বিতীয় আরেকটি শহর হুয়াংগ্যাংয়ও। এ শহরের বাসিন্দা প্রায় ৭০ লাখ। উহানের পূর্বের এ শহরটিতে কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে বাস ও ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া ছাড়াও বাসিন্দাদের শহরের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। অন্য শহরগুলোতেও মানুষের চলাফেরা এবং পরস্পরের সংস্পর্শে না যাওয়ার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে।

হুয়াংগ্যাংয়ের দক্ষিণের এঝু শহরে ট্রেন স্টেশনগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সিয়ানতাও শহরে গণপরিবহন বন্ধ করাসহ লোক সমাগম নিষেধ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থানে স্থাপনা বসিয়ে ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্তের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

চিবি শহরেও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে পরিবহন। রাজধানী বেইজিংয়ে নববর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত বড় সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।

উহানের চিকিৎসকরা জানান, ভাইরাসটি উদ্বেগজনক হারে ছড়িয়ে পড়ছে। হাসপাতাল ভরে যাচ্ছে হাজার হাজার রোগীতে। তারা লাইন ধরে চিকিৎসক দেখানোর অপেক্ষায় আছে। এতেই বোঝা যায় তারা কতটা আতঙ্কে আছে। ‘হাঁচি, কাশির মাধ্যমে’ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকা রোগটি চীনের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার পাশাপাশি সুদূর যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য কয়েকটি দেশেও ছড়িয়েছে।

বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুরে প্রথম এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। সেখানে চীন থেকে যাওয়া ৬৬ বছর বয়সী এক ব্যক্তির দেহে ভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

চীনের বাইরে থাইল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি চারজনের আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আক্রান্ত ব্যক্তির সন্ধান মিলেছে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও।

ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জেনেভার সদর দফতরে এক বৈঠকের পর জানিয়েছে, করোনাভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবকে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হবে কিনা সে ব্যাপারে তারা শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেবে।

ডব্লিউএইচওর প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস বলেন, ‘ভুল করবেন না। চীনে জরুরি অবস্থা সৃষ্টি করলেও এটি এখন বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেনি, তবে হয়ে উঠতে পারে।

ধারণা করা হয়, চীনের মধ্যাঞ্চলীয় শহর উহানের একটি পশু বাজারে গত বছরের শেষ দিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন দেশে বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ার পর ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর