জাকাত আদায় না দেয়ার করুণ পরিণতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার আদেশ পালন করার মাধ্যমে ইহকাল ও পরকালে তাঁর নৈকট্য লাভ করা যায়।রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালার আদেশগুলোর মধ্যে একটি ফরজ বিধান হচ্ছে জাকাত।

জাকাত অবিলম্বে পরিশোধ করা ওয়াজিব; যদি সম্পদ নেসাব পরিমাণ পৌঁছে এবং নেসাবের এক বছর পূর্ণ হয়। কেউ যদি কোনো ওজর ছাড়া বিলম্ব করেন তাহলে তিনি গুনাহগার হবেন। আর যদি কোনো ওজরের কারণে বিলম্ব করেন; যেমন- গরীব কাউকে না পাওয়া; তাহলে অসুবিধা নেই।

পক্ষান্তরে, রমজান মাসের জন্য জাকাত বিলম্বে পরিশোধ করা জায়েয নয়। তবে যদি সামান্য কিছু সময় হয় তাহলে দেরী করা জায়েয হবে। উদাহরণ: বর্ষপূর্তি হয়েছে শাবান মাসের শেষার্ধে তাহলে রমজান পর্যন্ত বিলম্ব করতে কোনো অসুবিধা নেই।

জাকাত না দেয়ার পরিণতি সম্পর্কে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারিমে বলেন,

وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلاَ يُنفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللّهِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ

يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَـذَا مَا كَنَزْتُمْ لأَنفُسِكُمْ فَذُوقُواْ مَا كُنتُمْ تَكْنِزُونَ

‘আর যারা স্বর্ণ-রৌপ্য জমা করে রাখে আর তা হতে আল্লাহর পথে ব্যয় করে না তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন। সে দিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তার মাধ্যমে তাদের ললাটসমূহে, পার্শ্বদেশ ও পৃষ্ঠদেশসমূহে দাগ দেয়া হবে। বলা হবে এগুলো ওই সব সম্পদ যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখেছিলে। সুতরাং এখন স্বাদ গ্রহণ করো জমা করে রাখা বস্তুর।; (সূরা: আত তাওবাহ, আয়াত: ৩৪-৩৫)।

সহিহুল বুখারীতে আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা যাকে ধন-সম্পদ দান করেছেন সে যদি সম্পদের জাকাত না দেয় কেয়ামতের দিন তার সম্পদগুলোকে টাক মাথা বিশিষ্ট সাপে পরিণত করা হবে। তার চোখের ওপরে দু‘টি কালো বিন্দু থাকবে। সাপটি তার চিবুকে কামড়িয়ে ধরবে এবং বলবে, আমি তোমার মাল। আমিই তোমর গুপ্তধন।’

অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) কোরআনের এ আয়াতটি পাঠ করলেন,

وَلاَ يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللّهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُواْ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

‘যাদেরকে আল্লাহ তাঁর অনুগ্রহে ধন-সম্পদ দান করেছেন, তারা যদি তাতে কৃপণতা করে, এই কৃপণতা তাদের জন্য কল্যাণকর হবে বলে তারা যেন ধারণা পোষণ না করে। বরং এটা তাদের জন্য একান্তই ক্ষতিকর। যাতে তারা কার্পণ্য করে, সে ধন-সম্পদকে কেয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ি বানিয়ে পরানো হবে।’ (সূরা: আলে ইমরান, আয়াত: ১৮০; সহিহুল বুখারী-হা:১৪০৩)।

সহিহ মুসলিম আবূ হুরাইরাহ  (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ বলেন, ‘স্বর্ণ-রৌপ্যের যেই মালিক তার স্বর্ণ-রৌপ্যের জাকাত প্রদান করবে না কেয়ামতের দিন তার স্বর্ণে র‌্যপ্যেগুলোকে আগুন দিয়ে গলিয়ে চ্যাপটা করা হবে। অতঃপর জাহান্নামের আগুনে গরম করে তার পার্শ্বদেশে, পিঠে এবং কপালে তা দিয়ে ছেঁকা দেয়া হবে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে আবার গরম করা হবে। এমন একদিনে তাদের এ শাস্তি চলতে থাকবে যার পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। হাশরের মাঠে মানুষের মাঝে ফায়সালা শেষ হওয়ার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। পরিশেষে সে জান্নাত অথবা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’

রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো উট ওয়ালার কী অবস্থা হবে? উত্তরে তিনি বললেন, ‘উটের মালিক যদি এর হক আদায় না করে অর্থাৎ-জাকাত না দেয় কেয়ামতের দিন একটি সমতল ভূমিতে উটগুলোকে পূর্বে চেয়ে মোটা-তাজা অবস্থায় একত্রিত করা হবে। তা থেকে একটি বাচ্চাও বাদ পড়বে না। উটগুলো পা দিয়ে তাদের মালিককে পিষতে থাকবে এবং দাঁত দিয়ে কামড়াতে থাকবে। যখন প্রথম দলের পালা শেষ হবে পরবর্তী দলের পালা আসবে। এমন এক দীর্ঘ দিনে তাদের এ শাস্তি চলতে থাকবে যার পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। মানুষের মাঝে ফায়সালা শেষ হওয়ার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত হাশরের মাঠে তাকে এবাবে শাস্তি দেয়া হবে। পরিশেষে সে জান্নাত অথবা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো গরু এবং ছাগলের মালিকের কী অবস্থা হবে? উত্তরে বললেন, গরু বা ছাগলের মালিক যদি এর হক আদায় না করে অর্থাৎ- জাকাত না দেয় কেয়ামতের দিন একটি সমতল ভূমিতে গরু ও ছাগলগুলোকে একত্রিত করা হবে। তা থেকে একটিও বাদ পড়বে না এবং কোনটিই শিংবিহীন, বাঁকা শিং অথবা ভাঙ্গা শিংবিশিষ্ট থাকবে না। অর্থাৎ-সবগুলো পূর্বের চেয়ে মোটা-তাজা এবং ধারাল সোজা শিংবিশিষ্ট থাকবে। শিং দিয়ে তাদের মালিককে আঘাত করবে এবং পা দ্বারা পিষতে থাকবে। এমন এক দীর্ঘ  দিনে তাদের শাস্তি চলতে থাকবে যার পরিমাণ হবে দুনিয়ার পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান। মানুষের মাঝে ফায়সালা শেষ হওয়ার পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত হাশরের মাঠে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। পরিশেষে সে জান্নাত অথবা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।(সহিহ মুসলিম- অধ্যায়: কিতাবুয জাকাত, হা: ২৪ (৯৮৭)।

এক নজরে জাকাত আদায় না করার পরিণতি-

(১) জাকাত না দেয়া প্রতিটি সম্পদের একটি আকৃতি হবে। যা আগুনে উত্তপ্ত করে ব্যক্তির শরীরে দাগিয়ে দেয়া হবে।

(২) কোনো কোনো সম্পদ বিষাক্ত সাপে পরিণত হবে এবং জাকাত আদায়কারীকে দংশন করতে থাকবে।

(৩) প্রাণী জাতীয় সম্পদসমূহ কোনটা শিং দিয়ে আঘাত করবে আবার কোনটা দাঁত দিয়ে কামড় দেবে।

জাকাত আদায়ের বিবিধ উপকারিতা ও শিক্ষা:

(১) গরীবের প্রযোজন পূর্ণ হয়।

(২) অভিশপ্ত পুঁজিতন্ত্রের মূলোৎপাটন হয়।

(৩) সম্পদ কুক্ষিগত করার মানসিকতাকে শেষ করে সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য সৃষ্টি হয়।

(৪) মুসলমানদের সামগ্রিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

(৫) দারিদ্র্য বিমোচনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

(৬) চুরি-ডাকাতি-চিনতাইসহ সবরকম অভাবজনিত অপরাধ মূলোৎটাটিত হয়।

(৭) গরীব-ধনীর মাঝে সেতুবন্ধন সৃষ্টি হয়।

(৮) সম্পদের বরকত ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

নবীজী (সা.) বলেন, জাকাতের সম্পদ কমে না। (সহিহ মুসলিম- হা: ৬৭৫৭,মা:,শা:,হা: ৬৯/২৫৮৮, জামি আত তিরমিযী-হা: ২০২৯, সহিহ)।

অথাৎ- হয়তো দৃশ্যত: সম্পদের পরিমাণ কমবে,কিন্তু আল্লাহ তায়ালা এই স্বল্প সম্পদের মাঝেই বেশি সম্পদের কার্যকারী ক্ষমতা দিয়ে দেবেন।

(৯) সম্পদের পরিধি বৃদ্ধি পায়। কেননা সম্পদ যখন জাকাতের মাধ্যমে অভাবীদের মাঝে বন্টিত হয়, তখন এর উপকারিতার পরিধি বিস্তত হয়। আর যখন তা ধনীর পকেটে কুক্ষিগত থাকে, তখন এর উপকারিতার পরিধিও সন্কীর্ণ হয়।

(১০) জাকাত প্রদানকারীর দান ও দয়ার গুণে গুণান্বিত হয়।

(১১) অন্তরে অভাবীর প্রতি মায়া-মমতা সৃষ্টি হয়।

(১২) কৃপণতার ন্যায় অসৎ গুণ  থেকে নিজেকে বিরত রাখা যায়। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা বলেন,

خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِم بِهَا

‘তাদের সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করো; যেন তুমি সেগুলোকে এর মাধ্যমে পবিত্র ও বরকতময়  করতে পার ‘ (সূরা: আত তাওবাহ, আয়াত-১০৩)।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা সামর্থবান ব্যক্তিদের যথাসময়ে জাকাত প্রদান করার তাওফীক দান করেন। আমীন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর