সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারের বাগানে আফিম চাষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নিষিদ্ধ মাদক ‘আফিম’ তৈরীর কাঁচামাল ‘পপি ফুল’ এর চাষ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ। অথচ সৌন্দর্য বৃদ্ধির নামে সরকারি প্রতিষ্ঠান রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারের বাগানে নিষিদ্ধ ‘পপি ফুল’ এর চাষ হচ্ছে। ওই বাগান থেকে পপির চারা গোপনে অন্যত্র সরবরাহেরও অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারের প্রধান গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকেই সামনের ফুল বাগানে বেশ কিছু ‘পপি’ গাছ দেখা যায়। অন্য গাছের পাশেও রয়েছে ‘পপি’ গাছও। কিছু সংখ্যক ‘পপি’ গাছ দেখে যে কারও মনে হতে পারে, কৌশলে অন্য ফুল গাছের আড়ালে সেগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে। তবে কোনটি আবার প্রকাশ্যই রয়েছে। প্রধান ফুল বাগানের পাশেই রয়েছে আরেকটি বাগান, সেখানেও দেখা যায় ‘পপি’ গাছ। তবে ওই বাগানের শুধুমাত্র একটি ‘পপি’ গাছে ফুল এসেছে। বাকি গাছে এখনো ফুল আসেনি। যে গাছে ফুল ফুটেছে, সেটি ইন্ডিয়ান হলুদ ‘পপি’ বলে জানা যায়।

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক গবেষণাগারের এক কর্মচারী বলেন, তাদের অন্যান্য বাগানেও রয়েছে ‘পপি’ গাছ। গবেষণাগারের সবগুলো বাগানে আড়াই থেকে তিনশ’ ‘পপি’ গাছ থাকতে পারে বলেও জানান তিনি।

গবেষণাগারের মালি পূর্ণ রায় বলেন, গবেষণাগারের বাগানে আগে থেকেই এই ফুল গাছ হতো। তার বীজ থেকেই বর্তমান গাছগুলো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, গবেষণাগারের বাগানে প্রায় সবজাতের ফুল গাছই রয়েছে। এবছরও অনেক ফুল গাছ নতুন করে লাগানো হয়েছে। তাদের বাগানে প্রায় তিনশ ‘পপি’ গাছ রয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি। এসব ফুল গাছে আগামী ১৫ দিনের মধ্যেই ফুল ফুটবে। সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যই এ ফুল গাছ লাগানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গবেষণাগারের আরেক কর্মকর্তাও স্বীকার করেন, গবেষণাগারের বাগানে আগে থেইে এ ফুলের চাষ হয়। ইতোপূর্বে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা এসে সেগুলো ধ্বংস করেন। তারপরও আবার এসব ফুলের গাছ লাগানো হয়েছে। তিনি বলেন, গবেষণাগারের বাগান থেকে বিভিন্ন ব্যক্তি এ ফুলের গাছ নিয়ে যান। আবার গোপনে অন্যত্র সরবরাহও করা হয়। পাশাপাশি এগুলো চাষ করে সেখান থেকে রস সংগ্রহের কথাও বলেন তিনি।

রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারের পরিচালক ড. ইব্রাহিম অবশ্য বলেন, গবেষণাগারের বাগারে ‘পপি’ গাছ চাষের বিষয়টি তার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে বলতে পারবেন। তবে এমন হলে এগুলো নির্মূল করা হবে বলেও জানান তিনি। এদিকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, রাজশাহীর উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, পপি দুই ধরণের হয়। একটি থেকে রস সংগ্রহ করা যায়, আরেকটি থেকে যায় না। তবে বাংলাদেশে উভয় ধরণের ‘পপি’ গাছ চাষই নিষিদ্ধ। সৌন্দর্য বর্ধনও বৈধ নয়। রাজশাহী বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারের বাগানে ‘পপি’ চাষ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৮ সালে বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণাগারের বাগানে অভিযান চালিয়ে ‘পপি’ গাছ ধ্বংস করা হয়। তবে আবারও সেখানে ‘পপি’ গাছ লাগানো হয়েছে, এমনটি তাদের জানা নেই। তবে, এমন হলে আবারও সেগুলো ধ্বংস করা হবে বলেও জানান তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর