কাজ করবে না তৃণমূল আ.লীগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দেয়ায় তৃণমূল আওয়ামী লীগের বিভাজন দেখা দিয়েছে। বেশিরভাগ ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচন করছেন। এছাড়া তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতারা দলের মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন কিন্তু কাউন্সিলর প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করবেন না এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, ঢাকার দুই সিটিতে ১২৯টি ওয়ার্ডে প্রায় ৫০জন বিতর্কিতকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কাউন্সিলর হয়ে বিতর্কিত কাজ করা, চাঁদাবাজি, ভূমিদখলে যুক্ত থাকা, বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা, স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোন সম্পর্ক না রাখেননি এমন কাউন্সিলররা আবার মনোনয়ন পাওয়ায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতাকর্মীরা। আর যেসব ওয়ার্ডে পরিবর্তন হয়েছে সেখানেও অনেক বিতর্কিতরা মনোনয়ন পেয়েছেন। বিতর্কিতদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা একত্রিত হয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে অভিযোগও করেছেন। বিভিন্ন অভিযোগের কারণে মোট ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী পরিবর্তন করেছে আওয়ামী লীগ। আরো অনেক ওয়ার্ডে বিতর্কিতদের ছাড় দিতে নারাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া ২০নং ওয়ার্ডের মো. নাসিরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, দখলদারিত্বের অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসি জানান, মো. নাসির এলাকায় কাইল্লা নাসির নামে পরিচিত। এলাকায় নানা অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকায় নামের আগে কাইল্লা যুক্ত হয়। মোহাম্মদ নাসিরের বিরুদ্ধে মহাখালির সাত তলা বস্তি, কড়াইল বস্তি, বেলতলা বস্তির নিয়ন্ত্রক বলে পরিচিত। দুবছর আগের দিদার হত্যা মামলার প্রধান আসামী ওরিন তার ভাগ্নে। বনানী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি করা হলেও পরে এই অভিযোগে পুরো কমিটি বাতিল হয়ে যায়। এছাড়া আওয়ামী লীগ বিরুধী দলে থাকাকালীন সময়ে তিতুমীর কলেজের নবীন বরণ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার মঞ্চ ভাঙ্গন হয়েছিল নাসিরের নেতৃত্বে।
ঢাকা দক্ষিণ করপোরেশন নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া অনেকের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন দলের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা। ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি কাউন্সিলর হবার আগে কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান না থাকলেও তিনি এখন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। ভর্তি বাণিজ্য, লেগুনা-টেম্পু-রিকশা থেকে চাঁদা আদায়, জমি দখলসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

জানা যায়, সিরাজ এক সময় জায়গীর ছিলেন এবং পরবর্তীতে বিয়ে করেন, তাই তিনি জামাই সিরাজ নামে পরিচিত। অগ্রনী ব্যাংকে চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হলেও পরবর্তীতে রাজনীতিতে আসলে সেই চাকরী ছেড়ে দেন। বর্তমানে ৫টি বাড়ি ও একাধিক ফ্লাটের মালিক তিনি। তৈরী করেছেন সুরাইয়া ডায়গনস্টিক সেন্টার। যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ক্যাসিনো খালেদের সঙ্গে সখ্যতার কারণে কমলাপুর গরুর হাটের ইজারা নিয়েছিলেন তিনি। ডেভোলপার কোম্পানির ব্যবসা করার সুযোগে অনেকের জমি দখল করেন বলেও অভিযোগ আছে সিরাজের বিরুদ্ধে। এছাড়া আইডিয়াল স্কুল মুগদা শাখার ভর্তি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন টাকলু জাকিরের মাধ্যমে। ছাত্র প্রতি ভর্তি হতে নেন সময় ২ থেকে ৩ লাখ টাকা।

ঢাকা দক্ষিণে ৫৮ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পাওয়া সফিকুর রহমান সাইজুল বিএনপি নেতা দৌড় সালাহউদ্দিনের (বিএনপির এমপি সালাহউদ্দিন) ঘনিষ্ট। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের স্ত্রীর বোনের জামাইয়ের ভাই সাইজুল কাউন্সিলর। ডেমরার বিএনপি দলীয় সাবেক এমপি দৌড় সালাউদ্দিন এর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জন হিসাবে সাইজুল কমিশনার আবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ায় আওয়ামী লীগের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

৫৯ নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকাশ কুমার ভৌমিকের বিরুদ্ধেও ব্যঅপক অভিযোগ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা জানান, এক সময় চাঁদপুরের একটি বাজারে আকাশ রুটি বিক্রির কাজ করতেন। ঢাকায় এসেও মুদির দোকান করতেন তিনি। সাবেক একজন ত্রাণ মন্ত্রীর সঙ্গে সখ্যতার কারণে ঠিকাদারি করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে উঠেন। অবৈধ সম্পদ অর্জনের কারণে দুর্নীতি দমন কমিশনও তার সম্পদের হিসেবে চেয়ে চিঠি দিয়েছে। গত বছরের বর্ধিত ওয়ার্ডের নির্বাচনে কাউন্সিলর হয়ে তিনি এলাকার উন্নয়নের পরিবর্তে রোড কাটিং, জমি দখল, টেম্পু স্ট্যান্ড থেকে চাঁদা আদায়ে নিজস্ব বাহিনী গড়ে তুলেছেন। আকাশের হয়ে মেরাজ নগর নিয়ন্ত্রণ করেন তাপস মাহমুদ ও রতন; কদমতলী ওয়াসা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে কৃষক লীগের কালা দুলাল, ছাত্রলীগের রেজাউল করিম মুন, জিহাদ হোসেন। ঢাকা ম্যাচ শিল্প এলাকয় টেম্পু ও মিল কারখানার চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করে ফজু ও ফারুক গ্রুপ। রোড কাটিং এর চাঁদা আদায় করে কাউন্সিলর আকাশের ছোট ভাই প্রসেংজিত।

বিতর্কিত কাজের কারণে ঢাকার প্রায় ৫০জন কাউন্সিরের পক্ষে কাজ করবে না স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তাই আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর কারণে চিন্তায় রয়েছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। দলের নেতাকর্মীরা যদি কাজ না করেন তাহলে পরাজয় বরণ করতে হবে অনেক প্রার্থীকে। তাই কেন্দ্রীয় নেতাদের দারস্ত হচ্ছেন বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করার জন্য। ইতোমধ্যে গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সকল বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর