নদী এখন মরা খাল

 হাওর বার্তা ডেস্কঃ চোখের সামনে নদ-নদী শেষ হয়ে যাচ্ছে, একসময় নদীর পাড় পর্যন্ত পানি থৈ থৈ করতো। ছিল জোয়ার ভাটা। এখন পানি পাওয়া যায় না তলানীতেও। কি যে হলো আস্তে আস্তে নদী মরে যাচ্ছে। ভাটির দেশ বাংলাদেশকে ভারত পরিকল্পিতভাবে মরুভূমি বানাচ্ছে’। একসময়ের প্রমত্তা কুমার নদের অবস্থা দেখিয়ে কথাগুলো শোনালেন ঝিনাইদহের শৈলকুপার ব্যবসায়ী আফসার আলী। গাড়াগঞ্জ পয়েন্টে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি ক্ষোভের সঙ্গে আরো বললেন, ‘একদিনের ব্যাপার নয়, বছরের পর বছর ধরে করুণ অবস্থা হচ্ছে নদ-নদীর। কিন্তু কোনকিছুই করা যাচ্ছে না।’

গত কয়েকদিন সরেজমিনে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মা, কুস্টিয়ার গড়াই, শৈলকুপার কুমার, কালীগঞ্জের চিত্রা, ঝিনাইদহের নবগঙ্গা, নড়াইলের চিত্রা ও যশোরের ভৈরবসহ কয়েকটি নদ-নদীর পাড় এলাকা ঘুরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নদ-নদী ঘিরে নদপাড়ের মানুষের জীবন-জীবিকা নির্বাহ হতো। নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ায় এখন জীবন-জীবিকায় মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে। নদীতে মাছ ধরে, নৌকা চালিয়ে সংসার চালানো বেশ কয়েকজন বললেন, নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আমরা বহু লোক পেশাবদল করতে বাধ্য হয়েছি। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কালীগঞ্জের চিত্রাপাড়ের বাসিন্দা আব্দুল আজিজ বললেন জোরালোভাবে লেখালেখি করেন,বারবার লেখেন, মানুষকে প্রকৃত চিত্র জানান। শুধু চিত্রা নদী নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমের প্রায় সব নদ-নদীর অবস্থা শোচনীয়।

এতদাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। জেনেছি নদী নিয়ে তাদের ক্ষোভের কথা। সবাই একইসুরে বলেছেন, নদ-নদী শুকিয়ে গেছে। খাল-বিলেও পানিশূন্য অবস্থা। ঝিনাইদহ শহরের ক্যাসেল ব্রিজ পার হওয়ার সময় দেখা গেছে, নবগঙ্গার বেহাল অবস্থা। নদীতে আগের মতো ঝাঁপ দিয়ে গোসল করার প্রতিযোগিতা চলে না। আসলেই পদ্মা দিয়ে পানি আসছে চুইয়ে। গঙ্গানির্ভর সিংহভাগ নদ-নদী দিনে দিনে পরিণত হয়েছে মরা খালে। নদীদেহ নিথর হয়ে পড়ে আছে। কোন প্রাণ নেই। কোন কোন নদী মারাত্মক অস্তিত্ব সঙ্কটে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদ-নদীর হৃদপিন্ড পদ্মা এখন স্পন্দনহীন প্রায়। পায়ে হেঁটে এখন বিশাল পদ্মা পার হওয়ার অবস্থা দাঁড়িয়েছে। মাঝখান দিয়ে সরু খাল ও নালার মতো কোনরকমে চুইয়ে পানি প্রবাহ হচ্ছে।
পদ্মার শাখা নদ-নদী মাথাভাঙ্গা, গড়াই, ভৈরব, আপার ভৈরব, কুমার, মধুমতি, ফটকি, বেতাই, চিত্রা, নবগঙ্গা এবং অভিন্ন ইছামতি ও কোদলাসহ সকল নদ-নদী মরা খালে পরিণত হচ্ছে দ্রুত। এমনিতেই গঙ্গা নদীর ন্যায্য হিস্যা পাওয়া যাচ্ছে না। তার উপর নদী ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে দিনে দিনে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ছে। নদ-নদীর চেহারা বলে দিচ্ছে পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ। ইতোমধ্যে এক সময়ের প্রমত্তা ও স্রোতস্বিনী ভৈরব, চিত্রা, মুক্তেশ্বরী ও নবগঙ্গাসহ বেশ কয়েকটি নদ-নদী বিভিন্ন পয়েন্টে শুকিয়ে খাল ও পুকুরে পরিণত হওয়ায় সেখানে চাষাবাদ ও মাছ চাষ হচ্ছে। শুকিয়ে যাওয়া নদ-নদীর দুইপাড় দখল হওয়া বন্ধ হয়নি। যশোরের মরা ভৈরব খনন চলছে ঠিকই কিন্তু তাতে আগের সেই ভৈরবী চেহারা আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বললেন, ভৈরব খননও নানা কারণে বিঘিœত হচ্ছে।

নদী বিশেষজ্ঞদের কথা, মানুষের জীবন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, সভ্যতা-সংস্কৃতি, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণে নদ-নদীর ভুমিকা অত্যন্ত বলিষ্ট ও নিবিড়। মাটি ও মানুষের স্বার্থে নদী বাঁচানোর সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া দরকার হলেও সবচেয়ে এটি অবহেলার শিকার হয়েছে বরাবরই। কৃষি, শিল্প, বনজ, মৎস্য সম্পদের পাশাপাশি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর