ছাত্রলীগকে সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে: ওবায়দুল কাদের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দুর্নামের একটা ধারা ছাত্রলীগের নামের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। ছাত্রলীগকে আবার সুনামের ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে, এটা আমাদের প্রথম ও প্রধান কাজ।

বুধবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ছাত্রলীগের ওরিয়েন্টেশন কোর্সের সূচনাপর্বে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগের যে বিষয়টি আমাদের কাছে খুবই জরুরি সেটা হচ্ছে আচরণগত। আমাদের মনে রাখতে হবে- যত ভালোই উন্নয়ন হোক, আচরণ খারাপ হলে ভালো উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। একটা খারাপ আচরণ ১০টা ভালো উন্নয়ন-অর্জন ঢেকে দিতে পারে। আমাদের নেত্রীর (আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কোনো একটা অর্জন সমগ্র জাতি প্রশংসার চোখে দেখছে, সারা বাংলায় আলোচনা হচ্ছে- ঠিক তখনই এমন একটা কাণ্ড, একটা আচরণ বাস্তবে দেখতে পাই, যাতে নেত্রীর সোনালি অর্জন নষ্ট ও ম্লান হয়ে যাচ্ছে। আমরা তখন খুব কষ্ট পাই। আমরা মর্মাহত হই। আমরা যারা ছাত্রলীগ করেছি, আমাদের মন বিষাদে ভরে যায়। এটা আমরা আশা করি না।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংগঠনের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের বলেন, বুয়েটের যারা ছাত্রলীগের পরিচয় আবরারকে হত্যা করে, এ ধরনের কর্মী আমাদের প্রয়োজন নেই। রাজশাহীতে পলিটেকনিকের অধ্যক্ষকে যারা ছাত্রলীগ পরিচয়ে অপমান করল, এ ধরনের নেতা আমাদের প্রয়োজন নেই। গুটিকয়েকের জন্য গোটা পার্টি দুর্নামের ভাগীদার হতে পারে না। গুটিকয়েকের অপকর্মের জন্য গোটা সরকার দায়ভার নিতে পারে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অপ্রিয় হলেও কিছু সত্যি কথা বলছি, আজ ছাত্রনেতা ১২টার আগে ঘুম থেকে ওঠে না। শুয়ে থাকে। সারা রাত জেগে জেগে কি করে আল্লাহই ভালো জানেন। ছাত্রনেতার সামনে ২০-৩০, ৫০টা মোটরসাইকেল। আর মোটরসাইকেল আরোহীদের কারও মাথায় হেলমেট নেই। এতে আমরা লজ্জা পাই। আমি সড়কমন্ত্রী হিসেবে লজ্জা পাই। সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, যখন দেখবেন দলে দলে তরুণ হেলমেট নেই, সবাই আমাদের। ক্ষমতার দাপট দেখাচ্ছে। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হলেই ৫০টা মোটরসাইকেল তাদের নিয়ে যাবে এমন নেতার দরকার নেই। পলিটিক্যাল রুম আছে আশ্চর্যের ব্যাপার! কাদের-কাদের পলিটিক্যাল রুম আছে, এটা খুঁজে বের করা হবে। যারা সিট বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য করে তাদের দরকার নেই। অপরকে শিখাব আমার অপরাধের বিচার হবে না। ওরিয়েন্টেশনের মূল বিষয় হচ্ছে আচরণ। ইতিহাস বেশি জানা দরকার, ভালো আচরণ দরকার।

ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধুর পরিবার থেকে শিক্ষা নিতে হবে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি আজ একটা কথা বলি, এ দেশে সবাই আমরা হারিয়ে যাব। দুটি অর্জন কখনও মুছে যাবে না। একটা হল বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার সংগ্রাম। স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর এই জনপদে মৃত্যু হবে না। আর এই জনপদে অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য শেখ হাসিনার অর্জনের মৃত্যু হবে না। উত্তরাধিকার হিসেবে এই দুটি অর্জন এ দেশে থেকে যাবে। এই জনপদ যতদিন থাকবে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সবার দিকে একে একে তাকাও। আমাদের আদর্শ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পরিবার। সততার রাজনীতি, মেধার রাজনীতির প্রতীক হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পরিবার।

ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ।

বিএনপি আধুনিকতা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে : বুধাবার সকালে রাজধানীর উত্তরায় দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল লাইনে রেল-ট্র্যাক স্থাপন কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি বলেন, সারা পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ ডিজিটাল পদ্ধতি বিএনপি পছন্দ করে না। তারা কতটা সেকেলে মানসিকতার! কতটা পেছানো আছে সেটা ভাবতে হবে। তারা ক্ষমতায় এলে দেশ কখনও এগিয়ে যাবে না। বিএনপি আধুনিকতা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে।

‘ইভিএমে ভোট সুষ্ঠু হবে না’- বিএনপির এমন অভিযোগের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে। ‘ইভিএম ডিজিটাল ভোট চুরির মেশিন’- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, এটা লেটেস্ট টেকনোলজি। ইভিএমে যদি ভোট হয় তাহলে সেটি ত্রুটিমুক্ত নির্বাচন হবে। এই পদ্ধতিতে সহজেই ভোট গণনা করা যায়। এটি অ্যাকসেপটেড একটি সিস্টেম। কাজেই এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই।

উত্তরের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আওয়াল বলেছেন, শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনের মাঠে থাকবে এবং নির্বাচনের শেষ দেখে ছাড়বেন- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা তো ভালো কথা, তারা নির্বাচনের শেষ পর্যন্ত থাকবে। তাদের পুরনো সংস্কৃতি নির্বাচনের আগেই নির্বাচন বয়কট করা থেকে যদি সরে আসতে পারে তাহলে সেটা ভালো কথা। তিনি আরও বলেন, বিএনপি মেয়র নির্বাচনের শেষটা দেখবেন এবং রেজাল্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। রেজাল্ট হওয়ার আগে তারা বলবে ভোট কারচুপি-জালিয়াতি-ডাকাতি হয়েছে। সুতরাং তারা যে অঙ্গীকার করেছে নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকবে, সেটা যেন তারা করেন।

২০৩০ সালে ঢাকা শহরের যান চলাচলের চিত্র বদলে যাবে বলে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ছয়টি মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। এসব এমআরটি লাইন চালু হলে ঢাকা শহরে অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্যপট তৈরি হবে। তিনি বলেন, মেট্রোরেল তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের প্রকল্প। ২০২১ সালে বিজয়ের মাসে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ উদ্বোধন করা হবে।

সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, খুব শিগগির এমআরটি লাইন-১ ও ৫-এর কাজ শুরু হবে। সঙ্গে থাকবে পাতাল রেল সাড়ে ১৩ কিলোমিটার। ইতিমধ্যে ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে। তাই কাজ দ্রুত শুরু করতে কোনো বাধা নেই। তিনি বলেন, মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকায় যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে, বাইরে থেকে দেখে তা বোঝার উপায় নেই। অথচ তিন বছর আগেও এখানে বিরানভূমি ছিল। এখন বিশাল কর্মযজ্ঞ। মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৪০ শতাংশ। ৮ দশমিক ৫ কিলোমিটার মেট্রোরেল এখন দৃশ্যমান হয়েছে।

এ সময় সেতু সচিব নজরুল ইসলাম, বিআরটিএ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর