হযরত ঈসা আ এর জন্মকথা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইসলামী বিধান মতে হযরত ঈসা আ. উলুল আযম পয়গম্বরদের একজন। আল্লাহপাক তার ওপর ইঞ্জিল কিতাব অবতীর্ণ করেছিলেন। চলমান দুনিয়ার খ্রিষ্টান জগত হযরত ঈসা আ.-এর জন্মদিন হিসেবে ২৫ ডিসেম্বর তারিখটিকে নির্ধারণ করে বড় দিনের উৎসব পালন করে থাকে।

এমনটি পূর্ববর্তী যামানার খ্রিষ্টানদের মাঝেও লক্ষ্য করা গেছে। তবে যাই হোক আমরা ইঞ্জিল তথা বাইবেল অনুসারে হযরত ঈসা আ.-এর সঠিক জন্ম কথা জানার চেষ্টা করব। আসুন, এবার সেদিকে লক্ষ্য করা যাক।
বাইবেল গ্রন্থটি চারজন খ্রিষ্টান সাধু সংকলন করেছেন। ১. সাধু মার্ক। ২. সাধু জন। ৩. সাধু মথি এবং ৪. সাধু লুক। এই চারজনের সংকলিত বাইবেল গ্রন্থে হযরত ঈসা আ.-এর জন্ম বিষয়ক বৃত্তান্ত কতখানি আছে, তা ক্ষতিয়ে দেখা দরকার।
সাধু মার্ক এবং সাধু জন এই দুই সাধুর সংকলিত গসপেল বা সুসমাচারে হযরত ঈসা আ.-এর জন্মকথা সম্পর্কিত কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না।
সাধু মথি এবং সাধু লুকের সংকলিত সুসমাচারে হযরত ঈসা আ.-এর জন্ম সংক্রান্ত সংক্ষিপ্ত বিবরণ পাওয়া যায়। কিন্তু এই দু’জন সাধুর বর্ণনায় মিল অপেক্ষা গরমিলের পরিমাণই বেশি। সাধু মথি’র মতে যিশুর মাতা মেরী বা মারিয়াম ছিলেন যোসেফে’র বাগদত্তা।
মেরীর কুমারী অবস্থায় গর্ভবতী হওয়ার লক্ষন প্রকাশ পাওয়ার পর যোসেফ তাকে বিবাহ করতে অসম্মতি প্রকাশ করলে একজন ফেরেশতা স্বপ্নযোগে তাকে বললেন এই গর্ভ সঞ্চারিত হয়েছে স্বর্গীয় কারণে। তারপর যোসেফ তাকে নিঃশঙ্কচিত্তে গ্রহণ করলেন এবং প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত নিজেকে সংবরণ করে রাখলেন।
ফেরেশতা তাকে এ কথাও বলেছিল যে, শিশুটি জন্মগ্রহণের পর তার নাম রাখতে হবে যিসাস বা ত্রাণকর্তা। ফেরেশতা একথাও বললেন যে, পয়গম্বরের মাধ্যমে সদা প্রভু যে ঘোষণা দিয়েছেন তার বাস্তবায়ন স্বরূপ এ সকল ঘটনা এভাবে ঘটেছে। সদা প্রভুর ঘোষণাটি ছিল এই, কুমারী গর্ভধারণ করবে এবং পুত্র প্রসব করবে। যার নাম হবে ইসানুয়েল অর্থাৎ প্রভু আমাদের সঙ্গে আছেন।
যুদাইয়ার অন্তর্গত বেথেলহেমে শিশু ইসানুয়েলের জন্ম হয়। যিসাসের নয়। রোমান সম্রাটের গভর্নর হিরোদ ছিলেন যুদাইয়ার শাসনকর্তা। পূর্ব দেশীয় অ্যাষ্ট্রলুজার বা গণৎকারগণ তার কাছে এসে বলল, ইহুদিদের ভাবী রাজার জন্মসূচক নক্ষত্রের উদয় লক্ষ্য করে আমরা তার প্রতি সম্মান জ্ঞাপনের জন্য আগমন করেছি।
হেরোদ ইহুদি যাজক এবং পত ব্যক্তিদের মাধ্যমে জানতে পারলেন যে, সদা প্রভুর ভবিষ্যৎ বাণী অনুসারে বেতেলহেমে তার জন্ম হবে এবং তিনি হবেন ইহুদিদের শেফার্ড বা মেষপালক বা রাজা। হেরোদ এতে খুবই উদ্বিগ্ন হলেন। তিনি গণৎকারগণকে বেথেলহেমে নবজাত শিশুটির খোঁজখবর নিতে বললেন এবং সন্ধান পেলে তাকে জানাতে অনুরোধ করলেন। যাতে তিনি শিশুটির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে পারেন।
আকাশে উদিত নক্ষত্রটি গণৎকারগণকে পথ দেখিয়ে গন্তব্যস্থানে নিয়ে গেল। তারা যথারীতি উপটৌকনাদিসহ শিশুটিকে প্রণতি জ্ঞাপন করল বটে, কিন্তু স্বপ্নযোগে নিষেধাজ্ঞা লাভ করে হেরোদের কাছে গমন করল না। অন্য পথ ধরে তারা চলে গেল। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে হেরোদ আদেশ দিল যে, বেথেলহেমে এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় দু’বছর বয়স্ক বা তদি বয়স্ক সকল বালক শিশুকে হত্যা করতে হবে।
এদিকে স্বপ্নযোগে যোসেফ নির্দেশ লাভ করে শিশুটি ও তার মাতাকে নিয়ে মিসরে চলে গেলেন এবং হেরোদের মৃত্যু পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করলেন। হেরোদের মৃত্যুর পর যোসেফ তাদেরকে নিয়ে ফিরে এসে গ্যালেলীর অন্তর্গত নাযারেল অঞ্চলে বসবাস করতে লাগলেন। হেরোদের পুত্রের ভয়ে বেথেলহেমে ফিরে আসতে সাহস করলেন না। এজন্য সেই শিশুকে (ইসানুয়েল) নাযারোনিও বলা হয়। এ সকল ঘটনা পূর্ববর্তী নবীগণের ভবিষ্যৎ বানী অনুসারে সংঘটিত হয়। (দেখুন মথি সংকলিত সুসমাচার-১ : ১৮; ১-২৩)।
উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা জানা যায় যে, মেরী বা মারিয়াম মহা প্রভুর নির্দেশক্রমে গর্ভধারণ করেছিলেন এবং তার গর্ভস্থ সন্তান জন্মলাভ করলে তার নাম ইসানুয়েল রাখতে আদিষ্ট হয়েছিলেন যিসাস বা যিশু নয়। অথচ এই ইসানুয়েলকে যিসাস বা যিশু বলে অথবা যিসাস ক্রাইষ্ট বলে প্রচলিত বাইবেলে ঢালাওভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার একথাও বলা হয়েছে যে, বেথেলহেমে জন্মগ্রহণকারী শিশুটি হবে মেষপালক বা ইহুদিদের রাজা।
তবে মথির বর্ণনার কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না যে সেই শিশুটি বাস্তবে মেষপালকরূপে কখনো ইহুদিদের রাজা পদে বরিত হয়েছিলেন। তা-ই যদি হত তাহলে কোথাও না কোথাও তার উল্লেখ অবশ্যই থাকত। তাছাড়া মথির মতানুসারে জানা যায় যে, মেরী বা মারিয়াম ছিলেন যোসেফ এর বাগদত্তা। এই কথাটির মাঝে অনেক মিথ্যা লুকিয়ে আছে। আমরা পরবর্তীতে সাধু লুকের সুসমাচার আলোচনার পর সেই মিথ্যাগুলোর আবরণ উন্মোচন করার প্রয়াস পাব। ইনশাআল্লাহ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর