যে ৩ রোজায় রয়েছে বিশেষ ফজিলত

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রিয় উম্মতের জন্য মহানবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক আরবি মাসের মধ্যভাগে তিনদিন রোজা রাখার তাগিদ দিয়েছেন। আর তা হলো প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। এ রোজাকে বলা হয় আইয়ামে বিজের রোজা। যারা আইয়ামে বিজের রোজা রাখবে তাদেরকে প্রত্যেক আরবি মাসের ১২ তারিখ দিবাগত রাতে সেহরি খেতে হয়।

আইয়ামে বিজের পরিচিতি :

আইয়ামে বিজ আরবি দু’টি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। যেমন-

(১) ‘আইয়াম’ আরবি শব্দ, এর অর্থ হলো-দিবসসমূহ, কাল, সময় ইত্যাদি। এটি বহুবচন, এর একবচন হলো ‘ইয়াওম’, অর্থ হলো দিন বা দিবস।

(২) ‘বিজ’ বা ‘বিদ’ অর্থ শ্বেতবরণ, শুভ্রবর্ণ, ঔজ্জ্বল্য, সফেদ, সাদা রং ইত্যাদি।

সওমে আদম:

এই রোজাকে সওমে আদম বা আদম (আ.) এর রোজা বলা হয়। হজরত আদম (আ.) ও মা হাওয়া (আ.) দুনিয়ায় আসার পর প্রথম এই তিনটি রোজা পালন করেন; যার বদৌলতে তারা আগের মতো জান্নাতি রূপ–লাবণ্য ও ঔজ্জ্বল্য ফিরে পান এবং এই দিনগুলোতে চাঁদ পূর্ণ শশীতে পরিণত হয়, রাতভর পূর্ণিমার জ্যোত্স্নালোক বিকিরণ করে বলে এই নামকরণ করা হয়েছে।

আইয়ামে বিজের রোজা সম্পর্কে হাদিস:

    আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমার প্রিয়তম বন্ধু আমাকে তিনটি ব্যাপারে বিশেষভাবে অসিয়ত করেছেন: ১. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, ২. দুই রাকাত সালাতুত্ দুহা আদায় করা এবং ৩. রাতে ঘুমানোর আগেই যেন বিতর নামাজ আদায় করি (বুখারি)।

হজরত কাতাদাহ (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন এবং তিনি বলেন, তা এক বছরের রোজার সমতুল্য।’ (আবু দাউদ ও নাসায়ি)।

আইয়ামে বিজে রোজা রাখা সুন্নত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখো।’ (বুখারি ও মুসলিম)।

আবদুল মালেক বিন কুদামাহ বিন মালহান (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদেরকে আইয়ামে বীজ তথা চন্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার নির্দেশ দিতেন’ (আবু দাউদ)।

ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন , ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) সফর ও মুকিম অবস্থায় কখনো আইয়ামে বিজের রোজা ভঙ্গ করতেন না’ (নাসায়ী)।

রাসূল (সা.) বলেন, ‘কোনো মাসে তিনটি রোজা রাখলে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রাখবে’ (আহমদ)।

এসব হাদিস থেকে প্রমাণ হয়, রাসূল (সা.) তাঁর প্রিয় সাথীদের আইয়ামে বিজের রোজা রাখার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দিতেন; কিন্তু এই নির্দেশ আবশ্যকতার ভঙ্গিতে ছিল না বরং তা ছিল নফল তথা অতিরিক্ত আমল হিসেবে। তিনি সাহাবিদের এই রোজা রাখতে বলতেন কিন্তু তাদের সবাই এ নির্দেশ পালন করতেন না, যা থেকে প্রমাণ হয়, তাঁর এ নির্দেশ নফল হিসেবে ছিল ওয়াজিব হিসেবে নয়। উল্লেখ্য, রমজান মাসে যেহেতু পূর্ণ এক মাস রোজা ফরজ; তাই রমজানে আইয়ামে বিজের রোজা নেই। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা সব মুমিন মুসলমানকে আইয়ামে বিজের রোজাগুলো রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর