হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে চলমান প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মাঝে প্রথমবারের মতো সুর নরম করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। দলটির প্রেসিডেন্ট ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মেঘালয় রাজ্যের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে এ নিয়ে সেখানকার নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। আইনে কিছুটা পরিবর্তন আনারও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এদিকে ভারতের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ ক্রমেই সহিংস হয়ে উঠছে। এ অবস্থার জন্য বিরোধী দল কংগ্রেসকে দায়ী করেছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সহিংস আন্দোলন দমাতে কঠোর হচ্ছে মমতার পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমস বলছে, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা বলেছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আশ্বাস দিয়েছেন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের কারণে রাজ্যের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী যে আশঙ্কার মধ্যে রয়েছেন, তা কাটাতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। এ ব্যাপারে আলোচনার জন্য সাংমাকে ক্রিসমাস ডে’র পর দিল্লিতে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ঝাড়খণ্ড রাজ্যে এক নির্বাচনী প্রচারে অমিত শাহ বলেছেন, সাংমা ও তার সতীর্থরা আইনে কিছু রদবদল করার অনুরোধ করেছেন। বলেছি, ভয়ের কিছু নেই। দিল্লিতে আসুন, কথা হবে। গণমাধ্যমগুলো বলছে, নতুন আইনের ফলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান থেকে দলে দলে অ-মুসলিম সম্প্র্রদায়ের মানুষ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এই রাজ্যে প্রবেশ করবে বলে আশঙ্কা মেঘালয়ের জনগোষ্ঠীগুলোর।
টাইমস অব ইন্ডিয়া ও আনন্দবাজার পত্রিকা বলছে, ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে চরম বিক্ষোভের জন্য কংগ্রেস ও তার শরিক দলগুলোকে দায়ী করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঝাড়খণ্ডের দুমকার নির্বাচনী সভায় তিনি বলেন, কংগ্রেস ও তার সমর্থকরা উত্তাপ ছড়াচ্ছে। কিন্তু উত্তর-পূর্বের মানুষ সহিংসতা থেকে সরে এসেছেন। কংগ্রেসের পদক্ষেপ বুঝিয়ে দিচ্ছে, সংসদে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে তা সঠিক।
এদিকে আসামের গোহাটিতে বিক্ষোভে আহতদের মধ্য থেকে রোববার সকালে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে আসাম রাজ্যেই চারজন নিহত হলেন। চার দিন ধরে চলা এই বিক্ষোভে আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ জন। বিক্ষোভ, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের জেরে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের ১০টি এলাকায় কারফিউ জারি রয়েছে। এর মধ্যে গোহাটি ও দিব্রুগড় এলাকায় দিনের কিছু অংশে কারফিউ শিথিল করা হয়েছে। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে রোববারও বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন। চাপে পড়ে শনিবার রাতে বিজেপির মিত্র আসাম গণপরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারাও নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতা করবে।
আনন্দবাজার বলছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি সহিংসতার পথ ছেড়ে অহিংস গণআন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। এতে কাজ না হওয়ার কঠোর হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। রাজ্যজুড়ে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। টানা তৃতীয় দিনের মতো রোববার রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভকারীরা সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এর জেরে বন্ধ করা রয়েছে অনেক ট্রেনের চলাচল। কলকাতা শহরের কাছে দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার আকড়া স্টেশনে দুটি ট্রেন ও টিকিট কাউন্টারে ভাংচুর এবং রেললাইনের ওপর আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধরা। পুলিশকে লক্ষ করে ইটও ছুড়ে তারা।
এদিন আসামের কয়েকটি অঞ্চলে বিক্ষোভ কিছুটা প্রশমিত হয়ে এলেও যথারীতি উত্তপ্ত ছিল ত্রিপুরা, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলো। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা, বীরভূম, হাওড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ, গাড়ি ভাংচুর, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ঐতিহাসিক যশোর রোডেও। অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে রোববার বিক্ষোভে যোগ দেয় রাজধানী দিল্লিও। দক্ষিণ-পূর্ব দিল্লির মথুরা রোডে বিভিন্ন যানবাহনে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষুব্ধদের হটাতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার ছাত্ররা বিক্ষোভে অংশ নিলেও তারা বিবৃতি দিয়ে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের কথা বলেছে।
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বাংলাভাষী মুসলিমরাও। নতুন আইনে ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার বিধান থাকায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে, মুসলিমদের এক অংশকে এই আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রহীন করে দেয়া হবে। অপরদিকে অসমীয়া সংগঠনগুলো নাগরিকত্ব আইনের মাধ্যমে কথিত অবৈধ বাংলাদেশিদের আসামের নাগরিকত্ব পাওয়ার বিরোধিতা করছেন। তারা বলছেন, আসাম চুক্তি অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর বাংলাদেশ থেকে আসা কোনো ধর্মের মানুষকেই ভারতের নাগরিকত্ব দেয়া যাবে না। তারা এটাও বলছেন, ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব দেয়ার বিষয়টি ভারতের সংবিধানপরিপন্থী। এই যুক্তিতে বিষয়টি নিয়ে আদালতেও গেছে কংগ্রেসসহ একাধিক দল ও ব্যক্তি।