শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ: অপশক্তিকে রুখে দেয়ার প্রত্যয়

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের বেদি ভরে উঠেছিল ফুলে ফুলে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি জানানো হয় বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। রাষ্ট্রের প্রধান থেকে শুরু করে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে গোটা জাতি তাদের আত্মার শান্তি কামনা করেছে।

মসজিদ-মন্দিরে তাদের জন্য হয়েছে দোয়া ও প্রার্থনা। একই সঙ্গে স্বাধীনতার শক্তিতে বলিয়ান হয়ে সব অপশক্তিকে রুখে দেয়ার প্রত্যয় জ্ঞাপন করা হয়েছে। ধিক্কার জানানো হয়েছে তাদের প্রতি, যারা এখনও কাদের মোল্লার মতো কুখ্যাত খুনি যুদ্ধাপরাধীকে ‘শহীদ’ বলার মতো ধৃষ্টতা দেখায়। এসব খুনি ও তাদের দোসরদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চেতনায় লালিত বাংলা থেকে চিরতরে মুছে ফেলার দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করা হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে।

রাজধানীর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শনিবার সকালে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সকাল ৭টার আগেই মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী যান শহীদ বেদিতে। সকাল ৭টা ১ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল সামরিক কায়দায় সালাম জানায়। শ্রদ্ধা জানানোর পর শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।

পরে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ধানমণ্ডিতে যান এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর শেখ হাসিনা দলীয়প্রধান হিসেবে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এসব কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, যুগ্ম সাধারণ জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল প্রমুখ। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে তিনি উপস্থিত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। হুইপ ইকবালুর রহিম ও আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান চলে যাওয়ার পর সর্বস্তরের জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ। জাতীয় পতাকা আর ফুল হাতে নানা বয়সের হাজারও মানুষ জড়ো হন শহীদ বেদিতে। রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের শহীদ বেদিও সকাল থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষের ফুলে ফুলে ভরে উঠে।

মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় ১৪ দল। এছাড়া ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের পক্ষ থেকেও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, জাতীয় পার্টি, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, শিল্পকলা একাডেমি, নজরুল ইন্সটিটিউট, সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, লালমাটিয়া বালিকা বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

বাংলা একাডেমি : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে শনিবার বাংলা একাডেমি বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী সমাধিস্থল, মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ এবং রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচি শুরু হয়। বিকাল ৪টায় একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। সৈয়দ হাসান ইমামের কণ্ঠে কবি আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও আবুল হাসানের মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। ‘মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যার কারণ এবং গণহত্যাকারীদের বিচার’ শীর্ষক বক্তৃতা দেন শাহরিয়ার কবির। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বাংলা একাডেমির সঙ্গে একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছিল নিবিড় সম্পর্ক। তাদের প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে একাডেমির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বাংলা একাডেমি শহীদ বুদ্ধজীবীদের স্মৃতিকে অমর করে রাখতে প্রকাশ করেছে শহীদ বুদ্ধিজীবী কোষগ্রন্থ, শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মারকগ্রন্থ, নবপর্যায়ে পুনর্বিন্যস্ত চার খণ্ডে স্মৃতি : ১৯৭১ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের রচনাসমগ্র।

শাহরিয়ার কবির বলেন, একাত্তরে বুদ্ধিজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে যে নৃশংসতায় হত্যা করা হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে তার তুলনা মেলা কঠিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও ভয়াবহ গণহত্যা হয়েছে, তবে তা ছিল ছয় বছরব্যাপী একাধিক মহাদেশে চলমান যুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যা। আর বাংলাদেশে নয় মাসে মাত্র ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল এলাকাজুড়ে যে গণহত্যা চালানো হয়েছে তা নজিরবিহীন। সম্প্রতি আমরা জাতীয় গণহত্যা দিবস পালন শুরু করলেও একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে এখনও সক্ষম হইনি। তিনি বলেন, একাত্তরে বিশ্বের বিভিন্ন পরাশক্তি পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করলেও সেসব দেশের গণমাধ্যম পাকিস্তানি গণহত্যার সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করে এই গণহত্যার ঐতিহাসিক প্রামাণ্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে এখন পর্যন্ত পাকিস্তান ও এর সুবিধাভোগী চক্র নানাভাবে গণহত্যার ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। এজন্য যেমন একাত্তরের পাক বর্বর গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে আমাদের তৎপর হতে হবে, তেমনি গণহত্যা অস্বীকারকে ‘অপরাধ আইনের’ আওতায় আনতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হলেও একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা শুরু হয় সে বছর মার্চে। ডিসেম্বরে তা তীব্র আকার ধারণ করে, নির্মম নৃশংসতায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যা করা হয়। দেশের জন্য একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ কখনই বিস্মৃত হওয়ার নয়।

জাতীয় জাদুঘর : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। সভায় আলোচক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা ও মানবতাবাদী নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক এবং একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীর কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী।

সুলতানা কামাল বলেন, যারা আমাকে সমাজসেবা করার দীক্ষা দিয়েছিলেন, তাদের অনেকের ক্ষত-বিক্ষত ও বিকৃত লাশ রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে দেখেছি। তাদের নিয়ে কথা বলা আমার জন্য অনেক বেদনার। মুক্তিযুদ্ধ ছিল সবার মুক্তির জন্য একটা সম্মিলিত সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে রূপান্তরে যে মানুষটি ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন তিনি। তার নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি স্বাধীন বাংলাদেশ।

লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধের জন্য জাগ্রত হয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের শেষ পর্যায়ে এসে পাকিস্তান বাহিনী যখন বুঝতে শুরু করে যে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব না, তখন তারা নবগঠিত দেশকে সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও শিক্ষাগত দিক থেকে দুর্বল এবং পঙ্গু করে দেয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকবাহিনী তাদের দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিজ নিজ গৃহ হতে তুলে নিয়ে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যা করে। তিনি বলেন, ত্রিশ লাখ শহীদের বিনিময়ে পাওয়া মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংগ্রহ করতে হবে। আমাদের বিবেককে জাগ্রত করতে হবে, কেননা দেশকে উন্নত করার দায়িত্ব আমাদের সবার।

ডা. নুজহাত চৌধুরী বলেন, আমার বাবা শুধু দেশকে ভালোবেসে, দেশের কল্যাণের জন্য, এ দেশের মানুষের চিকিৎসার করার জন্য সুদূর বিলেত থেকে চলে আসেন। কিন্তু আমার বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করে রাজাকার-আলবদর বাহিনী। তিনি বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। আমাদের শত্রু-মিত্র চিনতে হবে। স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে দমন করার দায়িত্ব আমাদেরই।

ঢাবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত : উদার, অসাম্প্রদায়িক ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ গঠনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালিত হয়েছে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়া ডাকসু ও বিভিন্ন সংগঠন পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করে। ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দীন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, শহীদ গিয়াস উদ্দিন আহমেদের বোন অধ্যাপক সাজেদা বানু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নূরুল হক নূর প্রমুখ। রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

ভিসি ড. মো. আখতারুজ্জামান শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অমর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এ দেশের বুদ্ধিজীবীরা অসাম্প্রদায়িক, উদার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধসম্পন্ন স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করে।

ডাকসু ভিপি নূরুল হক নূর বলেন, বুদ্ধিজীবীরা মারা গেলে শহীদ মিনারে গিয়ে আমরা ভূরি ভূরি ফুল দিয়ে আসি কিন্তু জীবিত অবস্থায় আমরা তাদের খোঁজ নিই না। আর কোনো বুদ্ধিজীবী যদি ভিন্ন আদর্শের হয় তাহলে আমরা তাদের এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। আমাদের উচিত জীবিত বুদ্ধিজীবীদের রাজনৈতিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে গিয়ে সম্মান প্রদর্শন করা।

এছাড়া শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে। এরমধ্যে ছিল- ভিসি ভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান ভবনে কালো পতাকা উত্তোলন; শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে জমায়েত; বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান, জগন্নাথ হল স্মৃতিসৌধ ও বিভিন্ন আবাসিক এলাকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ; মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ প্রভৃতি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ বিভিন্ন হল মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়।

ঢাবিতে অস্থায়ী ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’ : শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) টিএসসির পায়রা চত্বরে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবী মঞ্চ’ নামে বুদ্ধিজীবীদের নাম সংবলিত একটি অস্থায়ী মঞ্চ তৈরি করেছে। এ মঞ্চে ৩১০ জন বুদ্ধিজীবীর নাম ও জন্মস্থান উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ জন শহীদ বুদ্ধিজীবী শিক্ষকের নামের তালিকা টানানো হয়েছে। ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পাদক সাদ বিন কাদের ও সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজের উদ্যোগে অস্থায়ী এ মঞ্চ তৈরি এবং বুদ্ধিজীবীদের নাম ও পরিচয় সংগ্রহ করা হয়েছে।

বিএসএমএমইউ : পুষ্পস্তবক অর্পণ, স্বেচ্ছায় রক্তদানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস বিনম্র শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়েছে। ভোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয় এবং সবাই কালো ব্যাজ ধারণ করেন। সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের বি ব্লকে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে এবং সকাল ৯টায় মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়ার নেতৃত্বে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান, রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল হান্নান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ, গ্রন্থাগারিক ও কবি অধ্যাপক ডা. হারিসুল হক, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে মাহবুবুল হক, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. আসাদুল ইসলাম, বিএসএমএমইউ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ডা. জিল্লুর রহমান ভূঁইয়া, পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আবদুস সোবহান প্রমুখ। সকাল সাড়ে ১০টায় বিএসএমএমইউ’র বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট : বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। শনিবার রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে বিকাল ৪টায় আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনায় অংশ নেন শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা। সভাপতির বক্তব্যে গোলাম কুদ্দুছ বলেন, দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা দেশমাতৃকার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। তাদের আদর্শ ও চেতনার ভিত্তিতে দেশ গড়ে উঠলে তাদের প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে লক্ষ্য সামনে রেখেই দেশ পরিচালনা করছেন।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর