সিলেট আ’লীগ: কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হতে তিন নেতার জোর লবিং

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেটে পদ-পদবি থেকে খসে পড়া আওয়ামী লীগের তিন প্রভাবশালী নেতা এখন ঢাকামুখী। কেন্দ্রীয় সম্মেলন সামনে রেখে তারা এখন জোর লবিংয়ে ব্যস্ত। সম্মেলন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই ব্যস্ত হয়ে উঠছেন তারা।

সম্প্রতি দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতও করেছেন তারা। তিন নেতাই সাক্ষাতের বিষয়টি যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছেন। এদিকে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রত্যাশী এই তিন নেতার আমলনামা কেন্দ্র খতিয়ে দেখছে বলে দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

সিলেটের ‘কোটায়’ একটানা পরপর তিনবার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদে রয়েছেন অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। তবে এবার তিনি ‘ছুটি’ পাচ্ছেন বলে সিলেটে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। ফলে এই পদে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন জেলা ও মহানগরের দায়িত্ব থেকে ঝড়ে পড়া তিন নেতা।

তারা হলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী ও মহানগরের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ।

জেলা ও মহানগরের পদ থেকে বিদায় হলেও এই তিন নেতার সাংগঠনিক দক্ষতা সিলেট আওয়ামী লীগে প্রশংসিত। বদর উদ্দিন আহমদ কামরান মহানগরের সভাপতি পদ হারালেও রাজনৈতিক মহলে এখনও তিনিই ‘শহর কুতুব’। পুরো সিলেট নগরীর সবকিছুই তার নখদর্পণে। তার ইশারা ছাড়া নগরীর অনেক কিছুই এখনও নড়েচড়ে না।

কেন্দ্রীয় সদস্য কামরান এবার কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক পদ পাচ্ছেন এমন আলোচনা রয়েছে সিলেট নগরীতে। জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীও কম নন। রাজনীতিতে সিদ্ধহস্ত এই বঙ্গবন্ধু সৈনিক বিলেত ছেড়ে সিলেটে আসেন একমাত্র রাজনীতির জন্য। দেশে ফিরেই তিনি সিলেট-২ আসন পুনরুদ্ধার করেন বিএনপির তৎকালীন এমপি ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে। রাজনীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়েননি, উল্টো খুইয়েছেন কোটি কোটি টাকার পৈতৃক সম্পত্তি।

দিনভর মাঠ চষে বেড়ানো শফিককে ‘চব্বিশ ঘণ্টার রাজনীতিক’ আখ্যা দিয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্ঠ এই সৈনিকও এবার কেন্দ্রের পদপ্রত্যাশী। মহানগরের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ দায়িত্ব পালনকালে দুর্নাম কুড়াননি। দলের দায়িত্ব পালনকালে পরিচ্ছন্ন রাজনীতির পাশাপাশি সাংগঠনিক দক্ষতা দেখিয়েছেন তিনি। তিনিও প্রত্যাশা করেন কেন্দ্রের পদ।

কেন্দ্রের পদপ্রত্যাশী মহানগর আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সভাপতি ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান যুগান্তরকে বলেন, জননেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমাকে যেখানে যে পদের দায়িত্ব দেবেন সেই দায়িত্ব পালনে আমি প্রস্তুত। জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীও নেত্রীর দিকে তাকিয়ে।

তিনি বলেন, ‘সামনে মুজিব বর্ষ, অনেক কাজ। আমার দৃঢ়বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু কন্যা বঙ্গবন্ধু সৈনিকদের বসিয়ে রাখবেন না। মহানগরের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, দায়িত্ব দেবেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমি তার দিকেই তাকিয়ে আছি।’

এই তিন তারকা নেতার দৃষ্টি যেখানে কেন্দ্রের সাংগঠনিক পদের দিকে, সেখানে সঙ্গতকারণে পদবি নিয়ে অনেকটা ঝুঁকিতে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক পদে থাকা অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।

দলীয় সূত্র জানায়, মিসবাহকে ঘিরে স্থানীয়ভাবে দলের অভ্যন্তরে নানা সমস্যা সৃষ্টি হলে গত মেয়াদে মিসবাহকে সিলেট থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ময়মনসিংহের। তিনি শুধু কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকই নন, অনেক দিন ধরে সিলেট বিভাগীয় সরকারি প্রধান আইন কর্মকর্তা পদেও আছেন।

কেন্দ্রীয় সম্মেলন ও কাউন্সিল সামনে রেখে বর্তমানে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা মিসবাহকে ঘিরে নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে সিলেটে। গত কয়েক বছর সরকারি আইন কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনকালে তার কিছু কর্মকাণ্ড মাঠের নেতাকর্মীদের হতাশ করেছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজের দুটি নম্বরে গত দু’দিন ধরে বারবার ফোন করে ও মেসেজ পাঠিয়ে সাড়া পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর