হাওর বার্তা ডেস্কঃ তরুণদের সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগাতে কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার অধিক সংখ্যক নতুন মুখ স্থান দিতে চায় আওয়ামী লীগ। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে দলটির হাইকমান্ড। ইতিমধ্যে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তরুণ নেতাদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও প্রস্তুত করা হয়েছে।
সেখানে স্থান মিলেছে ছাত্রলীগের সাবেক ত্যাগী নেতা, বিভিন্ন কারণে নিষ্ক্রিয় কিন্তু দলের প্রতি নিবেদিত, নির্বাচন ও দলের দুর্দিনে যারা সাহসী ভূমিকা রেখেছেন, কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সাবেক কয়েকজন নেতা। এছাড়া তালিকায় আছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ কর্মসূচি বাস্তবায়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশ কয়েকজন উদ্যমী তরুণ।
অন্যদিকে যারা টেন্ডার ও চাঁদাবাজ এবং ক্যাসিনো কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত, দলীয় কোন্দল সৃষ্টিকারী, বিএনপি-জামায়াত ঘরানার নেতাদের যারা দলে ভিড়িয়েছেন এবং বিভিন্ন নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে যারা কাজ করেছেন- এমন নেতারা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ছেন।
ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে উল্লিখিত সব তথ্য। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল ২০-২১ ডিসেম্বর। এ নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু করেছে দলটি। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চলছে শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জার কাজ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান শুক্রবার যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সব সময়ই তরুণদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। দলের বিগত ২০টি কমিটি বিশ্লেষণ করলে সেটিরই প্রমাণ মিলবে। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটবে না। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়েই কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হবে।
তিনি বলেন, তরুণ যেসব নেতার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, বিশেষ করে যারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করে দলের প্রতি ভালোবাসা, যোগ্যতা ও আনুগত্য প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটিতে তারাই স্থান পাবেন।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্বে কী ধরনের পরিবর্তন আসছে তা নিয়ে রীতিমতো কৌতূহলী হয়ে উঠেছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। পিছিয়ে নেই সাধারণ মানুষও। ক্ষমতাসীন পার্টি হওয়ার কারণে সবার মুখে মুখে সম্ভাবনাময় প্রার্থীদের নাম।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে ব্যাপক রদবদলের খবরে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। দীর্ঘদিন থেকে আলোচনায় থাকা শতাধিক নেতা এখন নিজ নিজ অবস্থান থেকে লবিং করছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশীর্বাদ পেতে গণভবনেও দারস্থ হচ্ছেন অনেকে। যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়ে জানিয়েছেন, অন্যবারের চেয়ে এবার উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বেশি তরুণকে কমিটিতে পদায়ন করা হবে। সংসদ নির্বাচন ও মন্ত্রিসভায় তরুণদের সফলতার কারণেই আসন্ন নতুন কমিটিতে তরুণদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চলমান শুদ্ধি অভিযানের কারণেও অনেক পুরনো নেতা বাদ যাবেন। তাদের স্থান পূরণে তরুণদের কমিটিতে আনা হবে।
ওই নীতিনির্ধারকরা আরও জানান, আওয়ামী লীগের তারুণ্যনির্ভর নতুন কমিটিতে স্থান পেতে এগিয়ে আছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। এর মধ্যে আছেন পিরোজপুর জেলা আওয়ামী লীগ সদস্য ইসহাক আলী খান পান্না। তিনি ১৯৯৪-৯৮ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। ২০০১ সালে দলের দুর্দিনে গঠিত পর্যবেক্ষক কমিটির সদস্য ছিলেন পান্না।
আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুর রাজ্জাকের বড় ছেলে নাহিম রাজ্জাকের নাম বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছে। সবচেয়ে কম বয়সে এমপি বনে যাওয়া নাহিম প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রেরণায় এখন তারুণ্যের প্রতীক হয়ে উঠেছেন। উচ্চ শিক্ষিত এ তরুণ ডিজিটাল সরকারের নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যুক্ত রয়েছেন।
১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন বাহাদুর ব্যাপারী। এরপর আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক হলেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান হয়নি। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটি ও শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার তিনিও আসতে পারেন।
২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন লিয়াকত সিকদার। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য। পদ না থাকলেও দলের নেপথ্যে থেকে কাজ করছেন তিনি।
এবার মূল কমিটিতে জায়গা পেতে অনেকটাই এগিয়ে আছেন। এছাড়া ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করা মাহমুদ হাসান রিপনের নামও শোন যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে ও সংকটকালীন জাতীয় নির্বাচনে সারা দেশে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আলোচিত হন তিনি।
জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের মেয়ে সৈয়দা জাকিয়া নূর এমপি। আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন। এবার তিনিও আসতে পারেন জাতীয় কমিটিতে।
আওয়ামী লীগের নতুন কমিটিতে স্থান পেতে বেশ আলোচনায় আছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি। পরপর তিনবার ভোলা-৪ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য তিনি। তার বাবা বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ প্রয়াত মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম। তিনিও একাধিকবার সংসদ সদস্য ছিলেন।
বাবার দেখানো পথেই ভোলায় জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন জ্যাকব। ভোলায় তার তৈরি জ্যাকব টাওয়ার ইতিমধ্যে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী সাইফুজ্জামান শিখর এমপি, আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক সহ-সভাপতি নুরুল আমিন রুহুল এমপির নাম শোনা যাচ্ছে।
যুবলীগের সদ্যবিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশিদ, কৃষক লীগের বিদায়ী কমিটির সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্লা, মহিলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি রওশন জাহান সাথী আলোচনায় আছেন।
দলটির তারুণ্যের কমিটিতে স্থান পেতে পারেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত আবদুল জলিলের ছেলে ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন এমপি, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়েশা খান এমপি, শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার, ভাষাসৈনিক গাজীউল হকের মেয়ে সুজাতা হক।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, নব্বই দশকের জনপ্রিয় মডেল-অভিনেতা ও হকি ফেডারেশনের নেতা ফয়সাল আহসানউল্লাহ কমিটিতে থাকছেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে সরকার ও দলকে পৃথক করার ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটি সাজাতে চায় আওয়ামী লীগ। আবার তরুণ নেতৃত্বের একটি অংশ বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। তবে মন্ত্রিসভায় না রাখলেই নয় এমন সফল কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা কমিটিতে থাকছেন।
একই কারণে কমিটির বাইরে থাকা বেশ কয়েকজন তরুণ প্রতিমন্ত্রী আসতে পারেন নতুন নেতৃত্বে। তাদের মধ্যে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জুনাইদ আহমেদ পলক, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
এছাড়া তরুণদের মধ্য থেকে আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- রাজনীতি বিশ্লেষক ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ এ আরাফাত, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাঈনুদ্দিন হাসান চৌধুরী, এএইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, সাইফুর রহমান সোহাগ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, মাহফুজুল হায়দার চৌধুরী রোটন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক অ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জগন্নাথ হল সংসদের সাবেক ভিপি সুভাষ সিংহ রায়, ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি খ ম হাসান কবির আরিফ, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির, গোলাম সারোয়ার কবির, পনিরুজ্জামান তরুণ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ ভূঁইয়া শিপু, আওয়ামী লীগের প্রচার উপ-কমিটির সদস্য সাদিকুর রহমান পরাগ প্রমুখ।
গাজীপুর-৫ আসনের মেহের আফরোজ চুমকি, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের সাগুপ্তা ইয়াসমিন, সুনামগঞ্জ-২ আসনের জয়া সেনগুপ্তা, মানিকগঞ্জ-২ আসনের মমতাজ বেগম, গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি নারী কোটায় এগিয়ে আছেন।
নারীদের মধ্যে আরও এগিয়ে আছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক চার এমপি- মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খালেদ মোশাররফের মেয়ে মাহজাবিন খালেদ, সানজিদা খানম, ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পী ও নূরজাহান বেগম মুক্তা। এছাড়া সংরক্ষিত আসনের বর্তমান এমপি সুবর্ণা মোস্তফার নাম আলোচনায় আছে।