শর্ত পূরণে’ এগোচ্ছে আওয়ামী লীগ

হাওর  বার্তা ডেস্কঃ নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে সরকারে এসে নানা পদক্ষেপ নেয়া আওয়ামী লীগ দলের সাংগঠনিক তৎপরতায় নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়িয়ে শর্ত পূরণের দিকে এগোচ্ছে।

নিবন্ধন শর্ত অনুযায়ী, দলে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারীর পদায়নে এবারের সম্মেলনকে বেছে নিচ্ছে দলটি। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা স্বত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাতে তৃণমূলেও নারী প্রতিনিধিত্ব সঠিক সংখ্যা থাকে, সেদিকেও নজর দিতে চাইছে দলটির নীতি নির্ধারকরা।

২০০৮ সালে হওয়া গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণের ক্ষেত্রে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ শর্ত পূরণে যেসব দল ব্যর্থ হবে আইন অনুযায়ী তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে বলেও আরপিওতে বলা আছে। কিন্তু বেশিরভাগ দলই এখন পর্যন্ত এক্ষেত্রে আরপিও অনুসরণ করছে না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ শর্ত অনুসরণ করতেই কাজ করে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০তম সম্মেলনের মাধ্যমে ৮১ সদস্য বিশিষ্ট কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে চারটি পদ এখানো ফাঁকা রয়েছে। সেই অর্থে কেন্দ্রীয় কমিটি ৭৭ সদস্যের। এই কমিটিতে ১৫ জন নারী রয়েছেন, অর্থাৎ নারীর প্রতিনিধিত্বে হার ১৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

আওয়ামী লীগে সভাপতি পদে আছেন শেখ হাসিনা। সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পদে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী ও সাহারা খাতুনকে স্থান দেয়া হয়েছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ডা. দীপু মনি। দলের সম্পাদক পদে আছেন ৫ নারী। তাদের মধ্যে কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ। কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য পদে আছেন ৫ জন। তাদের মধ্যে সিমিন হোসেন রিমি, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান, পারভীন জামান কল্পনা, মেরিনা জাহান, মারুফা আক্তার পপি।

দলের দায়িত্বশীল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২০ সালের মধ্যে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ রাখার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তাতে এবারের সম্মেলনেই এই কোটা পূরণ করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ এবারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখা যেতে পারে নতুন কিছু মুখ। দলের সভাপতিমণ্ডলীসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে আসতে পারে নারী প্রতিনিধি।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগসহ কোনো দলই ৩৩ শতাংশের এই শর্তের কাছাকাছি না থাকলেও, নারী নেতৃত্ব বিকাশে আওয়ামী লীগই এগিয়ে আছে। গত ১০ বছরে এ শর্ত পূরণে অন্য দলগুলো তেমন উদ্যোগী না হলেও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নারীর সংখ্যা বেড়েছে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘দলে যে সংখ্যক নারী নেতৃত্ব থাকার কথা আমরা সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছি। ইতিমধ্যে আগের চেয়ে অনেক অগ্রগতি হয়েছে এই বিষয়ে। ২১ত জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে শর্তের আরো কাছে চলে আসবে।’

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় কমিটিতে বা কেন্দ্রীয়ভাবে নারী নেতৃত্ব যেভাবে বিকশিত হচ্ছে, তৃণমূল পর্যায়ের সেটি খুব কম রয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে নারী প্রতিনিধিত্ব সেই অর্থে আসছে না। ৬৪ জেলা ও ১২টি মহানগর নিয়ে মোট ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি রয়েছে আওয়ামী লীগের। এর বাইরে ৪৯০টি উপজেলা কমিটি, ৩২৩টি পৌরসভা ও ৪ হাজার ৫৫০টি ইউনিয়ন কমিটি এবং প্রতিটি পৌরসভা ও ইউনিয়নের ওয়ার্ড কমিটি রয়েছে। গত জুন পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে নারী সদস্যের হার ১৫ শতাংশ বলে জানা গেছে। কোথাও কোথাও এই সংখ্যা আরো কম।

তৃণমূলে নারী প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে এই বিষয়ে দলের বড় পরিকল্পনা রয়েছে বলে রাইজিংবিডিকে জানান কাজী জাফর উল্লাহ।

‘আমাদের এই বিষয়ে বড় পরিকল্পনা রয়েছে। প্রতিটি জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কমিটিগুলোতে সঠিকভাবে করতে সক্ষম হয়েছি। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ওয়ার্ড। এখানে আমাদের নারী নেতৃত্ব সেভাবে বিকশিত করা সম্ভব হয়নি। এবারে আমাদের চেষ্টা থাকবে এসব ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলোতে কমপক্ষে ১০ভাগ নারী নেতৃ্ত্ব যাতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি।’

নারীদের প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে ইসির কাছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছিল, দলের তিন সহযোগী সংগঠন-বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ ও মহিলা শ্রমিকলীগের শতভাগ সদস্য নারী। তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায়ে নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি ও নারীর ক্ষমতায়নে সংগঠনগুলো কাজ করছে। ২০২০ সালের মধ্যেই সব কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আওয়ামী লীগ সক্ষম হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর