মান্না নেই তবু আজও স্মরণীয়

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। এফডিসিতে লোকে লোকারণ্য। তিল ধারণের ঠাঁই নেই। প্রধান গেটে তালা দেয়া। প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে যোগ দিয়েছে পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্য।

কারণ এফডিসির গেটের বাইরে হাতিরঝিল মোড় থেকে সোনারগাঁও হোটেল পার হয়ে বাংলামোটর পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের ভিড়। সবাই চিৎকার করছেন, এফডিসিতে ঢুকতে চাইছেন। লক্ষ্য একটাই, প্রিয় নায়ককে শেষবারের মতো দেখা।

তার আগের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৪ বছর বয়সে অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন ঢাকাই ছবি তৎকালীন সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক মান্না।

ওই দিন রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ডাক্তারদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও দুপুরের পর মৃত্যুর সঙ্গে আলিঙ্গন করলেন এ নায়ক। কথা ছিল পরদিন এফডিসিতে তার প্রিয় কর্মস্থলে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মান্নার মরদেহ নেয়া হবে। নেয়া হয়েছিলও।

শেষবারের মতো প্রিয় সহকর্মীকে দেখে অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায়ও জানিয়েছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। কিন্তু ভক্তদের শেষ দেখা কে দেখাবে, প্রিয় নায়ক যে বুকের পাঁজর ছিঁড়ে চলে যাচ্ছে ওপারে! চিরদিনের জন্য! তাই ভক্তদের বাঁধভাঙা জোয়ার সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়েছে পুলিশ সদস্যদের।

কথা ছিল এফডিসিতে জানাজার পর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য মান্নার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। এ খবর প্রচার হওয়ার পর থেকে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। স্রোতের মতো আসতে থাকে মানুষ শহীদ মিনার অভিমুখে। কিন্তু মরদেহ নেবে কীভাবে?

এফডিসির গেটই যে খোলা যাচ্ছে না ভক্তদের চাপে! প্রায় এক ঘণ্টা সময় কেটে যায় এভাবে। আলোচনা চলতে থাকে কীভাবে শহীদ মিনার নেয়া যায়? একসময় সিদ্ধান্ত হয় হেলিকপ্টারে করে এফডিসি থেকে শহীদ মিনার নেয়া হবে।

কিন্তু হেলিকপ্টার ল্যান্ড করার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই এফডিসিতে। তাই সেই চিন্তাও একসময় বাতিল হয়ে যায়। এভাবে দুই ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পর মানুষের চাপ সামাল দিতে না পেরে মরদেহ শহীদ মিনারে নেয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। শেষতক এফডিসি থেকে সরাসরি মান্নার মরদেহ টাঙ্গাইলে তার নিজ বাড়িতে দাফনের উদ্দেশ্যে নেয়া হয়।

এর মধ্যে এ ঘটনা ফলাও করে প্রচার হয় দেশি গণমাধ্যমগুলোয়। মান্নাই একমাত্র নায়ক, যার মৃত্যুর খবর নিয়ে কোনো পত্রিকায় সম্পাদকীয় ছাপা হয়েছিল।

এত জনপ্রিয়তা ধরে রেখে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে ক’জনা? কী এমন ছিল এ নায়কের মধ্যে, যার জন্য ভক্তরা এতটা উতলা হয়ে উঠেছিল সেদিন? ছিল, তার মধ্যে অনেক কিছুই ছিল। সহজে মানুষের সঙ্গে মিশে যাওয়ার প্রবণতা ছিল, ইন্ডাস্ট্রিকে সঠিকভাবে পরিচালিত করার গুণ ছিল। বিশেষ করে শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে মান্না ছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র। আর সিনেমা?

সেটা তো মৃত্যুর পর ভক্তরাই বুঝিয়ে দিয়েছেন, মান্না শুধু একজনই। কালে কালে এমন নায়ক একজনই জন্মায়, যার খ্যাতি থাকে আকাশছোঁয়া।

আগামীকাল এ নায়কের জন্মদিন। ১৯৬৪ সালের ৬ ডিসেম্বর টাঙ্গাইলে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পুরো নাম আসলাম তালুকদার মান্না। ১৯৮৪ সালে বিএফডিসি আয়োজিত নতুন মুখের সন্ধানের মাধ্যমে ঢাকাই ছবিতে তার অভিষেক। প্রথম অভিনীত ছবি ‘তওবা’।

তবে প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘পাগলি’। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাসেম মালার প্রেম’ ছবিতে প্রথম সাফল্য ধরা দেয় তার। এরপর প্রায় সাড়ে তিনশ’ ছবির সফল নায়ক ছিলেন তিনি।

আশির দশকে সুনেত্রা, নিপা মোনালিসা থেকে শুরু করে চম্পা, দিতি, রোজিনা, নূতন, অরুণা বিশ্বাস, কবিতার মতো নায়িকাদের সঙ্গে অভিনয় করেন মান্না।

এরপর মৌসুমী, শাবনূর, পূর্ণিমা, মুনমুন, সাথী, স্বাগতা, শিল্পী, লিমাদের সঙ্গেও রয়েছে তার ব্যবসাফল ছবি। কারণ সময়টা ছিল তখন মান্নার দখলে। ছবিতে শুধু মান্না আছেন- শুধু এ কারণেই দর্শক হলে ছুটে গেছেন, ছবি সফল হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর