ডিসেম্বরেই ১৫ সচিব অবসরে যাচ্ছেন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ডিসেম্বর মাসেই প্রশাসনের ১৫ জন সচিব অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাচ্ছেন। আর মাঠ পর্যায়ে কর্মরত ১৫ জন জেলা প্রশাসককে প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় যোগ্যতা, দক্ষতা বিবেচনায় এ তালিকার কেউ কেউ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন। কিংবা পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের দিয়ে এসব পদ প‚রণ করা হতে পারে। এর মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান এবং জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ। এসব নিয়েই জল্পনা-কল্পনা চলছে প্রশাসনে।

জানতে চাইলে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার ইনরকিলাবকে বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে যারা পরবর্তী সময়ে ওইসব পদে যাওয়ার যোগ্য তারা হতাশ হন। তাদের পদোন্নতির পথ বন্ধ হয়ে যায়। তাদের মধ্যে ক্ষোভ, অসন্তোষ, হতাশা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এতে প্রশাসনিক কাজের গতি ব্যাহত হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে আসছে বড় ধরনের রদবদল। দীর্ঘদিন ধরে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ১৮০ থেকে ২২ জন ডিসিকে প্রত্যাহার করে নতুন ডিসি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে এ মাসেই। অনুমোদিত ডিসি ফিট লিস্ট থেকে নতুন ডিসি নিয়োগ করা হবে। এজন্য তালিকা ধরে নড়াচড়া শুরু করেছেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

প্রশাসনে চলমান চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিরোধিতা করে গত ২০১৪ সালের সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য নীতিমালা করার তাগিদ দিয়ে মুহিত বলেছিলেন, সরকারি কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ানো হয়েছে। এ কারণে তাদের চুক্তিভিত্তিক চাকরি পরিহার করতে হবে। আগে তারা ৫৭ বছরেই চাকরি থেকে অবসরে যেতেন। ২০১১ সালে সেটা বাড়িয়ে ৫৯ করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়েছে। তারপরও কেন তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। সরকারকে কিছু ক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হয়। এ কারণে অর্থমন্ত্রী প্রস্তাব দিয়েছিলেন এ বিষয়ে একটি সমীক্ষা করার। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর এসব প্রস্তাব ‘নথিজাত’ করে রেখেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ ইনকিলাবকে বলেন, দেশের জনগনের নিরবচ্ছিন্ন সেবাদান যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে সরকার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। যা অতীতেও হয়ে এসেছে, এটা অন্যায় কিছু না।

জানা গেছে, বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা ও দ‚তাবাস মিলিয়ে ১৫০ জন কর্মকর্তা চুক্তিতে চাকরি করছেন। তাদের মধ্যে ১৬ জন সচিব রয়েছেন, যারা অবসরে যাওয়ার পরও চুক্তিতে আছেন। এর বাইরেও শতাধিক সরকারি কর্মচারী রয়েছেন চুক্তিভিত্তিক। বর্তমানে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কোনো নীতিমালা নেই। তবে যোগ্যতা, দক্ষতা ও মেধা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পছন্দের কিছু কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে থাকে। অতীতেও এ ধরনের নিয়োগ হয়েছে। তবে এ কথাও সত্য যে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে উপরের দিকে পদ ব্লক হয়ে যাচ্ছে। নিচের দিকে থাকা কর্মকর্তারা সুযোগ থাকা সত্তে¡ও কাক্সিক্ষত পদে পদোন্নতি পেয়ে দায়িত্ব নিতে পারছেন না।

ডিসেম্বর মাসে অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জুয়েনা আজিজ, ধর্ম সচিব মো. আনিছুর রহমান, জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ, খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব মো. রইছউল আলম মন্ডলসহ আরো বেশ কয়েকজন।
এদিকে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম, প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মফিজুল ইসলাম, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. সামছুর রহমান, সাবেক সচিব সব্রত রায় মৈত্র চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

 

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর