শীতকালে আশ্রয় নেওয়া অতিথি পাখি আমাদের মেহমান

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অতিথি পাখি বলতে সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ঋতুতে এক স্থান হতে অন্য স্থানে আশ্রয় নেওয়া পাখিদের বোঝায়। এটি সাধারণত শীত ঋতুতেই হয়ে থাকে। পৃথিবীর নানা প্রান্তের পাখিরা বসবাসের স্থানের তীব্র শীত সহ্য করতে না পেরে অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশে আশ্রয় নেয়। তাছাড়া এ সময়টিতে শীতপ্রধান দেশগুলোতে প্রচন্ড রকমে খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। কারণ শীতকালীন শীতপ্রধান দেশগুলোতে অধিকাংশ সময়েই তাপমাত্রা থাকে শূন্যের নিচে। সঙ্গে তুষারপাত তো আছেই। এসব কারণে ওইসব অঞ্চলে গাছপালা জন্মাতে পারে না। তাই শীত এলেই উভয় মেরু, মঙ্গোলিয়া, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, কানাডা, আমেরিকা, গ্রীনল্যান্ড, সাইবেরিয়াসহ এশিয়ার কিছু অঞ্চল ও হিমালয়ের আশপাশের অঞ্চলের কিছু স্থান থেকে চলে আসে অপেক্ষাকৃত কম শীতের দেশে।

Image result for অতিথি পাখি ছবি

পৃথিবীতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি রয়েছে। এসব পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতির পাখিই বছরের একটা নির্দিষ্ট সময়ে (শীত) প্রচন্ড তুষারপাত আর ঠান্ডা আবহাওয়া সহ্য করতে না পেরে প্রাণ বাঁচাতে চলে আসে বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব পাখির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—কালি হাঁস, খয়রা চকাচকি, কার্লিউ, পেড়িভুতি, গিরিয়া, খঞ্জানা পাতারি, জলপিপি, পানি মুরগি, নর্থ গিরিয়া, পাতি বাটন, কমনচিল, বাটনচিল, বুনো হাঁস, ছোট সারস পাখি, বড় সারস পাখি, হেরন, নিশাচর হেরন, ডুবুরি পাখি, কাদাখোচা, গায়ক রেন পাখি, বাজ সরালি, চাতিকুট, গ্যাডওয়াল, পিনটেইল, নরদাম সুরেলার, লেঞ্জা চিতি, সরালি, পাতি হাঁস, বুট হাঁস, বৈকাল, পান্ডামুখী, রাঙ্গামুড়ি প্রভৃতি। অতিথি পাখি আমাদের মেহমানের মতো। এসব পাখি অতিথিদের মতোই আতিথেয়তা প্রয়োজন। এসব পাখি সাধারণত শীত শেষেই চলে যায়। আবার কিছু কিছু পাখি আমাদের দেশে রয়েও যায়। প্রাণী পরিবেশের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। এরা আমাদের সম্পদও বটে। পাখিদের আগমনে আমাদের দেশের পাহাড়, পর্বত, নদী-নালা, হাওড়-বাওরে সৌন্দর্যের নতুন মাত্রা পায়। পাখিদের কিচিরমিচিরে মুখরিত থাকে এসব স্থান।

Image result for  অতিথি পাখি ছবি

পাখিগুলো শুধু আমাদের পরিবেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, এমনটা নয়। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অনেক বিষাক্ত প্রাণী রয়েছে; যা মনুষ্যজাতির জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এসব বিষাক্ত পোকামাকড় পাখিরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। পাখিরা এগুলোকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করার কারণে মনুষ্যজাতি এসব পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে এই যে, মনুষ্যজাতি এসব উপকারের কথা ভুলে গিয়ে কিছু অতিলোভী অসাধু চক্র আইনকে উপেক্ষা করে অতিথি পাখি শিকার করে তাদের আহার এবং উপার্জনের বস্তু বানায়। এতে করে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে অনেক প্রজাতির প্রাণীও পৃথিবী থেকে বিলুপ্তি ঘটছে। এটি সত্যিই মানবজাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়।

Image result for  অতিথি পাখি ছবি

সরকার বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, ১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন নামে দুটি আইন প্রণয়ন করে। এতে পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি ১ বছর জেল অথবা ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটলে ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়াও প্রাণী রক্ষায় সচেতন হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে ৪ অক্টোবরকে বিশ্ব প্রাণী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং এই দিবসটি বিশ্বে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। কিন্তু আইনের পুরোপুরি বাস্তব প্রয়োগ না থাকায় অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা যাচ্ছে না। যার ফলে অতিথি পাখি নিধনও বন্ধ হচ্ছে না। এসব অপরাধ বন্ধের জন্য চাই জনসচেতনতা। জনসচেতনতাই কেবল পারে অতিথি পাখি নিধন বন্ধ করতে। আর দেশব্যাপী জনসচেতনতা তৈরি করতে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়া টিভি চ্যানেলে অতিথি পাখি রক্ষায় বিজ্ঞাপন, মোবাইল অপারেটরদের ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ, উপাসনালয়সমূহে ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরি করা যেতে পারে। আর এ জনসচেতনতায় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও দেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অনেকাংশেই অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর