দেশের ইমেজ রক্ষায় বহির্বিশ্বে ইসি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অবৈধভাবে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও ভিন দেশিদের সংঘটিত অপরাধের দায় নেবে না বাংলাদেশ। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে দেড় কোটির মতো বাংলাদেশের নাগরিক বসবাস করছেন। কিন্তু এরা সবাই কি বাংলাদেশি? এই প্রশ্ন এখন সবার। একই প্রশ্ন খোদ সরকারেও। অনেক ভিন দেশি বাংলাদেশের পার্সপোর্ট ব্যবহার করে প্রবাসে নানা অপরাধমূলক কাজ করছে বলে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। এদের কারণে বিদেশে চরমভাবে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দেশের ভাবমূর্তি যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে নজর রাখছে সরকার। ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি সমুজ্জ্বল রাখতে এবং প্রকৃত বাংলাদেশি শনাক্ত করতে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কাজ শুরু করেছে বলে সূত্র জানায়।

এদিকে সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে বাংলাদেশিদের ভোটার করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সংস্থাটি। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া ও দুবাইয়ে এই কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এরপর সৌদি আরব, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে বসবাসরতদেরও ভোটার করে নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশন বলছে, প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট দেশেই এনআইডি সরবরাহ করা হবে। এ কাজ শেষ হলে সংশ্লিষ্ট দেশের যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পরিচিতি যাচাই করে দেয়া হবে। এক্ষেত্রে কোনো দেশের ইমিগ্রেশন বিভাগ যদি কোনো ব্যক্তির শনাক্ত করে দেয়ার আবেদন করে, তাহলে খুব সহজেই বলা যাবে, ওই ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক কি-না। প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সরবরাহ সম্পন্ন করা গেলে শুধু বাংলাদেশিই নয়, যদি কেউ বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে থাকেন তারাও ধরা পড়বেন বলে ইসি জানায়। ইসির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, নাগরিক না হয়েও অনেকে অপরাধে জড়ালে বাংলাদেশের নাগরিক বলে পরিচয় দেন। এমনকি কেউ কেউ বাংলাদেশের পাসপোর্টও প্রদর্শন করেন। ফলে দেশের সুনাম নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বৈধ প্রবাসীদের ওপর প্রভাব পড়ে। এক্ষেত্রে কোনো দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা যথাযথ কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের পরিচিতি প্রকাশ করলে, সহজেই বলে দেয়া সম্ভব হবে সে বাংলাদেশি কিনা!

এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অনু বিভাগের পরিচালক (অপারেশনস) মো. আবদুল বাতেন বলেন, প্রবাসীদের এনআইডি সরবরাহের কাজ আমরা শুরু করেছি। এটি বাস্তবায়ন হলে যারা আমাদের নাগরিক নন, তারা সহজেই চিহ্নিত হবে। ভিনদেশের নাগরিক হয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ গেলে, আমরা সংশ্লিষ্ট দেশের কর্তৃপক্ষকে বলে দেব, এটা আমাদের নাগরিক নয়। ইসি সূত্র জানায়, গত ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় অনলাইনে আবেদন নেয়ার মাধ্যমে প্রবাসীদের সংশ্লিষ্ট দেশেই ভোটার করে নেয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। গত দু’দিন আগে ১৮ নভেম্বর দুবাইয়েও এ কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। দুবাইয়ের পর সৌদি আরব, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে বসবাসরতরদেরও ভোটার করে নেয়া হবে। এনআইডি মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুল ইসলাম জানান, মোট ছয়টি ডকুমেন্ট দিতে হবে প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার জন্য। এগুলো হলো- পাসপোর্টের ফটোকপি, বিদেশি পাসপোর্টধারী হলে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদের ফটোকপি বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতিপত্র, বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে শনাক্তকারী একজন প্রবাসী বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্টের কপি, বাংলাদেশে বসবাসকারী রক্তের সম্পর্কের কোনো আত্মীয়ের নাম, মোবাইল নম্বর ও এনআইডি নম্বরসহ অঙ্গীকারনামা, বাংলাদেশে কোথায়ও ভোটার হয়নি মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা ও সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের প্রত্যয়নপত্র।

তিনি বলেন, এসব তথ্য দিয়ে যখন কেউ ভোটার হবেন, তখন ইসির তদন্তে ব্যক্তির পরিচিতি নিশ্চিত হবে। যার ভিত্তিতে দেয়া হবে এনআইডি। ফলে কেউ যদি নাগরিক না হয়, তদন্তে স্বাভাবিকভাবেই তার দেয়া তথ্যের মিল থাকবে না। ফলে সহজেই চিহ্নিত হবে বাংলাদেশের নাগরিক।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করে। যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে ভোটারদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে। গড়ে তোলা হয় এনআইডি তথ্য ভাণ্ডার। বর্তমানে ৫০টির বেশি সংস্থা-প্রতিষ্ঠান এই তথ্য-ভাণ্ডার থেকে ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করছে। এতে অপরাধী চিহ্নিতকরণসহ বহুমুখী সমস্যা সমাধান সহজতর হয়েছে। এ ছাড়া সহজেই মিলছে বিভিন্ন নাগরিক সেবা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর