মানুষ এখন সুপারি শিল্পে ঘিরে ঘুরে ভাগ্যবদল হয়েছে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ যশোরের কেশবপুরের মানুষ এখন সুপারি শিল্পকে ঘিরে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। প্রায় শতাধিক নারী পানের খিলির জন্য সুপারি টুকরা করার কাজ করে পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে পেয়েছেন। নারীদের আয়ের ওপর নির্ভর করেই ঘুরে দাঁড়িয়েছেন অভাবী মানুষগুলোর পরিবার।জানা গেছে, কেশবপুর উপজেলার পাঁজিয়া, মঙ্গলকোট ও কেশবপুর সদর ইউনিয়নের ১৫ গ্রামের মানুষের বিলগরালিয়াসহ আশপাশের এলাকা প্রায় ৩০ বছর ধরে জলাবদ্ধতা ছিল। এসময় অসহায় পরিবারের মানুষেরা সংসার চালাতে গাছ-গাছালি, গরু-ছাগল ও জলাবদ্ধ জমি পানির দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়। কাজের সন্ধানে বাড়ি ছেড়ে অনেক পুরুষ চলে যান অন্যত্র।এসময় উপজেলার খতিয়াখালি গ্রামের লক্ষণ দাস ও তার ছেলে উত্তম দাস পানের খিলির জন্য সুপারি টুকরা করার কাজের সুযোগ করে দেন নারীদের। এ সুযোগ পেয়েই গ্রামীণ বধূরা হয়ে উঠেছেন নারীর স্বাবলম্বীতার প্রতীক। সুপারি ব্যবসায়ী উত্তম দাস বলেন, একজন মহিলা প্রতি কেজি সুপারি টুকরো করার জন্য পারিশ্রমিক পান ১০ টাকা। তারা প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ কেজি সুপারি টুকরো করে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা আয় করেন।তাদের সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ কাজ শুরু করেন। পার্শ্ববর্তী মাগুরাডাঙ্গা, বালিয়াডাঙ্গা, সুজাপুর, ব্রহ্মকাটি, রামচন্দ্রপুর, ব্যাসডাঙ্গা, বাকাবর্শী, কন্দর্পপুর ও বড়েঙ্গাসহ ১৫ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার নারী। অভাবী পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া মেয়েরাও এখন লেখাপড়ার পাশাপাশি সুপারি টুকরো করার কাজও করছেন। তারা পড়াশুনার খরচ মিটিয়ে  পারিশ্রমিকের অর্জিত অর্থ তুলে দিচ্ছে বাবা মায়ের হাতে। অপর ব্যবসায়ী আনন্দ দাস জানান, আমি ও আমার বাবা লক্ষণ দাস দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সুপারি কিনে পানের খিলির জন্য সুপারি টুকরো করাতে গ্রামের মহিলাদের কাছে সরবরাহ করি। সুপারি কেটে গ্রামের অসহায় মানুষ অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তবে তিনি পুঁজি সংকট আর সরকারি সুযোগ-সুবিধার অভাবে এ শিল্পকে ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণসহ, সরকারি সহায়তা পেলে সুপারি টুকরো করার এ হস্তশিল্প হতে পারে লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের উৎস বলে মনে করেন। তার সুপারির ব্যবসা দেখে গ্রামের পার্বতী রানী দাস, আনন্দ দাস, রোকন দাস, মো. তুহিন, অমল দাস, অনুকুল দাস, অরুন দাস ও সুজয় দাস এ ব্যবসা শুরু করেন।খতিয়াখালি গ্রামের ছায়া বিশ্বাস জানান, তিনি প্রতিদিন সুপারি টুকরো করে দুইশত টাকা আয় করেন। যা থেকে তিনি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মিটিয়ে অবশিষ্ট টাকা স্বামীর হাতে তুলে দেন। একইভাবে রাখি দাস, রীনা দাস, শিখা দাস, মিতা দত্ত, পারভীনা খাতুনের মতে মহিলারাও সুপারি টুকরো করে প্রতিমাসে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা আয় করেন।কেশবপুর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলাউদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে এলাকার মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে। সুপারি শিল্পে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর