ভেঙে গেল প্রেস ক্লাবে এলডিপি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভেঙে গেল কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদকে বাদ দিয়ে একই নামে আরেকটি দলের ঘোষণা দেয়া হয়।

এলডিপির এ অংশের সভাপতি হয়েছেন আবদুল করিম আব্বাসী ও সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম। প্রাথমিকভাবে সাত সদস্যের সমন্বয় কমিটি করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন- আবদুল গণি, এমএ বাশার, সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, তৌহিদুল আনোয়ার ও কাজী মতিউর রহমান। যদিও বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে অলি আহমদ বলেন, এলডিপি আমার নামে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল। অন্য কারও এলডিপি নামে দল করার অধিকার নেই।

নতুন এলডিপি গঠন প্রসঙ্গে নতুন সদস্য সচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, অলির অতি জামায়াত-নির্ভরতা ও জামায়াত-প্রীতির কারণে তার সঙ্গে রাজনীতি করা সম্ভব নয়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি যেভাবে জামায়াতে ইসলামীকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিচ্ছেন, সার্টিফিকেট দিচ্ছেন, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি এভাবে জামায়াতকে সমর্থন দিতে পারেন না- এটা উনাকে আমরা মুখের ওপরে বলেছি। এজন্য আমাদের সঙ্গে তার বিভেদ তৈরি হয়েছে।

তিনি বলেন, এছাড়া আমরা যেখানে ২০ দলীয় জোটে আছি, সেখানে কয়েকটি দল নিয়ে অলি আহমদের আলাদা জোট ‘জাতীয় মুক্তিমঞ্চ’ করার কোনো যুক্তি ছিল না। জাতীয় মুক্তিমঞ্চ করে অলি আহমেদ খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া কিছুই করতে পারছেন না।

শুরুতে এই মঞ্চকে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আলাদা প্লাটফর্ম বলা হলেও ধীরে ধীরে তা জিয়া পরিবার আর বিএনপির বিষোদ্গার করার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে বির্তকিত আর দুর্বল করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। সেই কারণে তার সঙ্গে আমাদের দূরত্ব সৃষ্টি হয়। এর ফল হিসেবে নতুন এলডিপি গঠন। এলডিপি থেকে অলি আহমদসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

২০০৬ সালে বিএনপি থেকে বেরিয়ে এলডিপি গঠন অন্যায় হয়েছে মন্তব্য করে শাহাদাত হোসেন বলেন, এলডিপি গঠন করে যে অন্যায় ও পাপ করেছি, আশা করি বিএনপি তার প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ দেবে। তিনি বলেন, আমরা বিএনপি এবং ২০ দলের অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর সঙ্গেও সংযুক্ত থাকব। আশা করব, বিএনপি আমাদের স্বীকৃতি জানাবে।

প্রসঙ্গত, গত ৯ নভেম্বর রাতে অলির নেতৃত্বাধীন এলডিপির কেন্দ্রীয় নতুন কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে অলি আহমদ সভাপতি ও রেদোয়ান আহমেদ মহাসচিব হিসেবে পুনর্র্নির্বাচিত হন। বাদ পড়েন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, তৌহিদুল আনোয়ার।

এর আগে অলির নেতৃত্বাধীন কমিটি থেকে বেরিয়ে আসেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল গণি, সাংগঠনিক সম্পাদক এম আবুল বাসার ও দফতর সম্পাদক কাজী মতিউর রহমান। এছাড়া গত জুনে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন আবদুল করিম আব্বাসী।

সংবাদ সম্মেলন সাবেক হুইপ আবদুল করীম আব্বাসী বলেন, অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে চাই, উনার (অলি) সঙ্গে কোনো জ্ঞানী, বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ রাজনীতি করতে পারবে না।

আমি দীর্ঘ সময় দেখেছি, উনি শুধু নিজের স্বার্থ ছাড়া আর কোনো কিছু চিন্তা করেন না। উনি একবার ছাতা এদিকে ধরেন, আরেকবার ছাতা ওদিকে ধরেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে অলি সাহেবের সঙ্গে একজন (রেদোয়ান আহমদ) ছাড়া আর কেউ নেই।

অন্য কারও এলডিপি নামে দল করার অধিকার নেই- অলি : এদিকে বিকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এলডিপির একাংশের সভাপতি ও জাতীয় মুক্তিমঞ্চের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, অন্য কারও এলডিপি নামে দল করার অধিকার নেই।

কেউ যদি নিজের বাবার নাম বাদ দিয়ে আমার নামে পরিচিত হতে চায় তাহলে আমার কোনো আপত্তি নাই। যারা নতুন কমিটি করেছে এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নয় যে তাদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে।

আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, এলডিপির রেজিস্ট্রেশন আমার নামে, আমি দরখাস্তকারী। এটাই মূল এলডিপি। জাতীয় মুক্তি মঞ্চের উদ্যোগে ‘পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে’ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

কর্নেল অলি বলেন, এলডিপি থেকে বাদ পড়ে যারা আজ নতুন কমিটি করেছে তারা আমার ভাইয়ের মতো ও সন্তান সমতুল্য। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার শিক্ষা আমার বাবা-মা দেয়নি। বাংলাদেশে বহু দল আছে, তারা না হয় আরও একটা করল। তাতে ক্ষতির কি?

এলডিপির ওই অংশকে যদি ২০ দল স্বীকৃতি দেয় তাহলে আপনাদের অবস্থান কি হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে অলি বলেন, আমি তো ২০ দলের ইনচার্জ না। যখন হবে তখন সেটা দেখব।

অলি আহমদ বলেন, জাতীয় মুক্তিমঞ্চ কোনো অবস্থাতেই প্রতিশোধ ও প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। মিথ্যা ও অন্যায় পরিহার করতে হবে। গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা, জাগপার সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর