প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে আরব আমিরাতের বড় বিনিয়োগের প্রত্যাশা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পারস্পরিক সুবিধার্থে বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) উদ্যোক্তাদের আরও বড় আকারে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের সরকার অর্থনৈতিক অঞ্চল, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

আবুধাবিতে রোববার প্রধানমন্ত্রী হোটেল সাংরি-লা’তে তার সম্মানে আরব আমিরাতে বাংলাদেশ দূতাবাস আয়োজিত সংবর্ধনা ও নৈশভোজে এসব কথা বলেন।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে সহনীয় বিনিয়োগ নীতি বিদ্যমান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা তৈরি পোশাক শিল্প, ভবন অবকাঠামো নির্মাণ, নির্মাণ শিল্প, যোগাযোগ, জ্বালানি, তথ্যপ্রযুক্তি, জাহাজ নির্মাণ, পর্যটন, হাল্কা প্রকৌশল, শিল্পপার্ক এবং পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বিনিয়োগকারীদের জন্য ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস সুবিধা এবং একশ’র অধিক অবকাঠামোসহ নানা প্রয়োজনীয় সুবিধাদি প্রদান করছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, ইউএইতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। উপস্থিত ছিলেন গণ্যমান্য ব্যক্তি, শীর্ষ উদ্যোক্তা এবং ইউএই’র স্বনামধন্য ব্যবসায়ী সংস্থার প্রতিনিধি ও দেশটির সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা।

বৈদেশিক বিনিয়োগ সুরক্ষা নীতিমালার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগকে সুরক্ষা প্রদান, শুল্ক রেয়াত, যন্ত্রাংশ আমদানিতে স্বল্প শুল্ক, যে কোনো সময় লাভ ও আসলসহ প্রস্থানের সুবিধা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আরব আমিরাতের উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের কৃষিজাত এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে বিনিয়োগকে স্বাগত জানাই। দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক ব্যবসা ও বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতেই বাংলাদেশ ও ইউএই’র যৌথ উদ্যোগের জন্য সম্ভাবনাময় বেশকিছু খাত খুঁজে বের করেছি।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও আমিরাতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও আমিরাত অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের পণ্য আমদানির জন্য ইউএই’র প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে ইউএই ফার্মাসিউটিক্যাল সামগ্রী, পাট ও পাটজাত পণ্য, সিরামিক, চামড়া, খাদ্যদ্রব্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, নিটওয়্যার, ফ্রোজেন ফুড, বস্ত্র, হোম টেক্সটাইল, কৃষিপণ্য এবং প্রকৌশল সামগ্রী আমদানি করতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী তার এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউএই সফরের কথা স্মরণ করে বলেন, সেই সফরকালে আমরা ইউএই’র পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছিলাম। ইউএই’র সংস্থা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও সৌরশক্তিসহ জ্বালানি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল।’ তিনি বলেন, এমিরেটস ইকোনমিক জোন একটি টেকসই অর্থনৈতিক অঞ্চল, হালাল খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিট এবং সার্টিফিকেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে চায়। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনীতির মূল ভিত যেহেতু কৃষিনির্ভর তাই আমরা এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও ইউএই’র মধ্যে বহুমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। যেটা একমাত্র বাংলাদেশের জনশক্তির ইউএই’তে রফতানির একমাত্রিক সম্পর্কে পরিবর্তিত হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিগুলোর একটি। বাংলাদেশের দ্রুত শিল্পায়নের জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউএই’র সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্কিত সহযোগিতা আমাদের শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে ব্যাপকভাবে সহযোগিতা করবে।

অনুষ্ঠানে রিলাম ইনভেস্টমেন্টের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুলতান আল রাশেদ লোটাহ্, এমিরেট ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডি আবদুল্লাহ আল কাশিম ও মালাবার গোল্ডের এমডি (ইন্টারন্যাশনাল অপারেশন্স) শামলাল আহামেদসহ আরও অনেক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরছেন আজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার চার দিনের সরকারি সফর শেষে আজ রাতে দেশে ফিরবেন। তিনি দুবাই এয়ার শো-২০১৯ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে যোগদান করতে এ সফরে যান।

বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী এবং দুবাইয়ের শাসক মোহাম্মদ বিন রশিদ আল মাকতুমের আমন্ত্রণে উপসাগরীয় এই দেশ সফর করেন।

প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী আমিরাত ফ্লাইটের একটি বিমানে দুবাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে। বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইটটি পৌঁছানোর কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১৭ নভেম্বর বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ও সফল এয়ার শো এবং মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া ও আফ্রিকার বৃহত্তম এয়ারোস্পেস ইভেন্ট দুবাই এয়ার শো-২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

দুবাই এয়ার শোর ফাঁকে আবুধাবির যুবরাজ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি সুপ্রিম কমান্ডার শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর