৬৭ ধাপ উন্নতি অলরাউন্ডার নাসিরের

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের মাইকেল বেভান, ফিল্ডিংয়েও জন্টি রোডস। বছর খানেক আগেও নাসির হোসেনের পরিচয়টা ছিল এমনই। এর সঙ্গে যোগ করা যেত তাঁর কালে ভদ্রের অফ স্পিন। সেই নাসিরই এখন হয়ে উঠছেন পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার। যেন তেন কেউ নন, বিশ্বের ১৪তম সেরা অলরাউন্ডার এখন নাসির। ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিং সেটাই বলছে। এ বছর রীতিমতো ৬৭ ধাপ লাফিয়ে দ্রুতই সেরা দশের কাছাকাছি উঠে এসেছেন নাসির।
তাঁর রেটিং পয়েন্ট এখন ২৩৭। আর মাত্র ১৪ রেটিং পয়েন্ট হলেই পেরিয়ে যাবেন দশে থাকা পল স্টার্লিংকেও (রেটিং ২৫০)। আফসোস, বাংলাদেশকে পরবর্তী ওয়ানডে খেলতে খুব সম্ভবত প্রায় এক বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে। না হলে শিগগিরই হয়তো সাকিবের পর আরও একজন বাংলাদেশিকে পাওয়া যেত অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ের সেরা দশে। নাসিরের উত্থানটা তো সে কথাই বলছে।
মার্চে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড ম্যাচেই বাংলাদেশের জার্সিতে এ বছর প্রথম মাঠে নামা নাসিরের। সে সময় অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে তাঁর অবস্থান ছিল ৮১। বছর না ঘুরতেই অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে নাসির এখন ১৪তে!
এ উল্লম্ফনের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান নাসিরের পার্টটাইমার থেকে প্রায় নিয়মিত বোলার হয়ে ওঠা। ফিল্ডিংটা সব সময়ই ক্ষুরধার, ব্যাটিংটা এখনো তাঁর মূল শক্তির জায়গা। সঙ্গে ২০১৫ সালে নাসির ধার বাড়িয়ে নিয়েছেন বোলিংয়েও। এ বছর বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে খেলেছেন ১৫টি, বল হাতে নিয়েছেন সবগুলোতেই। কিপ্টে বোলিং তো আছেই, বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল বছরটিতে অন্যতম অর্জন মনে হয় নাসিরের মতো ‘গোল্ডেন আর্ম’ পাওয়াও। ক্যারিয়ারের ১৯ উইকেটের ১৬টিই এসেছে এ বছর, এর বেশির ভাগই এসেছে দলের প্রয়োজনের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু হিসেবে।
দলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাসিরও নিজের পারফরম্যান্সের গ্রাফ নিয়ে গেছেন উঁচু থেকে আরও উঁচুতে। বিশ্বকাপে মাত্র ৩টি ম্যাচেই খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। এর মধ্যে স্কটল্যান্ডের সঙ্গে ৬ উইকেটের জয়ের ম্যাচে তো ব্যাট হাতে নামারই সুযোগই পাননি। তবে ওই ম্যাচেই প্রথম দেখা দিয়েছিলেন ‘গোল্ডেন আর্ম’ নাসির। তিনি সেঞ্চুরিয়ান কাইল কোয়েটজার ও শেষ দিকে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা প্রেস্টন মমসেনকে অফ স্পিনে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। বিশ্বকাপের পর অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে একটু উঠে গেলেন ৮১ থেকে চলে এলেন ৬৮’তে।
তখন থেকেই ব্যাটিং লাইন আপে এক রকম দর্শক হয়ে থাকতে হয়েছে টপ ও মিডল অর্ডারে সবাই দারুণ খেলছিল বলে। তবে কৃপণ বোলিং, সঙ্গে নিয়মিত উইকেট নিয়ে কিছু হলেও পুষিয়ে দিচ্ছিলেন। পাকিস্তান সিরিজের পর অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে ২০ ধাপ এগিয়ে চলে এলেন ৪৮-এ।
ভারত সিরিজে ‘একটু’ বেশি ব্যাটিংয়ের সুযোগ আসল। সিরিজের প্রথম ও তৃতীয় ওয়ানডেতে নাসিরের ব্যাট থেকে আসে ৩৪ ও ৩২। দ্বিতীয় যে ওয়ানডেতে ব্যাট করতে পারেননি, তাতে আবার বোলিংয়ে দুই উইকেট। আবারও অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে ২০ ধাপ এগোনো। সিরিজ শেষে নাসিরের অবস্থান ২৮।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে তামিম-সৌম্যর দাপটে আবারও তিন ম্যাচের দুটিতে ব্যাট করার সুযোগ পেলেন না। ব্যাটিংয়ে প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়ে করলেন ৩১ রান। আর বল হাতে প্রথম দুই ওয়ানডেতে আসল ৪ উইকেট। সিরিজ শেষ অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিং ১৯।
বাংলাদেশ দলের সাফল্যের বর্ষপূর্তি সিরিজটা একটু মিশ্রই কাটল নাসিরের। তিন ওয়ানডের দুটিতেই ০ রানে আউট। বাকিটিতে করলেন ৪১। বল হাতে অবশ্য বছরের ধারাবাহিকতাটা ধরে রাখলেন ৪ উইকেট নিয়ে।
এদিকে হঠাৎ করে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিংয়ের বিজ্ঞাপন তো তিনিই। বিশ্বকাপসহ বাকি চার সিরিজ মিলিয়ে ১৫ ম্যাচে মোট ক্যাচ নিয়েছেন ১৪টি।
ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—সব মিলিয়েই ‘প্যাকেজ’ নাসিরের অলরাউন্ডার র‍্যাঙ্কিংয়ে এই উন্নতি। এটা অব্যাহত থাকলে শীর্ষ দশে আরও একজন বাংলাদেশিকে দেখা যাবে শিগগিরই। সূত্র: আইসিসি, ক্রিকইনফো।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর