হেমন্তের সময়ে প্রকৃতিতে ফোটে রঙের বাহারি ফুলের ডালা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সবুজ পাতার খামের ভেতর হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে কোন পাথারের ওপার থেকে আনল ডেকে হেমন্তকে?

বাংলা আশ্বিন মাসকে বিদায় দিয়ে কুহেলিকা হিম হিম বাতাসে প্রবাহিত হয়ে পুরো শহর-গ্রামজুড়ে ছেয়ে যাচ্ছে হেমন্ত। নিস্তব্ধ প্রকৃতি পেখম মেলে জানান দিচ্ছে ঋতুকন্যার। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম কবি সুফিয়া কামালের রচিত ‘হেমন্ত’ কবিতায় হেমন্ত ঋতু স্থান করে নিয়েছে। সর্বদাই এ ঋতুর ফুলবাহার প্রকৃতির অন্যান্য সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি নিজস্ব আমেজ ধরে রাখে এবং ডালি সাজিয়ে গোটা প্রকৃতিকে অপরূপ রূপের অধিকারিণী করে রাখে। নিজেই নিজের রূপ অহঙ্কারে হয়ে ওঠে ঋতুর আদুরে কন্যা।

বাংলা সাহিত্যের কবি সাহিত্যিকরা হেমন্তকে নিয়ে নানা গদ্য সাহিত্য, শিশুতোষ ছড়া, কবিতা ও গান রচনা করেছেন। শরতের নীল আকাশের পেঁজা পেঁজা মেঘের বাণীর বিদায় জানিয়ে সব প্রকৃতিজুড়ে হেমন্তিকার আগমনকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যচরণ হয়ে উঠেছে সমৃদ্ধ ও মুখরিত।

শীতকে স্বাগত জানানো মিষ্টি তনয়া হেমন্ত কয়েক মুহূর্ত পরেই শাসন করছে বাংলার প্রকৃতিতে। কোমল রোদের ছোঁয়া আর নরম নরম গন্ধে আকাশজুড়ে টুকরো টুকরো মেঘের ওড়াউড়ি। রাত শেষে শিশির ভেজা ভোরে নিস্তব্ধ প্রকৃতিতে সূর্র্যে সবুজ আলোর ঝিলিক নিয়ে হেমন্ত মানুষের মনে প্রশান্তি এনে দিতে হয়ে উঠবে বদ্ধপরিকর। শশব্যস্ত কৃষকের ধান কাটা, কৃষাণীর মুখের হাসি আর শহর-গ্রাম ছেয়ে ধোঁয়াশার আবির্ভাব জানিয়ে হাজির হবে বছরের নতুন হেমন্ত।

অপরাজিতা, ছাতিম, গন্ধরাজ, হাসনা হেনা, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, মধুমঞ্জরি, দেবকাঞ্চন, বকফুল ও রাজ অশোক এ ফুলগুলো হেমন্তের উল্লেখযোগ্য পরিচয় বহন করে। এগুলো ছাড়াও আমাদের গ্রাম বাংলার বনে-বাদারে, ঝোপে-ঝাড়ে কত-ই-না বিচিত্র সব লতাগুলোর ভেতরে ফুটে থাকে জানা-অজানা ফুল। শুভ্র রঙিন পুষ্প মঞ্জরির পাশাপাশি সাদা, নীল, সবুজ কিংবা লাল রঙের পাতাবাহারের বিন্যাসও নজর কাড়ার মতো।

রূপে গুণে অপরূপা অপরাজিতা। এ সময়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেয়া এ ফুল প্রকৃতির মাঝে রঙের পেখম মেলে বসে। শিশির ভেজা শুভ্র শিউলি ফুলের গোপন ব্যথা ঝরে পড়ে ভোরের আলো জ্বেলে ওঠার আগেই। দিনের আলোতে উজ্জ্বলতা হারিয়ে সন্ধ্যার বাতাসে সুবাস ছড়িয়ে মাতাল করে তোলে পথিককে। গভীর রাতের ফুল ছাতিম। এর পাগল করা গন্ধে মন ভরে ওঠে। এ ঋতুর আরেক ফুল কাঞ্চন। রকম ফেরে ভিন্ন হলেও সব কাঞ্চনই মনোমুগ্ধকর। নাম শুনেই মন প্রাণ জুড়িয়ে যায়। চারদিকে তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে দিয়ে এ সময় ফোটে দেব কাঞ্চনের হালকা বেগুনি বা সাদা ফুল। রক্ত কাঞ্চন এবং সাদা কাঞ্চনের সৌন্দর্যের গড়নেও চোখ ফেরানো দায়। পথের এ-ধারে ও-ধারে আকন্দ ফুলের ঝাড়। এই ফুলের মোলায়েম পাতা ভেষজপাতি হিসেবে উপাদেয়কারী। প্রকৃতির মাঝে ঘাপটি মেরে থাকা মল্লিকা, হিমঝুরি আর অশোক আড়মোড়া ভেঙে এই ঋতুতেই জানান দেয় তাদের রূপের, সৌন্দর্যের ও গন্ধের। এছাড়াও আরও কত ঘাসজাতীয় বা বনজ ফুল হেমন্তে সুবাস ছড়ায়। এ ঋতুতেই বাহারি রঙের পাতাবাহার মেলে ধরে তাদের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য।

হৈমন্তিক এই ফুলগুলো বাজারে তেমন পাওয়া না গেলেও বাণিজ্যিকভাবে গাঁদা ও গোলাপ পাওয়া যায় সব সময়ই। ঋতুর এ বিচিত্র ফুলগুলো পুষ্প বিপণিতে কোনো কোনো বিক্রেতা সংগ্রহ করলেও তা অধিক মূল্যে বেচা- কেনা হয়ে থাকে। তবে, হেমন্তের অন্যতম ফুল গাঁদা। এটি কয়েক মাস গড়িয়ে শীতকালেও পাওয়া যায়। শহরের সকালের ফুলের বাজারে অন্যান্য হেমন্তের ফুলের চেয়ে গাঁদা ফুলের সরবরাহ বেশি থাকার কারণে শহরবাসী বিয়ে, জন্মদিন ও নানা উৎসবে ব্যবহার করে থাকে এ ফুলগুলো। রমণীদের খোঁপায় ও হাতে গাঁদা ফুল সজ্জিত রূপ ছোট বড় সবার কাছেও বেশ গ্রহণযোগ্য। তাই, দোকানিরা সংগ্রহে রাখে বারো মাসি নানা গোলাপ আর হেমন্তের হলুদ গাঁদা।

ফুল ভালোবাসে না, এমন মানুষ জগতে খুঁজে পাওয়া ভার। ফুলের প্রতি নমনীয়তা, প্রসন্নতা ও প্রীতি সবারই কম বা বেশি থাকে। তাই, ফুল সব সময়ই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য। ফুল বাগিচার সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি বাড়িসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নান্দনিকতার পরিচয় বহন করে ফুল। ঘরের ড্রইংরুমে কিংবা লিভিংরুমে কিছু ফুল ফুলদানিতে রেখে দিলে মনের স্বাভাবিকতা ও স্বাচ্ছন্দ্য বজায় থাকে। এমনকি অফিসেও হতে পারে শোভা বর্ধনের বিশেষ উপকরণ হেমন্তের বাহারি ফুল।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর