সান্তাহার জংশন স্টেশন বছরে ১৩ কোটি টাকা আয় হলেও ছাউনি বিহীন প্লাটফর্ম

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের উত্তরাঞ্চল ও বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন বলা হয় সান্তাহার স্টেশনকে। কিন্তু এ স্টেশনে আয় থাকলেও সেবার মান নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এ স্টেশন থেকে আয় হয়েছে প্রায় ১৩ কোটি টাকা। এতো টাকা আয় হলেও স্টেশনটির ৫ নম্বর প্লাটফর্ম বৃটিশ আমল থেকে রয়েছে ছাউনি বিহীন।

এদিকে, কাগজ কলমে ৫ নম্বর প্লাটফর্ম থাকলেও আজ পর্যন্ত বাস্তবে তার দেখা মিলেনি। তাছাড়া বাঁকি ৪টি প্লাটফর্মের ছাউনি দিয়ে বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। ফুট ওভারব্রিজটিও রয়েছে জরাজীর্ণ ভাবে। সাম্প্রতি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ব্রিজটি সংস্কার করা হলেও ৬মাস হতে না হতেই ভেঙে পড়ছে সিড়িগুলো।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় লোকাল ও মেইল ট্রেন ছেড়ে দেয়ার পরেও শুধু আন্তঃনগর ট্রেন থেকে গত জুন ২০১৮ থেকে মে ২০১৯ পর্যন্ত সান্তাহার রেল স্টেশন থেকে আয় হয়েছে ১২ কোটি ৯৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫৭ টাকা। এতো টাকা আয়ের পর ও উন্নয়নের ছোয়া কেন লাগেনি স্টেশনে।  যাত্রীসেবার মান নিয়েও রয়েছে নানা প্রশ্ন।

সরেজমিন সান্তাহার জংশন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, বৃটিশ আমলের চুন সুরকি দ্বারা নির্মিত সান্তাহার জংশন স্টেশনটি প্রথম শ্রেণীর হলেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি আজ অবদি।

সান্তাহার-লালমনিহাট এবং সান্তাহার-বোনারপাড়া লাইনে চলাচলকারী যাত্রীরা ৫নম্বর প্লাটফর্ম ব্যবহার করে জেলা শহর বগুড়াসহ বিভিন্ন স্টেশনে যাতায়াত করে। শুধুমাত্র বগুড়া জেলা সদরে চাকরিজীবী, আইনজীবী, ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ীসহ শত শত যাত্রী সান্তাহার স্টেশন থেকে যাতায়াত করে। শুরু থেকেই এই প্লাটফর্মের সেড না থাকায় যাত্রীদের রোদে পুড়ে-বৃষ্টিতে ভিজে ট্রেনে উঠানামা করতে হচ্ছে। বৃষ্টি শুরু হলেই যাত্রীদের ৪নম্বর প্লাটফর্মে অবস্থান করতে হয়। ট্রেন এলে হুড়োহুড়ি করে ট্রেনে উঠতে গিয়ে আহত হচ্ছেন অনেক যাত্রী।

একাধিক যাত্রী জানায়, সময় মতো বগুড়ায় পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার অসংখ্য ট্রেন যাত্রী ভোরের পদ্মরাগ ট্রেনে সান্তাহার স্টেশন থেকে বগুড়ায় যায়। এই স্টেশনের ৫নম্বর প্লাটফর্ম সম্পূর্ন ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় দুর্ভোগ নিয়ে চলাচল করতে হয়।

যাত্রীরা অভিযোগ করেন, প্লাটফর্মটি সংস্কার না করায় এখানকার ইট খোয়া উঠে গিয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে অনেক আগেই। প্লাটফর্ম আছে এমন কোন প্রমান পাওয়া দুস্কর।

অন্যদিকে, প্লাটফর্মে আলোর ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুল। যে কারনে মেয়েরা ও সান্তাহারের বাহিরের যাত্রীরা রাতে অত্যন্ত ভয়-ভীতির মধ্য দিয়ে ট্রেনে যাতায়াত করে। অন্ধকারে ঘটছে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা।

এছাড়াও মিটার গেজ লাইনে হাজার হাজার যাত্রী চলাচল করলেও যাত্রীদের জন্য বসার কোন ব্যবস্থা নেই। ট্রেন যাত্রীদেরকে দীর্ঘ সময় ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে ৪নম্বর প্লাটফর্মে অপেক্ষা করতে হয়।

৪নম্বর প্লাটফর্মের দক্ষিণ পার্শ্বে পানি নিষ্কাশনের জন্য ম্যানহলের ঢাকনাগুলো ভাঙা থাকায় ট্রেন যাত্রীরা তারাহুরো করে ট্রেনে উঠতে গিয়ে হোচট খেয়ে পড়ে যায় অনেক সময়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রেলওয়ে কর্মচারী বলেন, রেলওয়ে একটি সেবামুলক প্রতিষ্ঠান। রেলওয়ের প্রধান কাজ যাত্রীদের শতভাগ সেবা নিশ্চিত করা। কিন্তু রেলওয়ের কর্তা ব্যক্তিদের অবহেলা এবং কিছু দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারনে রেলওয়ে সেবামুলক প্রতিষ্ঠান এ কথা বলতে লজ্জা পেতে হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রিটিশ আমলে নির্মিত স্টেশনটির ১ ও ২ নম্বর প্লাটফর্মে একটি পানির টিউবওয়েল ছিল সেটিও বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ৩, ৪ ও ৫ নম্বর প্লাটফর্ম মিলে একটি পানির ট্যাপ রয়েছে। তাতেও অনেক সময় পানি পাওয়া যায় না। পানি পানের জন্য যাত্রীদের ভরসা প্লাটফর্মে অবস্থিত টি-স্টলগুলো।

রেলওয়ে সূত্র বলছে, ঐতিহ্যবাহী এই জংশন স্টেশনটির ওপর দিয়ে প্রতিদিন ৩৯টি ট্রেন চলাচল করছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, যাত্রীদের জন্য প্রথম শ্রেণীর একটি, শোভন শ্রেণীর একটি ও দ্বিতীয় শ্রেণীর একটি বিশ্রামাগার রয়েছে। তিনটি বিশ্রামাগারের জন্য ছয়জন আয়া থাকার কথা থাকলেও লোকবল সঙ্কটের কারণে মাত্র একজন আয়া দিয়ে এসব বিশ্রামাগার পরিচালনা করা হচ্ছে। ফলে ওই আয়ার অফিস সময় শেষ হলে বন্ধ থাকছে এসব বিশ্রামাগার।

এ ছাড়া পাঁচটি প্লাটফর্ম মিলে মাত্র আটটি সিমেন্টের চেয়ারের মাধ্যমে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা যাত্রীদের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।

অপর দিকে ব্রিটিশ আমলের তৈরি প্লাটফর্মটি ছোট হওয়ায় এবং আন্তঃনগর ট্রেনের কোচ (বগি) বৃদ্ধি করায় ট্রেনগুলো প্লাটফর্মে দাঁড়ালেও ট্রেনের পেছনের দুই-তিনটি কোচ বাইরে থেকে যায়। ফলে যাত্রীদের উঠানামা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে।

সান্তাহার স্টেশন মাস্টার গ্রেড-১ রেজাউল করিম ডালিম বলেন, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথম শ্রেণীর জংশন স্টেশন। এ স্টেশনে একজন সুপারিন্টেন্ড দেয়া একান্ত প্রয়োজন। এ ছাড়াও যাত্রীদের উঠানামার জন্য পাঁচটি প্লাটফর্ম বর্ধিত করাসহ পুরো প্লাটফর্মে টিনশেড দেয়ার জন্য জেনারেল ম্যানেজার খায়রুল আলম ও প্রধান প্রকৌশলী পশ্চিম রাজশাহী জোনাল রমজান আলীর কাছে লিখিত আবেদন করা হয়েছে।

রেজাউল করিম ডালিম আরো জানান, ৫ নম্বর প্লাটফর্ম উচু করা ও ছাউনির ব্যাবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা পরিদর্শন করে ব্যাবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর