স্কুলছাত্র রিয়াদ হত্যা: চাচার পরিবারের ৪ আসামি গ্রেফতার

রাজধানীর উত্তরখান বালুরমাঠ এলাকায় চাচাতো ভাইয়ের ছুরিকাঘাতে রিয়াদ হোসেন সাগর (১৬) হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তার চাচার পরিবারের চারজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

গ্রেফতাররা হলেন, রিয়াদের চাচাত ভাই আসাদুজ্জামান স্বপন, চাচা জজ মিয়া, চাচী সাবিনা আকতার ও চাচাতো বোন তানজিয়া আকতার শিখা।

তাদের গ্রেফতার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উত্তরখান থানার ওসি হেলাল উদ্দিন।

তিনি বলেন, সোর্স থেকে খবর পাই, সিলেটের জৈন্তাপুরের একটি বাসায় উঠেছে মামলার প্রধান আসামি স্বপনের পরিবার। খবর পাওয়া মাত্র সেই বাসায় মধ্যরাতে অভিযান চালায় সিলেট পুলিশ। সেখানে তাদের পাওয়া যায়নি। এরপর আমরা আবার তথ্য পাই আসামিরা সব জৈন্তাপুর এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। তথ্য পাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে পুলিশ ভোরের দিকে সেই হোটেলে অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেতার করে ।

ওসি হেলাল উদ্দিন বলেন, এ চার আসামি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টায় ছিল। তবে পুলিশের তৎপরতায় সে চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে তাদের।

রিয়াদের খালা হাসনা আকতারসহ এ হত্যাকাণ্ডের ৮ আসামির মধ্যে প্রধান সন্দেহভাজনসহ এখন পর্যন্ত ৫জনকে গ্রেফতার করা গেছে বলে জানান ওসি হেলাল উদ্দিন।

মামলার বাকি তিন আসামির নাম – আইনুদ্দিন, মো. আমীন ও আফসানা।

ওসি বলেন, গ্রেফতার হওয়া সবাই মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। পলাতক বাকি তিনজনকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এরা সবাই নিহত রিয়াদের আত্মীয়।

গত সোমবার রাতে উত্তরখানের মধ্যপাড়া তালতলা মিয়াবাড়িতে নিজেদের বাসার সামনে ছুরিকাঘাতে আহত হয় রিয়াদ হোসেন সাগর (১৫) ও তার বড় ভাই রিজন (১৮)।

ছুরিকাঘাতের ঘটনার পর মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় রিয়াদ। সে স্থানীয় আনোয়ারা মডেল ট্রাস্ট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

এই ঘটনায় রিয়াদের চাচাত ভাই স্বপনসহ আটজনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন রিয়াদের বাবা মো. রাজু মিয়া।

রিয়াদের বাবা রাজু মিয়া যুগান্তরকে বলেন, আমার আপন বড় ভাই জজ মিয়ার সঙ্গে জমিজমা নিয়ে পূর্ব বিরোধ ছিল। তার কাছে আমরা ১৩ লাখ টাকা পাই। সেই টাকা তিনি দিচ্ছিলেন না। এই টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় বাসার সামনে কথা কাটাকাটি হয়। এ সময় জজ মিয়ার ছেলে আসাদুজ্জামান স্বপন এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করতে থাকে। এতে রিয়াদের পেট ও পাঁজরে আঘাত লাগে। ছুরিকাঘাতে আমার অপর দুই ছেলে সিহাব ও রিজনও আহত হয়।

তাদের প্রথমে টঙ্গী হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। রিয়াদ মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

ঘটনার দিন রিয়াদের ঘাতক ও তার চাচাতো ভাই আসাদুজ্জামান স্বপনকে (২৮) আটকের পরও উত্তরখান থানার এসআই ইশতিয়াক হোসেন ছেড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন রিয়াদের স্বজনরা।

রাজু মিয়া অভিযোগ করে বলেছিলেন, উত্তরখান থানার এসআই ইশতিয়াক হোসেন আসাদুজ্জামান স্বপনকে রাতে আটক করলেও পরে ছেড়ে দেন। কেন ছেড়ে দিলেন, জানতে চাইলে তিনি আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এসআই ঘাতকের পক্ষ নিয়ে আমাদের গালিগালাজও করেন। রিয়াদের মামা মোমেন হোসেনও একই অভিযোগ করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে উত্তরখান থানার এসআই ইশতিয়াক হোসেনের মোবাইলে একাধিকবার ফোন ও এসএমএস করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি, এসএমএসের উত্তরও দেননি।

শুক্রবার সেই প্রধান সন্দেহভাজন ঘাতককে ৩ আসামিসহ জৈন্তাপুর থেকে গ্রেফতার করল পুলিশ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর