পদপ্রত্যাশীরা ‘আতশ কাচের’ নিচে

এসকে রেজা পারভেজ: প্রায় নয় বছর পর কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন হতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের অন্যতম সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের। সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটির সম্মেলন হতে যাচ্ছে ১৩ বছর পর। নেতৃত্বের পালাবদলের এই সম্মেলন ঘিরে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত-উৎফুল্ল।

কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে নিজেদের মেলে ধরতে নেতাকর্মীদের কাছে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। তবে এবার যারা পদপ্রত্যাশী, তাদের প্রত্যেকের কর্মকাণ্ড আতশ কাচের নিচে থাকছে। অর্থাৎ দুর্নাম আছে এমন নেতারা ছিটকে পড়বেন। তবে নেতাকর্মীরা চান, এবার যেমন ১৪ বছর পর হচ্ছে সম্মেলন, ভবিষ্যতে যেন এর পুনরাবৃত্তি না ঘটে। অর্থাৎ মেয়াদ শেষ হলে নতুন সম্মেলন চান তারা। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, দীর্ঘ সময় পর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি হওয়ায় অনেক সম্ভাবনাময় নেতৃত্ব যোগ্য পদ বঞ্চিত হচ্ছেন। এবারের কাউন্সিলে মধ্য দিয়ে সৎ ও যোগ্য ত্যাগী নেতারাই যুবলীগের নেতৃত্বে আসবেন বলে জল্পনা-কল্পনা চলছে তৃণমূলে।

আগামী ১৬ নভেম্বর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ১১ ও ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সম্মেলন।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে, দুর্নীতির সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাদের নাম আসায় এবার অঙ্গ সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্ব আনার প্রক্রিয়া খুব বিচার বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে যাবে। দলের সভাপতি শেখ হাসিনা সাবেক নেতাদের নিয়ে সম্ভাব্য নেতাদের ভাগ্য নির্ধারণ করবেন। স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ পদে যারা আসতে চান শিগগিরই তাদের বায়োডাটা জমা দিতে বলা হবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। এরপর শুরু হবে অতীতের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ। রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে কোনো প্রকার নেতিবাচক দাগ থাকলে অযোগ্য হিসেবে বাদ হবেন আগেই। অতীতে এসব বিষয় বিবেচনায় থাকলেও এবার সেই প্রক্রিয়া হবে খুবই তীক্ষ্ণ।

পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের লড়াইয়ে আছেন অন্তত এক ডজনেরও বেশি নেতা। তারা নিজেরাও চান সংগঠনের নেতৃত্বের গুরু দায়িত্ব যে-ই পান, তিনি যেন স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আর সাংগঠনিক দক্ষ হন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর কমিটিতে পদের লড়াইয়ে আছেন সংগঠনটির বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল হাসান জুয়েল, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ সোহেল রানা টিপু, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ শাকিব বাদশা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং দক্ষিণ  ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর ফারুক, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জাসান রানা, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সভাপতি ইসহাক মিয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ।

খায়রুল হাসান জুয়েল রাইজিংবিডিকে বলেন, ভবিষ্যতে যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব সংগঠনের ভাবমূর্তি ফেরানো। সেজন্য সাংগঠনিকভাবে দক্ষ এবং যাদের নামের পাশে ‘পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ’ ইমেজ আছে সেসব নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়া দরকার।

শেখ সোহেল রানা টিপু রাইজিংবিডিকে বলেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগে নেতৃত্ব পাওয়া প্রধান মানদণ্ড হোক ক্লিন ইমেজ, ত্যাগী মনোভাব, সাংগঠনিক দক্ষতা সম্পন্ন নেতা। আমরা আশা করি, এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়েই এবারের কমিটি হবে।

কামরুল হাসান রিপন রাইজিংবিডিকে বলেন, দলের দুঃসময়ে যারা দলের জন্য কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন, আন্দোলন করেছেন, সংগঠনকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশারী করতে ভূমিকা রেখেছেন- তারা নেতৃত্ব আসুক। এতে সংগঠন যেমন শক্তি হবে তেমনি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতও শক্তিশালী হবে।

তারিক সাঈদ বলেন, দীর্ঘদিন পর সম্মেলন হওয়ায় আমাদের প্রিয় নেত্রীকে স্বাগত জানাই। যারা দুঃসময়ে দলের পাশে থেকে কাজ করেছেন, রাজপথে থেকেছেন তারাই যেন নেতৃত্বে আসে এই প্রত্যাশা আমার।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোনো ধরনের চাঁদাবাজি, ক্যাসিনো ব্যবসাসহ খারাপ কিছুর সঙ্গে জড়িত নেই এমন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতা স্বেচ্ছাসেবক লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পাক।

আনিসুজ্জামান রানা বলেন, স্বচ্ছ ও ক্লিন ইমেজের নেতারা দায়িত্ব পাক এটাই আমাদের চাওয়া।

২০১২ সালে ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পান মোল্লা আবু কাওছার। আর সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ।

সংগঠনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সর্বশেষ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল ২০০৬ সালের ৩১ মে। সেই সম্মেলনে উত্তরের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন মোবাশ্বের চৌধুরী আর সম্পাদক হয়েছিলেন ফরিদুর রহমান খান। আর স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন দেবাশীষ বিশ্বাস। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন আরিফুর রহমান টিটু। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় ১১ বছর।

১৯৯৪ সালের ২৭ জুলাই ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে আওয়ামী লীগের অন‌্যতম সহযোগী সংগঠন এটি।

রাইজিংবিডি ডট কম

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর