বহুত্ববাদী ভারতকে বোঝার প্রসারতা নেই মোদির

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ভারতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে উপায় নেই। মানুষ ভয়ে আছেন। এটা আগে কখনো দেখিনি। আমার সঙ্গে ফোনেও সরকারের সমালোচনার প্রসঙ্গ উঠলে অনেকে বলছেন, থাক, দেখা হলে বলব। আমি নিশ্চিত ওরা আমাদের কথা শুনছে। এটা গণতন্ত্রের পন্থা নয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ কী চান, সেটা বোঝারও পথ নয় এটা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করে অমর্ত্য সেন বলেছেন, বহু ধর্ম ও বহু জাতির দেশ ভারতকে বোঝার মতো মনের প্রসারতাই নেই মোদির।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতে গণতন্ত্রের অবস্থা নিয়ে ফের উদ্বেগ প্রকাশ করে এসব কথা বলেন অমর্ত্য সেন। এ সময় জন স্টুয়ার্ট মিলের বক্তব্যের উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা তার কাছ থেকে জেনেছি, গণতন্ত্র মানে আলোচনার ভিত্তিতে চলা সরকার। ভোট যেভাবেই গোনো, আলোচনাকে ভয়ের বস্তু করে তুললে তুমি গণতন্ত্র পাবে না। ভারতে এখন কট্টর হিন্দুত্বের দাপট চলছে।

নোবেলজয়ী এ বাঙালি অর্থনীতিবিদ বলেন, সরকার যদি বিরুদ্ধে থাকে, তবে সরকারি শুধু নয়, সম্ভবত অনেক বেসরকারি বিজ্ঞাপনও পায় না সংবাদমাধ্যম। ফলে স্বাধীন সংবাদপত্র বা সংবাদ চ্যানেল পাওয়াই দুষ্কর। সব কিছুই হারিয়ে যায়নি। এখনো সাহসী কয়েকটি সংবাদপত্র আছে, যারা ঝুঁকি নিয়ে কিছু ছাপতে ভয় পায় না। দু’একটি টিভি চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনও আছে। প্রকাশ্য সভাও হচ্ছে কিছু। ভারতের কাঠামো যুক্তরাষ্ট্রীয়। বেশ কটি রাজ্যে বিজেপিই একমাত্র প্রভাবশালী শক্তি নয়।

স্মৃতি রোমন্থন করে অমর্ত্য সেন বলেন, ছেলেবেলাতেও খুব খারাপ সময় দেখেছি। দেখেছি, কাকাদের সবাইকে জেলে আটকে রাখা হয়েছে। নয় বছর বয়সে দেখেছি মন্বন্তর। তিন লাখ মানুষ যাতে মারা যান। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখেছি। মুসলিম দিনমজুরকে কুপিয়ে খুন করেছে আমারই পাড়ার কিছু হিন্দু ধর্মাবলম্বী। আমি তখন দশ কি এগারো বছরের। বাগানে খেলছিলাম। দেখি, রক্তাক্ত অবস্থায় ছুটে আসছেন একজন।

চিৎকার করে বাবাকে ডাকলাম। জল খেতে দিলাম। এত রক্ত কখনো দেখিনি। আমার কোলে মাথা, স্পষ্ট বলেছিলেন- বিবি বলেছিল হিন্দু এলাকায় কাজ কর না। কিন্তু বাচ্চারা না-খেয়ে আছে। কিছু তো রোজগার করতেই হবে। বাবা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলেন। পুলিশকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু হিন্দু এলাকার পুলিশ কিছু করতে রাজি হয়নি। আবার অনেক বড় বড় সমস্যা মিটে যেতেও দেখেছি। তবে তার অর্থ এই নয় যে, আমি নিশ্চিত। কোনো কিছু সম্পর্কেই আমি নিশ্চিত নই। এর অর্থ এটাও নয় যে, হতাশার পরিস্থিতিতে সব আশা ছেড়ে দিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর