সকাল থেকে ফের উত্তাল বুয়েট

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে বুয়েট। ফাহাদ হত্যার বিচার দাবিতে ফের মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে আন্দোলনে নামে বুয়েট শিক্ষার্থীরা।

চার দফা দাবিতে তারা আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার রাতে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিদে আবরারের জানাজার পর বিক্ষোভ শেষে আন্দোলন করার ঘোষণা দেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সকাল থেকে বিক্ষোভ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ সময় সিসিটিভির ফুটেজ উদ্ধারের দাবিতে প্রভোস্টের অফিস ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে সোমবার রাতে ঢাকা মেডিকেল থেকে আবরার মরদেহ বুয়েট ক্যাম্পাসে আনা হয়। এরপর রাত ১০টার দিকে পরিবারের স্বজন, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহপাঠীদের উপস্থিতিতে বুয়েট কেন্দ্রীয় মসজিতে জানাজা পড়ানো হয়। পরে বুয়েটের অ্যাম্বুলেন্সে স্বজনরা আবরার মরদেহ কুষ্টিয়াতে দাফন করাতে নিয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বুয়েট শিক্ষার্থী জানান, আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে চার দফা দাবি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেছে। দাবিগুলোর মধ্যে- আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, খুনিদের মামলার সকল ব্যয় প্রশাসনকে বহন ও আবরার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান ও বুয়েট শিক্ষার্থীর হত্যার পরও ভিসি কেন ক্যাম্পাসে আসেনি তার কারণ দর্শানোর দাবি তোলা হবে।

এদিকে আবরার ফাহাদকে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগের নয়জন নেতাকে আটক করা হয়েছে। আটককৃত সবাই বুয়েট ছাত্রলীগের পদে আছেন। সোমবার সন্ধ্যায় ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় আটকের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় শনাক্ত নয়জনকে আটক করেছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছি। সেটা পর্যালোচনা করছি।

আটককৃতরা হলেন- বুয়েট শাখা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহসভাপতি মুস্তাকিম ফুয়াদ, সহসম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু, উপ-দফতর সম্পাদক মুজতবা রাফিদ, উপ-সমাজকল্যাণ সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, ক্রীড়া সম্পাদক সেফায়েতুল ইসলাম জিওন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, গ্রন্থ ও গবেষণা সম্পাদক ইশতিয়াক মুন্সি। গোয়েন্দা সংস্থার বক্তব্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগের বুয়েট শাখার গ্রন্থনা ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের ১৫ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইশতিয়াক মুন্নার নির্দেশেই সংঘটিত হয় এই হত্যাকাণ্ড।

আবরারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়।

গতকাল দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে জয় বলেন, ছাত্রলীগ কখনই অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়নি।

বুয়েটের এ ঘটনায় যদি ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী বিন্দুমাত্র জড়িত থাকে, অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানাব, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দ্রুত গ্রেফতার করুন।

আবরার হত্যার প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবি ও বুয়েট। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাবির রাজু ভাস্কর্য থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বুয়েট ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এ সময় ‘বিজেপির দালালরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, আবরার হত্যার ফাঁসি চাই’, ‘ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা, হুঁশিয়ার সাবধান,’ ‘হলে হলে দখলদারিত্ব, বন্ধ কর করতে হবে’, ‘সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব কেন? প্রশাসন জবাব চাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়। বিক্ষোভে অংশ নেন কয়েকজন শিক্ষকও।

একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভ-মিছিলে যোগ দেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর। প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর