মেদ কমাতে বেল্ট ব্যবহার! মৃত্যুর ঝুঁকিতে আপনিও

মেদ বাড়ার ঝামেলা দিন দিন কমার বদলে বেড়েই চলেছে। ডায়েট না মানতে পারার গ্লানি ও শরীরচর্চার অভাবে মেদ বাড়ছে বাধাহীন। আর এর থেকে খুব দ্রুত মুক্তি পেতে কম পরিশ্রমের উপায় খুঁজতে বসেন অনেকে।

সমাধানে অনলাইনে বেল্টের অর্ডার করেন নিশ্চয়! এই ভেবে যে, পরিশ্রম ছাড়াই অল্প দিনে মেদ ঝরিয়ে ফেলবেন। কিন্তু সত্যিই কি কাজ হয় এতে?

চিকিৎসকদের মতে, আসল সত্যিটা জানলে এই ফাঁকিবাজি করে মেদ ঝরানোর আগে অন্তত দুইবার ভাবতে হবে। আসলে মুখরোচক খাবার খেয়ে বেশির ভাগ মানুষই ছোট থেকেই পেটে মেদ ভরে বসে থাকেন। এছাড়া জিনগত ভাবে বাঙালিদের অনেকেরই ভুঁড়ি হওয়ার প্রবণতা বেশি। চেহারা খারাপ লাগা ছাড়াও পেটে মেদ জমার কারণে অনেক অসুখ-বিসুখের শঙ্কা বেড়ে যায়।

তবে শঙ্কা নিয়ে কথা বলতে গেলে বেল্টের কর্মপদ্ধতি জানাটা আগে জরুরি। চওড়া বেল্ট পেটে টাইট করে আটকে নিয়ে বেশি তাপমাত্রার সাহায্যে ঘর্ম গ্রন্থি বা সোয়েট গ্ল্যান্ডের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়া হয়। ফলে ওই অংশে প্রচুর ঘাম হয়। আর এই কারণে কিছুটা হালকা লাগে। সামান্য ছিপছিপে যে লাগে না তাও নয়। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এতটাই বেশি, যা শরীরের পক্ষে মোটেই ভালো নয়।

ভারতীয় পুষ্টিবিদ সুমেধা সিংহের মতে, ‘বাজারে পাওয়া বেশির ভাগ বেল্টে শরীরের মাঝের অংশের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়া হয় একশ পাঁচ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত। এর ফলে ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। ত্বকের র‌্যাশ তো বটেই, এগজিমা বা সোরিয়াসিসের প্রবণতা থাকলে তা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে যাওয়ার কারণে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ওজন কমছে বলে মনে হলেও আসলে ঘাম ঝরার জন্যই একটু ঝরঝরে লাগে মাত্র। আসলে অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে অনেকটা পানি বেরিয়ে যায় বলে ওজন কিছুটা কমলেও তা কিন্তু খুব সাময়িক।’

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুবর্ণ গোস্বামীর মতে, ‘চটজলদি মেদ কমানোর হাতিয়ার বেল্টের আরো অনেক ক্ষতিকর দিক আছে। ফাঙ্গাল ইনফেকশনের পাশাপাশি রক্তচাপ থাকলে তা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেকের হার্টে চাপ পড়ে বুক ধড়ফড় করতে পারে। ১৫ থেকে ২০ মিনিটের বেশি পেটে এই বেল্ট বেঁধে রাখলে পরবর্তীকালে পুরুষদের বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকি বাড়ায়। আসলে স্পার্মের জন্য লাগাতার গরম মোটেও ভালো নয়। এর ফলে একদিকে স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়, অন্যদিকে টেস্টিকুলার টেম্পারেচর বেড়ে যায় বলে স্পার্ম উৎপাদন বরাবরের জন্য ব্যহত হতে পারে। এর দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার প্রস্টেট ও টেস্টিক্যুলার ক্যানসারও ডেকে আনতে পারে।’

আর এক ভুল ধারণা হল, এই বেল্ট ব্যবহারের পরেই কনকনে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করলে নাকি রাতারাতি ওজন কমে যায়। জাপানের ‘সেন্ট মারিয়ানা ইউনির্ভাসিটি স্কুল অব মেডিসিন’-এ প্রকাশিত সমীক্ষা অনুযায়ী, এই কাজটি করে প্রতি বছরই অজস্র অল্পবয়সী ছেলেমেয়ে মারাত্মক জ্বরের শিকার হয়।

ওজন কমাতে বেল্টের ব্যবহার দেশে দেশে এতটাই জনপ্রিয় যে, প্রতিবছর এই ধরনের বেল্ট দিয়ে মেদ কমানোর চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিযোগিতারও আয়োজন করা হয়। ২০১০ সালে রাশিয়ায় আয়োজিত এমনই এক চ্যাম্পিয়নশিপে এক খেলোয়াড়ের মৃত্যুও হয়। তারপর থেকেই বেল্টের ব্যবহারে রাশ টানছে বিশ্বের উন্নততম দেশগুলো।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর