সকালের ৬০ টাকার পেঁয়াজ বিকালে ৯০ টাকা: খাতুনগঞ্জেও পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ   পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ নিয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। তবে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ভারতের ঘোষণার সুযোগ নিয়ে সোমবার থেকে খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ২৫-৩০ টাকা বাড়িয়ে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি করছেন।

খুচরা বাজারে পেঁয়াজের মূল্য ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে।

শনিবার পেঁয়াজের ট্রাক খাতুনগঞ্জে যথারীতি ঢুকলেও রোববার থেকে পেঁয়াজের কোনো ট্রাক খাতুনগঞ্জে ঢোকেনি। এদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন যে হারে পাইকাররা খাতুনগঞ্জে আসছিলেন সোমবার সেই সংখ্যা ছিল অনেক কম। সামনে পেঁয়াজের দাম বাড়বে, না কমে আসবে তা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন খাতুনগঞ্জ ও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশের বাজার ভারতীয় পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল হওয়ার পরও ব্যবসায়ীরা বলছেন, এরই মধ্যে সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন উৎস থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ আসতেও শুরু করেছে।

একটি সূত্র বলছে, খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে সোমবারও ন্যূনতম ১৫০ টন পেঁয়াজ থাকার কথা জানা যায়। আমদানির পাইপলাইনেও আছে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ। এর পরও ভারতের রফতানি বন্ধের ঘোষণা শোনার পরপরই একলাফে কেজিতে ২৫-৩০ টাকা দাম বৃদ্ধি করা নজিরবিহীন এবং অতি মুনাফা লাভের চরম দৃষ্টান্ত।

সোমবার সকালে সরেজমিন খাতুনগঞ্জে গিয়ে ব্যবসায়ী এবং ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির উল্লম্ফন দেখা গেল। রোববার সকালেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ যেখানে ৫৫-৬০ টাকা বিক্রি হচ্ছিল কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিকালেই তা বিক্রি হয় ৮০-৯০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে খাতুনগঞ্জে প্রতিদিন ১৮-২২টি পেঁয়াজের ট্রাক ঢোকে। তবে কয়েকদিন ধরে পেঁঁয়াজের সরবরাহ কম ছিল তুলনামূলক। রোববার থেকে চট্টগ্রামে কোনো পেঁয়াজের ট্রাক ঢোকেনি। বর্তমানে দেশে তাহেরপুরী, বারি-১ (তাহেরপুরী), বারি-২ (রবি মৌসুম), বারি-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরী পেঁয়াজ রয়েছে। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে। দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ২৯ লাখ টন। এর মধ্যে ১৮ লাখ টন স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয়।

ফলে ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্যের ওপরই নির্ভর করে পেঁয়াজের মূল্যের ওঠানামা।

খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ কিনতে আসা খুচরা ব্যবসায়ী কবির হোসেন যুগান্তরকে বলেন, খাতুনগঞ্জে অনেক আড়তদারের কাছে পেঁয়াজ নেই। পাইকারি দামে কিনতে এসেও দরদাম নিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়।

খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস যুগান্তরকে বলেন, আমরা পেঁয়াজ বিক্রি করছি ৮০-৯০ টাকা কেজি দরে। ১৫০ টনের মতো পেঁয়াজ আছে। তবে দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা রোববার বিকালেও তেমন একটা পেঁয়াজ কিনছেন না। পেঁয়াজ নিয়ে একটি অস্থিরতা রয়েছে। আমি বলব, পেঁয়াজকে মসলা হিসেবে ব্যবহার করতে হবে। সবজি হিসেবে নয়। তাহলেই পেঁয়াজের চাহিদা অনেক কমে যাবে।

পেঁয়াজ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও নানা ধরনের সমালোচনা হচ্ছে। রোববার জয়নাল আবেদন জুয়েল নামে এক কলেজছাত্র তার ফেসবুক ওয়ালে পোস্টে লিখেছেন, আপনারা কারও বাড়িতে বেড়াতে গেলে মিষ্টির বদলে পেঁয়াজ নিয়ে যান। এতে দাওয়াতদাতারা খুশি হবেন। দোয়া দেবেন।

খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন যুগান্তরকে জানান, কিছু আমদানিকারক ইতিমধ্যে তুরস্ক, মিসর, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির চিন্তা করছেন। তাই ভারতের সিদ্ধান্তের কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ার কথা না। এখন অপেক্ষা করে দেখি কী হয়। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। ভারত ও মিয়ানমার ছাড়া অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দাম কমে আসবে।

কথা হয় লোহাগাড়া উপজেলার খুচরা পেঁয়াজ ব্যবসায়ী খোরশেদ আলমের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমাদেরকে পাইকারি বাজার থেকেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকায় কিনতে হয়েছে। আমরা ১০০ টাকার নিচে বিক্রি করতে পারছি না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর