নাসার যেসব প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে

মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাপনে এমন কিছু জনপ্রিয় পণ্য আছে, যেসব তৈরির পেছনে আছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার গবেষণা। একবিংশ শতাব্দীতে মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করে তুলতে এসব পণ্যের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

ল্যাপটপ

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে অবস্থিত নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরিতে ল্যাপটপের জন্ম বলা চলে। জিআরআইডি কম্পাসকে সংযোজিত করে শাটল পোর্টেবল অন-বোর্ড কম্পিউটার তৈরি হয় এখান থেকে। সেটিই প্রথম পোর্টেবল ল্যাপটপ।

পরবর্তীতে হার্ডওয়্যারের আরও বেশি উন্নতি ও পরিবর্তন ঘটিয়ে সেই সঙ্গে নতুন সফটওয়্যার তৈরি করে এই ল্যাপটপকে দৈনন্দিন কাজের জন্য উপযুক্ত করে তোলা হয়। কম্পিউটারকে নিয়ে আসা হয় বহনযোগ্য এবং সহজে ব্যবহার যোগ্য। এরপর বাণিজ্যিকভাবে ল্যাপটপ ছড়িয়ে মানুষের হাতে হাতে।

জিপিএস

যে কোনো জায়গার সঠিক দিক নির্দেশনা লাভ করতে পারে ব্যবহার হয় গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস)। শুরুর দিকে জিপিএসের ত্রুটি ছিল ১৫ মিটার অবধি। তখন এটি শুধু সামরিক ক্ষেত্রে ব্যবহার হতো। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে নাসার জেট প্রপালশন ল্যাবরেটরি একটি সফটওয়্যার তৈরি করে। এর ফলে  সেটি জিপিএসের ত্রুটি নেমে এসেছে মাত্র ৫ সেন্টিমিটারে। এখন সহজেই স্মার্টফোনের মাধ্যমে খুব দ্রুত যে কোনো জায়গা খুঁজে নেওয়া সম্ভব।

ডাস্টবাস্টার

যুক্তরাষ্ট্রের সরঞ্জাম নির্মাতা কোম্পানি ব্লাক অ্যান্ড ডেকার ‘স্যানস কেবল’ ড্রিলের বা শক্তি প্রয়োগ সরঞ্জামের উদ্ভাবন করে ১৯৬১ সালে। কোম্পানিটি নাসার সঙ্গে এমন বিশেষ একটি শক্তি প্রয়োগের যন্ত্র তৈরি করে, যা স্যাটেলাইট থেকে মূল নমুনা সংগ্রহ করতে সহায়তা করে।

ইঞ্জিন এবং ব্যাটারির উন্নতি করতে গিয়ে ব্লাক অ্যান্ড ডেকার যেসব প্রযুক্তিগত দক্ষতা অর্জন করে, এর ফলে তারা নতুন বেশ কিছু সরঞ্জাম তৈরি করতে সক্ষম হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম কর্ডলেস ভ্যাকুয়াম ক্লিনার। এটি তৈরি করা হয়েছি ১৯৭৯ সালে। পরের ত্রিশ বছরে এই ধুলা-বালি পরিষ্কারক যন্ত্রটি অন্তত ১৫ কোটি পিস বিক্রি হয়েছে।

ইনসুলিন

ডায়াবেটিস রোগীরা যে প্রতিদিন ইনসুলিন ব্যবহার করে সেটি কিন্তু নাসারই অবদান। মূলত নভোচারীদের স্বাস্থ্য দেখভাল করতে এবং তাদের রক্তে শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণের জন্য ইনসুলিন আবিষ্কার করা হয়। ৭০ এর দশকে নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারে পরিচালিত মঙ্গল অভিযানের সময় ইনসুলিনের আবিষ্কার। পরবর্তীতে এটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। যা এখন বিশ্বের কোটি কোটি ডায়াবেটিস রোগীকে সেবা দিচ্ছে।

পরিষ্কার পানি

অ্যাপোলো মহাকাশযানে পানি পরিষ্কার করার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল, যা এখন অনেক পানির উৎসে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং জলজ উদ্ভিদ দমনে ব্যবহার করা হয়।

রুপালি আয়ন ব্যবহারের মাধ্যমে ক্লোরিনমুক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের সূচনা হয় তখন থেকেই। বিশুদ্ধ পানি পান করতে ঘরে ঘরে এখন এই প্রক্রিয়া ব্যবহার হয়। এই প্রযুক্তি এখন  সুইমিং পুলের পানি আর ঝরনার পানি পরিষ্কারের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবী জুড়েই ব্যবহৃত হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর