ধৈর্যশীল পাখি মাছরাঙ্গা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গ্রীক পুরাণে আছে, একবার রাজা সমুদ্র যাত্রায় গিয়ে জাহাজ ডুবে মারা গেল। এ খবর রাণী যখন পেল তখন তিনি সহ্য করতে পারলেন না। ভালবাসার টানে সমুদ্রে ডুবে তিনিও মারা গেলেন। আকাশের দেবতারা তার উপর সহমর্মী হয়ে তাকে একটি মাছরাঙ্গা পাখিতে পরিণত করলেন। মাছরাঙ্গা পাখিটিকে দেখলেই মনে হবে অত্যন্ত শান্ত ও ধৈর্যশীল।

জলাশয়ের কাছাকাছি কোন ডালে বা কোন তারে বসে থাকে, নড়াচড়াও কম করে। মাছ কোন এঙ্গেলে আছে সেটা তার সূক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে দেখে নেয়। আর যখনই মাছের অবস্থান টের পায় সাথে সাথে তীর গতিতে মাছের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাছ কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাছরাঙা তাকে ধরে ফেলে। কিছুক্ষণ পর দেখা যায় একটা ছোট্ট মাছ চঞ্চুর ফাঁকে ঝটপট করছে। সব প্রজাতির মাছরাঙ্গার মাছ ধরার পদ্ধতি একই রকমের নয়। কোন কোন মাছরাঙ্গা জলাশয় বা পুকুরের কিনারের মাছ ধরতে বেশি পছন্দ করে।

আবার কেউবা ধরে জলাশয়ের মাছখানের মাছ। প্রতিসরণ বোঝার ক্ষমতা আর প্রতিযোগিতা এড়াতেই তাদের এ প্রবণতা। বাংলাদেশে ১২ জাতের মাছরাঙ্গা আমাদের দেশে দেখা যায়। এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট মাছরাঙ্গার নাম পাতি মাছরাঙ্গা। এদের দেশের প্রায় সব জলাশয়েই দেখা যায়।পাতি মাছরাঙা বা ছোট মাছরাঙা Coraciiformes বর্গের এবং (Alcedo atthis) (ইংরেজি Common Kingfisher) আলসেডিনিডি গোত্র বা পরিবারের অন্তর্গত আলসেডো গণের অন্তর্গত রঙচঙে ক্ষুদে মৎস্যশিকারী পাখি।পাতি মাছরাঙার বৈজ্ঞানিক নামের অর্থ আত্তিসের মাছরাঙা যা এসেছে লাতিন শব্দ: alcedo = মাছরাঙা, atthis = আত্তিস, লেসবস নগরীর সুন্দরী, কবি সাফোর প্রিয়জন থেকে।পাতি মাছরাঙা ছোট আকারের পাখি ।

এরা লম্বায় ১৬ সে মি হয়ে থাকে। পাখার বিস্তৃতি ২৫ সে মি এবং এদের ওজন ৩৪ থেকে ৪৬ গ্রাম হতে পারে। এদের প্রায় সবারই দেহের তুলনায় মাথা বড়, লম্বা, ধারালো ও চোখা চঞ্চু, খাটো পা ও খাটো লেজ রয়েছে। বেশিরভাগ মাছরাঙার দেহ উজ্জ্বল রঙের আর স্ত্রী-পুরুষে সামান্য ভিন্নতা দেখা যায়। অধিকাংশ মাছরাঙা বিষুবীয় অঞ্চলে বসবাস করে এবং এদের বড় একটা অংশকে কেবলমাত্র বনে দেখা যায়।এদের প্রজনন মৌসুম শুরু হয় শরৎকালে।

এসময় এরা জোড় বেঁধে একত্রে থাকে। বর্গের অন্যসব সদস্যদের মত মাছরাঙারাও গর্তে বাসা করে। সাধারণত জলাশয়ের পাশে খাড়া পাড়ের গর্তে এরা বাসা বানায়। বাসা বানানোর জন্য এরা একে অপরকে সাহায্য করে। বাসা তৈরি হলে স্ত্রী পাখি ডিম পাড়ে। এরা একসাথে ৫ থেকে ৭ টি ডিম পাড়ে। ডিমগুলো দেখতে চকচকে সাদা।

বাবা ও মা পাখি উভয়ই ডিমগুলিতে দিনের বেলা তা দেয়। তবে রাতের বেলায় শুধু মা পাখি ডিমগুলিতে তা দেয়। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হতে ১৯ থেকে ২০ দিন সময় লাগে। বাচ্চারা আরো ২৪ থেকে ২৫ দিন বাসায় থাকে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর