রাজনীতিতে আসছেন জিয়ার ছোট ভাই

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের হাত ধরে রাজনীতিতে এসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন নানা শ্রেণি-পেশার বহু মানুষ। সাবেক এই রাষ্ট্রপতির সহধর্মিনী খালেদা জিয়ার পরিবারের একাধিক সদস্যও এখনও সক্রিয় রাজনীতিতে। তবে জিয়াউর রহমানের পরিবারের সদস্যরা অনেকটাই থাকেন দূরে দূরে। এমনকি বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার আপন ভাই আহমেদ কামালের নেই তেমন পরিচিতি। যদিও তার রাজনীতিতে আসা নিয়ে গুঞ্জন আছে। আসলেই কি তিনি সক্রিয় হচ্ছেন? নিজের মুখে কামাল বললেন, ‘যদি কোন দিন রাজনীতিতে আসি, আপনাদের জানাবো’।

জিয়াউর রহমানের পরিবারের (বাবা-মা ও প্রয়াত তিন ভাই) আত্মার মাগফেতার কামনায় রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে দোয়ার আয়োজন করেন জিয়াউর রহমানের ভাই আহমেদ কামাল।

মিলাদের চেয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের নজর বেশি ছিল জিয়ার ভাই কী বলেন, কোন ঘোষণা দেন কি না। কারণ, তিনি রাজনীতিতে আসবেন, সংস্কার করে বিএনপিকে নতুন চেহারা দেবেন, এমন খবর কদিন ধরেই আসছে গণমাধ্যমে।

দোয়া মাহফিলে দুই পৃষ্ঠার একটি লিখিত বক্তব্যও পড়লেন আহমেদ কামাল। এতে গণমাধ্যমে আসা গুঞ্জনের একটা জবাবও দেন তিনি। তবে ঠিক বোঝা যায়নি, তিনি সহসা রাজনীতিতে নামছেন কি না। সংবাদকর্মীদের গোলকধাঁধাতে রেখে বলেন, ‘এটা একান্তই আমাদের পারিবারিক মিলাদ মাহফিল। এটাকে অন্যভাবে না দেখার জন্য আমি সকলকে অনুরোধ করছি। তবে যদি কোন দিন রাজনীতিতে আসি আপনাদের সবাইকে জানাবো’।

দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন জিয়ার ছোট ভাই। বলেন, ‘বর্তমান সরকার যে গণতন্ত্রের কথা বলছে, এটা গণতন্ত্র নয়, একনায়কতন্ত্র। এই নাজুক পরিস্থিতিতে দেশের মঙ্গলের জন্য সঠিক ও সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে’।

জিয়াউর রহমানের চার ভাইয়ের মধ্যে চাকরিজীবনে সবাই ছিলেন যার যার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তাদেরকে নিয়ে কখনও বিতর্ক হওয়ার মতো কোন সংবাদও আসেনি গণমাধ্যমে। এর মধ্যে সবার বড় ভাই রেজাউর রহমান চাকরি করতেন নৌবাহিনীতে। ২০০৬ সালে মারা যান তিনি। ছোটভাই মিজানুর রহমান ছিলেন নামকরা ব্যাংকার। লন্ডনে চাকরি করতেন তিনি। ২০১২ সালে মারা যান তিনিও। আরেক ভাই খলিলুর রহমান পেশায় ছিলেন রসায়নবিদ। ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান তিনি। আহমেদ কামাল পেশায় ছিলেন সরকারি চাকুরে। পর্যটন করপোরেশনের পরিচালক হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান তিনি। রাজধানীর বাসাবো এলাকায় ছোট একটি ভাড়া বাসায় জীবন কাটাচ্ছেন।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন বর্জনের পর বিএনপির রাজনীতি কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়েছে। চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষস্থানীয় বেশিরভাগ নেতাই দুর্নীতি বা নাশকতার মামলায় আসামি। প্রকাশ্যেই আসছে না নেতাদের একটি বড় অংশ। কারাগারে আছেন কেউ কেউ। এই অবস্থায় বিএনপির হাল ধরতে জিয়া পরিবারের পক্ষ থেকে ছোটভাই আহমেদ কামাল রাজনীতিতে আসছেন-শুরু হয় এমন গুঞ্জন। আর হঠাৎ করেই তিনি জিয়া পরিবারের জন্য দোয়া মাহফিলের আয়োজন করায় আরও ডালপালা মেলে এই গুঞ্জন। বুধবার বিকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে তার এই অনুষ্ঠানে বিএনপি বা অঙ্গ সংগঠনের নেতারাও অংশ নেবেন-এমন কথাও বলা হয়েছিল। তবে অনুষ্ঠানস্থলে দেখা যায়নি পরিচিতমুখ কোন নেতাকে। তবে মঞ্চে আহমেদ কামালের সঙ্গে কয়েকজন বয়স্ক লোককে দেখা গিয়েছে। এছাড়া সামনের দিকে যারা ছিলেন তাদের বেশিরভাগেই বয়সে তরুণ।

জিয়া পরিবারের জন্য দোয়ার অনুষ্ঠানে কেন জাননি, জানতে চাইলে বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ‘জিয়াউর রহমান ও তার পরিবারের জন্য সব কর্মসূচিতেই আমরা দোয়া করি। আজ আমাদের একটা কর্মসূচি (গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন) ছিল। তাই দোয়া মাহফিলে যেতে পারিনি। আমরা যারা রাজনীতি করি, তাদের কাছে রাজনৈতিক কর্মসূচিই প্রাধান্য পায়’।

যোগাযোগ করা হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি দাওয়াত পেয়েছিলাম, কিন্তু যেতে পারিনি। আমি এবার দোয়া করে নিলাম’। জিয়াউর রহমানের ভাই রাজনীতিতে আসছেন-এমন গুঞ্জনের বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আমি এসব জানি না। শুনেছিলাম তিনি (আহমেদ কামাল) একটি মিলাদের আয়োজন করেছেন’।

এসময় সবাইকে কষ্ট করে মিলাদে যোগ দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই আয়োজন করার পেছনে ছোট একটি তাগিদ বোধ করছিলাম। কিছুদিন আগে হঠাৎ করে আমি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলাম। সুস্থ হওয়ার পর এই দোয়া মাহফিলের আয়োজন করার তাগিদ থেকেই এই মিলাদ মাহফিল’।

আহমেদ কামাল বলেন, ‘আমি বিএনপির সকল নেতা কর্মীসহ অন্যান্য সুধী সমাজ ও গুনীজনদের দাওয়াত দেওয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু অনেকের ঠিকানা ও ফোন নাম্বার না পাওয়ার কারনে দাওয়াত দিতে পারিনি’।

অনুষ্ঠানে আহমেদ কামালের ভাতিজা পরিচয়দানকারী এস ইসলাম ডন, জিয়াউর রহমানের খালাতো বোন তহুরা মোজাফফর এবং স্বজন দাবিদার ফেরদৌস আলম, মাহবুব আলম উপস্থিত ছিলেন। তবে খালেদা জিয়ার পরিবারের কোন স্বজন সেখানে ছিলেন না।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর