রাষ্ট্র ভক্ষক হলে দেশের যা হয় : সেলিমা রহমান

সম্প্রতি বিভিন্ন হত্যাকাণ্ড, নেতাদের জেলে পাঠানো, দলের সাংগঠনিক অবস্থাসহ বিএনপি ও বিএনপি নেত্রীকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য নিয়ে একটি অনলাইন পোর্টালে একান্ত সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান। তিনি বলেন, রাষ্ট্র যখন ভক্ষকে পরিণত হয় তখন দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। যেকোনো র্স্পশকাতর বিষয়ে মন্তব্য করার আগে প্রধানমন্ত্রীকে আরো বেশি বিবেচনা নিয়ে কথা বলতে হবে। চটজলদি কোনো মন্তব্য করা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বিরত থাকারও কথা বলেন বিএনপির এই নেত্রী। পাশাপাশি বিএনপিতে সংকট ও অস্থিরতা কোনোটাই নেই বলে মন্তব্য করেন দলের এই ভাইস চেয়ারম্যান। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপি নেত্রীকে দায়ী করে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন, বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন? এ প্রশ্নের জবাবে সেলিমা রহমান বলেন, যখন দেশে কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয় তখন প্রধানমন্ত্রী কোনো কিছু জানার আগেই চটজলদি একটা বক্তব্য দিয়ে দেন। কিন্তু এটা ঠিক না। তিনি যখন কথা বলেন তারপর আর কোনো তদন্ত চলতে পারে না। তিনি বলার পর সেটাই আবার তার মন্ত্রিসভা রিপিট করতে থাকে। এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হয়। মুল অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। কথায় বলে কেষ্ট বেটা চোর এমন মন্তব্য করে ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ওনারা কিছুই দেখছেন না। দেশে কিছু একটা ঘটলে বিএনপি জামায়তের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে দেন। এটা ওনাদের একাট অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করেন দেশে যা কিছু ঘটছে এর জন্য দায়ী বিএনপি জামায়াত। ব্লগার হত্যা হচ্ছে। একের পর এক ঝরে যাচ্ছে তরুণদের তাজা প্রাণ। আজ তাদেরকে মেরে ফেলা হচ্ছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে একবার ভাবুন তো। তারা যদি দেশের এতোই ভাল চান। তাহলে তারা কেন এগুলো রুখতে পারছেন না। আসলে রাষ্ট্র যখন ভক্ষক হয় তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়। এগুলো ঠিক নয় বলে মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেত্রী। সাংবাদিক সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেলিমা রহমান বলেন, সাগর রুনি হত্যা হয়েছে আজ কত বছর হয়ে গেছে তাদের হত্যার বিচার কি হয়েছে? তাদের হত্যাকারিকে পর্যন্ত ধরতে পারলো না এই সরকার। এপর্যন্ত কতগুলো খুন হয়েছে এসবের কোনো বিচার দেখেছেন? সবকিছু চালিয়ে দেয়া হচ্ছে বিএনপি জামায়াতের ওপর দিয়ে। তিনি বলেন, এসব ব্যাপারে কোনো তদন্ত না করে প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের কথা বলা উচিত নয়। এটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উনি আরো বিবেচনা নিয়ে কথা বলবেন। তদন্ত কমিটি করে দেবেন। তদন্ত করবেন। তারপরে সঠিক আসামিদের ধরে শায়েস্তার ব্যবস্থা করবেন। এটাই হলো একটা রাষ্ট্রের নিয়ম। বিএনপি একধরণের সংকট ও অস্থিরতার মধ্যদিয়ে চলছে, এটা কীভাবে দেখছেন জবাবে সেলিমা রহমান বলেন, আমি মনে করি না বিএনপিতে সংকট বা অস্থিরতা চলছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম নির্যাতন, ভয় দেখিয়ে বিএনপিকে নিঃশেষ করা চেষ্টা করা হচ্ছে। এই সরকার চেষ্টা করছে কোনো রাজনৈতিক দল থাকবে না তারা একদলীয় শাসনের মধ্যদিয়ে দেশকে স্বৈরশাসনের পরিণত করবে এবং তারা একাই রাজত্ব চালিয়ে যাবে। আমাদের সংকট নেই। আমাদের নেতাকর্মীরা সবই ঠিক আছে সব জায়গায়। দেখা মাত্র গুলি পায়ে গুলি বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। আপনি দেখেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে মিথ্যা মামলায় কিভাবে হয়রানি করছে। তিনি খুবই অসুস্থ। তার জীবন মরণ এখন একটা পর্যায়ে দাঁড়িয়ে গেছে। তাকে মিথ্যা মামলায় আবার কারাগারে নেয়া হয়েছে। শমসের মবিনের পদত্যাগের বিষয়ে সেলিমা রহমান বলেন, উনি প্রচণ্ড রকম অসুস্থ। বর্তমান সরকারের একটা চাপ রয়েছে। উনি এখনো পাসপোর্ট পাননি। যে কারণে উনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। শমসের মবিন তৃণমুল থেকে রাজনীতি করে আসেননি। যদিও তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অনেক কষ্ট ত্যাগ স্বীকার করে এসেছেন তার জীবনে। তারপরও রাজনীতিতে যে ধরণের নির্যাতন নিপীড়ন উত্থানপতন এসবের সঙ্গে উনি পরিচিত ছিলেন না। সে কারণে ওনি হয়তো মানষিক চাপটা নিতে পারেননি এটা আমার মনে হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসন কবে দেশে ফিরছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সেলিমা রহমান বলেন, ম্যাডাম লন্ডনে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে তিনি বলেছেন, খুব শিগগিরই দেশে ফিরবেন। তবে সেটা কবে তা আমি বলতে পারছি না। দলের নেতাদের জেলে পাঠানো হচ্ছে এই অবস্থার মধ্যে বিএনপি কী আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে আপনি মনে করেন? জবাবে সেলিমা রহমান বলেন, দেখুন, এরশাদের শাসনামলে দলের অনেক বড় বড় নেতা সেসময় জেলে ছিলেন। তারপরও কিন্তু একটা পর্যায়ে বিএনপি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কারণ দেশের জনগণ বিএনপির সাথে। যেখানে জনগণের সমর্থন থাকে সেখানে জনগণের সাহসকে আমরা শক্তি মনে করি। সেই শক্তির জোরে আমরা মনে করি, সরকার যত চেষ্টা করুক না কেন দলের বড় বড় নেতাদের নিপীড়নের মধ্যদিয়ে আটকিয়ে রাখুক না কেন, এটার ফল ভালো হবে না। এটা অদুরভবিষ্যতের জন্য ভালো হচ্ছে না। সূত্র : আমাদের সময়

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর