জঙ্গিবাদের মূল হোতা কি সামরিক শাসক জিয়া-এরশাদ

একজন পশ্চিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ অ্যাকাডেমিক দাবিকারী- মিথ্যা প্রপাগান্ডা করা কি তার পক্ষে সাজে, না এটা তার কাজ? কিন্তু তাই ঘটেছে। এখানে লেখার প্রসঙ্গ ও উদ্দেশ্য- বাংলাদেশে নিশ্চিতভাবে আইএস এসে গেছে বা আছে নাকি নেই- সেটি নয়। তবে আছে এবং নেই বলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যার যার স্বার্থে নিজের মাছ ভেজে নেয়ার মতো বহু পক্ষ তৎপর আছে; এটাই এখানে বলার, দেখানোর প্রসঙ্গ।
প্রথম আলোর মিজানুর রহমান খান গত ২৮ অক্টোবর ২০১৫ দুটো সাক্ষাৎকার নিয়ে ছেপেছেন। বাংলাদেশে আইএস এসেছে আর আসেনি- এই দুইয়ের তর্কের মধ্যে এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। দুই দেশের দুই নিরাপত্তা বিশ্লেষক- ঢাকার মেজর জেনারেল (অব.) মুনিরুজ্জামান এবং জার্মান এক বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ার গবেষক বলে দাবিকারী ড. সিগফ্রিড ও. উলফ, এমন দুইজনের দেয়া এই দুই সাক্ষাৎকার। তবে এটা আবার প্রথম আলোর দ্বিতীয় উদ্যোগ। কারণ একইভাবে এই দুই সাক্ষাৎকারদাতার প্রথম জোড়া সাক্ষাৎকার এর আগে প্রথম আলো ছেপেছিল এক মাস আগে, গত ১ অক্টোবর ২০১৫। কিন্তু প্রথম আলো কেন বারবার সিগফ্রিড-উলফকে পছন্দ করেছে, তা তারাই ভালো বলতে পারবে। এখানে প্রসঙ্গ কথিত জার্মান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ সিগফ্রিড ও.উলফ।
ঠিক এক মাস আগে তার প্রথম সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। সেই সময় থেকেই দ্বিতীয় সাক্ষাৎকার পর্যন্ত তিনি একের পর এক মারাত্মক সব আপত্তিকর মন্তব্য সাক্ষাৎকারে করে গিয়েছেন।
যেমন- ১. প্রথমবারে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের এই জঙ্গিবাদের মূল হোতা হলেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ও জেনারেল এইচ এম এরশাদ।’ বলা বাহুল্য, গত সাত বছরের হাসিনা-ইনুর বাংলাদেশে ‘জঙ্গিবাদ’ শব্দটার বিশেষ অর্থ হয়েছে, আছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ২০০১ সালের (দুনিয়াতে আলকায়েদা ফেনোমেনা উত্থানের) আগে কেউ জঙ্গিবাদ শব্দটা ব্যবহার করেনি বা ব্যবহৃত হতে দেখেনি। ফলে জিয়া অথবা এরশাদের শাসন আমলেও এদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগকারী ছিল স্বাভাবিকভাবেই; কিন্তু এদের চরম বিরোধী কেউ সেকালে এদের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গিবাদ’ বা ‘এরা জঙ্গি’ এমন অভিযোগ করেনি। কারণ, আগেই বলেছি ২০০০ সালের আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জঙ্গিবাদ শব্দটা কেউ দেখেনি, ব্যবহার করেনি। জাসদের ‘জঙ্গি মিছিলের’ কথা শুনেছি, তারা নিজেরাই নিজেদের অগ্রসর লড়াকু ও নির্ধারক মনোবল বোঝাতে ইতিবাচক অর্থে শব্দটা ব্যবহার করত।
তাই এক কথায় বললে, জিয়া ও এরশাদ ‘জঙ্গিবাদের হোতা’ একালে এমন কথা বললে বিশেষত যখন পশ্চিমের চোখে ‘জঙ্গিবাদ’ শব্দের বিশেষ অর্থ সর্বত্র আছে, তখন তা অ-ঐতিহাসিক। এটা ইতিহাসে জবরদস্তিতে আরোপ করে বলা কথা ও দাবি প্রতীয়মান হয়।
আলকায়েদা ফেনোমেনাকে বোঝাতে ২০০১ সালে পশ্চিমের চিহ্নিত করা চালু নতুন শব্দ হলো টেরর বা টেররিজম। এরই বাংলা করা হয়েছে জঙ্গিবাদ। কিন্তু এর আগে এমনিতে কমিউনিস্ট লিটারেচারে বা রাশিয়া থেকে প্রকাশিত প্রচার পুস্তকে টেরর শব্দটা ইতিবাচক ও পছন্দের কাম্য অর্থে ব্যবহৃত হতো। ফলে তা একইভাবে ব্যবহৃত হতো প্রগতি মহলেও। আর সর্বশেষ গত সাত বছরের হাসিনা-ইনুর আমলে ‘জঙ্গিবাদ’ শব্দটা বিশেষ ঘৃণিত অর্থ বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে, বিশেষত যারা হাসিনার রাজনীতির ঘোর বিরোধী তাদের গায়ে কালি লাগিয়ে দিতে। অর্থাৎ এটাও ২০০৮ সালের আগে এমন ছিল না। অতএব, জিয়া ও এরশাদের বিরুদ্ধে অনেকের অনেক জেনুইন অভিযোগ থাকতে পারে; কিন্তু তারা ‘বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের মূল হোতা’- এটা মিথ্যা, অবাস্তব কথা।

২.
ওই একই সাক্ষাৎকারে জার্মান সিগফ্রিড ঢাকায় ইতালির এনজিও কর্মী তাভেলা সিজার হত্যাকাণ্ড বিষয়ে মন্তব্য করে বলেছেন, ‘প্রতীয়মান হচ্ছে যে এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আইএস বাংলাদেশে প্রথম আক্রমণের সূচনা ঘটাল।’ কিন্তু কোথা থেকে এই তথ্য তিনি নিশ্চিত হলেন সে সম্পর্কে কোথাও কোনো রেফারেন্স তিনি দেননি। ইতালীয় নাগরিক খুন হন ২৮ সেপ্টেম্বর আর সিগফ্রিডের ওই সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছিল ১ অক্টোবর, অর্থাৎ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ধরে নিচ্ছি আগের দিন ৩০ অক্টোবর। অর্থাৎ তাভেলা হত্যার মাত্র এক দিন পরেই এই রেফারেন্স ছাড়া মনগড়া দাবি। আজ এক মাস পরেও যেখানে নিশ্চিত করে দেশী-বিদেশী সরকার কেউ বলতে পারছে না কে খুন করেছে, সেখানে সিগফ্রিড এক মাস আগেই সাক্ষাৎকারে তা আমাদের জানিয়েছেন যে, এটা আইএস। আমরা দেখছি, একজন গবেষক বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক লোক এ ধরনের ফালতু প্রপাগান্ডায় শামিল হয়ে পড়েছেন।

৩.
আঁতেল সিগফ্রিড এরপর বলছেন, ‘সালাফি মতবাদে বিশ্বাসী আইএস কিন্তু গভীরভাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদূদীর আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট।’ কিন্তু তিনি ‘সালাফি মতবাদ’ বলতে ঠিক কী বুঝিয়েছেন, তা আমাদের জানার উপায় রাখেননি। এর ওপর আবার মওদূদীর আদর্শও তিনি যেন বোঝেন, এমন ধারণা দিয়েছেন আমাদের। এর মানে এই বাক্য বলার আগে তাকে সালাফি মতবাদ, আইএসের রাজনীতি ও মওদূদীর আদর্শ সম্পর্কে জানা থাকতে হবে। কিন্তু এ সম্পর্কে তার নূন্যতম জানা আছে এমন কোনো প্রমাণ তার সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায় না। এ কথা ঠিক যে, ‘মওদূদী আদর্শ’ সম্পর্কে সুন্নি রাজনৈতিক জগতের বিভিন্ন ধারারই অনেক ধরনের আপত্তি বা বিরোধিতা আছে এবং এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু ‘মওদূদী আদর্শ’ এর ঠিক কোন বা কোন কোন অংশের প্রতি আইএস ‘আকৃষ্ট’ এমন কোনো ধারণা তিনি রাখেননি। কারণ প্রথম কথা হলো, মওদূদীর রাজনৈতিক চিন্তা ‘সশস্ত্র বলপ্রয়োগে ক্ষমতা দখল’ ধরনের নয়। ফলে কথিত ‘মওদূদীর আদর্শ’ অন্তত আর যা-ই হোক, ‘জঙ্গিবাদ বা টেররিজম’ ক্যাটাগরির একেবারেই নয়।
মোটা দাগে রাজনৈতিক চিন্তা বা রাজনৈতিক দলের ধরন অর্থে আমরা দুটো ধরনে এর ভাগ দেখাতে পারি। এক. গণ-আন্দোলনের (মাস-পার্টি) দল। এরা দেশের প্রচলিত কনস্টিটিউশন মেনে এর আইনের অধীনে রেজিস্টার্ড দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়, জনগণকে সাথে নিয়ে রাস্তায় প্রকাশ্যে মিছিল-মিটিং, আন্দোলন করে কিন্তু নিরস্ত্র। এভাবেই ক্ষমতায় যাওয়ার পথ চর্চা করে। এদের আর এক সাধারণ নামে ডাকা হয়- কনস্টিটিউশনাল লিবারেল দল বলে। আর এক অর্থে বলা যায়, এরা সংসদীয় দল। যেমন, জামায়াত একটা সংসদীয় রাজনৈতিক দল। এসবের বিপরীতে আরেক ধরনের দল হলো, সশস্ত্র বলপ্রয়োগে ক্ষমতা দখল। প্রচলিত আইন ও কনস্টিটিউশনের চোখে এরা বেআইনি দল হয়। কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ, কোনো প্রকাশ্য দলীয় তৎপরতার সুযোগ এদের থাকে না। জঙ্গি দল, টেররিস্ট রাজনীতি বলতে এ ধরনের রাজনৈতিক দল বোঝায়। এই বিচারে মওদূদীর আদর্শ বা তার চিন্তা প্রথম টাইপের, অর্থাৎ গণ-আন্দোলন টাইপের। তার চিন্তা কোনোভাবেই সশস্ত্র বলপ্রয়োগে ক্ষমতা দখলের নয়, ফলে পশ্চিমের চোখে যা টেররিজম, তা মওদূদীর রাজনৈতিক চিন্তা নয়। তবু অনেকে উসখুস করতে পারেন। তাদের জন্য বলছি, আমরা মওদূদীর চিন্তা ভুল মনে করতে পারি, বিপজ্জনক ক্ষতিকর বা আমার বিরোধী, অপছন্দনীয় মনে করতে পারি। অবশ্যই করতে পারি। কিন্তু তবু মওদূদীর চিন্তাকে পশ্চিমের চোখে দেখেও টেররিস্ট চিন্তা বা রাজনীতি বলতে পারি না। অনেকের মুখে বা স্মরণে কাদিয়ানিবিরোধী দাঙ্গাহাঙ্গামার উদাহরণ আসতে পারে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ওটা তার বলপ্রয়োগে অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখলের কৌশল ছিল না। কাদিয়ানিদের অমুসলমান বলে আলাদা করে অবশিষ্টদের এক সেকটোরিয়ান বা সাম্প্রদায়িক প্রচেষ্টা বলতে পারি। কিন্তু এটা তবুও গণ-আন্দোলনের আরেক খারাপ প্রচেষ্টার ধরন। কারণ, এখানে সশস্ত্রতায় ক্ষমতা দখল ছিল না। ‘টেররিস্ট’ রাজনীতি এটা নয়।
এ ছাড়া অনেকের ৭১-এর উদাহরণ মনে আসতে পারে। কিন্তু সেটাও ঠিক ক্ষমতা দখলের উদাহরণ নয়, কারণ সেটা জামায়াতের ইয়াহিয়া খানকে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের রাজনীতি নয়; বরং ইয়াহিয়াকে সমর্থন করার রাজনীতি এবং বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্রতায়, কারণ ওটা যুদ্ধপরিস্থিতি।
আবার মওদূদীর চোখে- রাজনৈতিক চিন্তা ওরিয়েন্টেশনে প্রশিক্ষিত ক্যাডার হতে হবে, এটা তার ইসলামি রাজনীতির অগ্রগামী পথ দেখানোর সৈনিক অর্থে ক্যাডারের কথা তিনি ভেবেছিলেন, প্রস্তাব করেছিলেন; কিন্তু এটা সশস্ত্র ক্যাডার নয়। কারণ তিনি ইমাজিন করতেন ইসলামি নৈতিকতায় একদঙ্গল ‘সৎ’, ‘আল্লাভীরু’ লোকের কথা। এ কথাগুলো বলে আমি বলছি না মওদূদীর রাজনীতি ঠিক কি বেঠিক ছিল, তিনি যা ভেবেছেন তাই করতে পেরেছিলেন কি না, ওটাই সঠিক ইসলামি রাজনীতি ছিল কি না- এগুলো একটাও আমার বলার কথা না বা বোঝানোর ইচ্ছা নেই। আমি কেবল বলছি, মওদূদীর আদর্শ বা রাজনীতি- গণ-আন্দোলনের (মাস-পার্টি) দল ধরনের। এটা কোনোভাবেই টেররিস্ট ক্যাটাগরির চিন্তা, আদর্শ বা রাজনীতি নয়। অতএব, ‘মওদূদীর আদর্শের ভেতর আইএসের আকৃষ্ট’ বোধ করার সুযোগ নেই। যদিও মওদূদীর আদর্শ আর আইএসের দুটোই সালাফি রাজনীতির দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।
তাহলে জার্মান অ্যাকাডেমিক সিগফ্রিড যেটা করছেন বা বলছেন, সেটা প্রপাগান্ডা। যা কোনো অ্যাকাডেমিকের কাজ নয়, জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে দক্ষিণ এশীয় ইনস্টিটিউট খুলে করার মতো সামঞ্জস্যপূর্ণ কাজ এটা নয়।
প্রথম আলোর প্রথম সাক্ষাৎকারে এই প্রচারকের ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে কিছু পরিচয় তুলে ধরেছিল। সেখান থেকে জানা যাচ্ছে, ‘ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাকিস্তান সিকিউরিটি রিসার্চ ইউনিট এবং দিল্লির সেন্টার দ্য সায়েন্সেস হিউম্যানসের সাবেক রিসার্চ ফেলো। বর্তমানে তিনি জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আফগানিস্তান-পাকিস্তান টাস্কফোর্সের বহিস্থ বিশেষজ্ঞ গ্রুপের অন্যতম সদস্য।’ অর্থাৎ তার এই উপমহাদেশ বিষয়ে অভিজ্ঞতা বা এক্সপোজার হলো ভারতের এক ইনস্টিটিউট। ফলে এ জন্য মনে করার কারণ আছে যে, মওদূদীর নাম ও কাজ সম্পর্কে পরিচয়, সালাফি চিন্তা সম্পর্কে পরিচিতি- এগুলো তিনি কেবল নাম জানেন, জানাশোনা স্টাডি বলতে যা বোঝায় তা তার কিছুই নেই। এ ছাড়া খুব সম্ভবত বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারতীয় চিন্তায় কোনটা তারা প্রপাগান্ডার জন্য বলে আর কোনটা ফ্যাক্টস, এর কোনো ফারাক রাখে না বলে তিনিও প্রপাগান্ডাগুলোকেই ফ্যাক্টস মনে করে বসে আছেন। যেমন ভারতীয় গোয়েন্দাসহ ইনটেলিজেন্সিয়া কেন ইসলামের বিরুদ্ধে যেকোনো ইসলামি তৎপরতার বিপক্ষে বলতে গেলে সেটা জামায়াতে ইসলামির তৎপরতা বলে দাবি ও দোষারোপ করবে। কারণ সেটা জামায়াতের কাজ বললে একটা বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। জামায়াত উচ্চারণ করে ওরা বোঝাতে চায়, যারা ৭১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল, অর্থাৎ এরা নৈতিকভাবে দাগলাগা গোষ্ঠী, মানে এর অর্থ দাঁড়াল ইসলামের নামে যেকোনো তৎপরতাই অনৈতিক, দাগলাগা। নিজের ধর্মের জায়গায় বসে এতে সহজেই আরেকটা ধর্মকে খারাপ বলে ফেলা যায়, ঘৃণা ছড়ানো যায়, নিজেরা ভালো মহান বলে ইঙ্গিত রাখা যায় ইত্যাদি। ঠিক যেমন শাহরিয়ার কবির যেকোনো ফেঁকড়ার ইসলামি রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক তৎপরতা মাত্র তা জামায়াতের বলে চিহ্নিত করবেনই। না বোঝা চিন্তার দৌড়ে জার্মান সিগফ্রিড এমন ভারতীয় বা শাহরিয়ার কবিরের প্রপাগান্ডার পথটাকেই অনুসরণ করেন।
মজার কথা হলো, দ্বিতীয় বা ২৮ অক্টোবরের সাক্ষাৎকারে সিগফ্রিড এবার আর জামায়াত ও আইএসকে আলাদা রাখেননি। বলছেন, ‘আইএসের মতো আন্তর্জাতিকভাবে সক্রিয় জিহাদি গোষ্ঠীর সাথে তার নতুন স্থানীয় সহযোগী জামায়াতের যোগসাজশকে অবশ্যই মনোযোগের কেন্দ্রে আনতে হবে।’ জামায়াত নাকি আইএসের স্থানীয় সহযোগী। সিগফ্রিডের এ কথা থেকে এটা পরিষ্কার যে তার না জামায়াত না আইএসের রাজনীতি সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে। বলা বাহুল্য, আমেরিকার এমন বেকুবি উদ্ভট চিন্তা নেই। এমনকি ভারতের র’ও মনে করে না যে, বাংলাদেশে বিদেশীদের হত্যা এটা আইএসের কাজ নয়, তবে জামায়াত হতে পারে। প্রথম আলো ৭ অক্টোবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার বরাতে জানাচ্ছে- এই কাজে আইএসের যোগসূত্র নেই। এতে এক মজার তামাশা সৃষ্টি হয়েছে। ভারত বলছে, এই কাজে আইএসের যোগসূত্র নেই, তবে জামায়াত হতে পারে। তার মানে কী দাঁড়াল? দাঁড়াল এই যে, ভারতের র মনে করে, জামায়াত অন্তত আইএসের স্থানীয় সহযোগী নয়।
সিগফ্রিডের এসব বেকুবি কথাবার্তা এমনই বেকুবি ও স্ববিরোধী যে, প্রথম আলোর মিজানেরও আর তা সহ্য হয়নি। তিনি সাক্ষাৎকার গ্রহীতা হওয়া সত্ত্বেও বলেই ফেলেছেন যে, এখানে কি আপনার বক্তব্য স্ববিরোধী মনে হচ্ছে না? এর পরেও সিগফ্রিড এতই নাদান যে, তিনি বুঝতেও পারেননি মিজান তাকে সতর্ক করছে, সুযোগ দিচ্ছে।
এই জায়গায় এসে সিগফ্রিডের অবস্থান হাসিনা সরকারের মতো স্ববিরোধী।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর