পেনশন পাবেন সব চাকরিজীবী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি চাকরিজীবীদের পেনশনের আওতায় আনতে খসড়া নীতিমালা প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বহুদিন থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এবার সেটি আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।

আশা করা হচ্ছে, আগামী তিন বছরের মধ্যে সব চাকরিজীবীই সার্বজনীন পেনশনের আওতায় আসবেন। সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে নীতিমালার খসড়া রূপরেখা তৈরির জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আজিজুল আলমের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটি কাজও শুরু করেছে। খসড়া তৈরির পর খুব শিগগির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হবে।

কমিটিকে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের জবাবে সূত্র জানায়, কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের সময় বেঁধে দেয়া না হলেও দ্রুত সার্বজনীন পেনশনের খসড়া নীতিমালা জমা দিতে বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, পেনশন কাঠামো তৈরিতে খুঁটিনাটি বিষয় বিচার-বিবেচনা করা হচ্ছে। আইনি বিষয়গুলো পর্যালোচনার পাশাপাশি এ বিষয়ে অন্যান্য অভিজ্ঞতা একত্রিত করে নীতিমালা তৈরিতে কমিটি কাজ শুরু করেছে। চলতি মাসেই নীতিমালার খসড়া তৈরি করে অর্থ সচিবের কাছে জমা দেয়া হবে। নীতিমালার খসড়াটি প্রস্তুত হলেই বেসরকারি খাত এবং সংশ্লিষ্ট ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসে আলোচনা করা হবে। তাদের মতামতটাও গুরুত্বপূর্ণ।

এ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত হলে প্রথমে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এর আওতায় আনা হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে বেসরকারি চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষকে এ পেনশনের আওতায় আনা হবে। বেসরকারি চাকরিজীবীদের সার্বজনীন পেনশনের আওতায় আনতে সময় লাগবে অন্তত তিন বছর।

দেশের ৬ কোটি কর্মজীবীর ৫ কোটি ৮০ লাখই কাজ করেন বেসরকারি খাতে। চাকরিজীবন শেষে তাদের অর্থসংকটে পড়তে হয়। এসব কর্মজীবীকে শেষ বয়সে সুবিধা দিতে চলতি বাজেটে দেয়া হয়েছে সবার জন্য পেনশন বা সর্বজনীন পেনশনের প্রতিশ্রুতি। সে আলোকে দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে সার্বজনীন পেনশন নীতিমালা প্রণয়ন হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, সরকারি পেনশনাররা দেশের পুরো জনগণের একটি ভগ্নাংশ মাত্র। প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতসহ দেশের সব জনগণের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা পর্যায়ক্রমে চালুর লক্ষ্যে একটি ‘ইউনিভার্সাল পেনশন অথরিটি’ শিগগিরই গঠন করা হবে। গত অর্থবছরের বাজেটেও একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। কিন্তু সেটা এখনো বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।

সূত্র জানায়, সবার জন্য পেনশন কাঠামো প্রস্তুত করা বেশ সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। অনেক চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়ে এ বিষয়ে কাজ করছে অর্থ বিভাগ। এখন শুধু সরকারি চাকরিজীবীরাই অবসরে মাসিক পেনশন সুবিধা পান। নতুন ব্যবস্থায় এর বাইরে বেসরকারি খাতে নিয়োজিত চাকরিজীবীদের পেনশনের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এ বিষয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবু মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় পেনশন তহবিল হবে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে। অর্থাৎ চাকরিজীবী ও নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ যৌথভাবে এ তহবিলে অর্থ দেবে। এর পরিমাণ হতে পারে চাকরিজীবীর মূল বেতনের শতকরা ১০ ভাগ। নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষও সমপরিমাণ অর্থ দেবে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে একই নিয়মে তহবিল গঠন করা যেতে পারে।

পেনশনের এ তহবিল ব্যবস্থাপনার জন্য একটি রেগুলেটরি অথরিটি থাকবে। এ অথরিটির মাধ্যমে পেনশন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। প্রস্তাবিত পেনশন স্কিমের আওতায় সরকারি চাকরিজীবীদের বয়স হবে ৬০ বছর। বেসরকারি খাতের জন্য ৬৫ বছর। নির্ধারিত সময়ে চাকরি শেষে অর্ধেক পেনশনের টাকা এককালীন তোলা যাবে। বাকি টাকা তহবিলে থাকবে। সে অর্থ পরে প্রতি মাসে ধাপে ধাপে ওঠানো যাবে।

তহবিল পরিচালনার জন্য আলাদা রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করা হবে। তারা লাভজনক খাতে তহবিলের অর্থ বিনিয়োগ করবেন। বিনিয়োগ সুরক্ষাও দেয়া হবে। এ থেকে যে মুনাফা আসবে, তার অংশ মাসে মাসে পাবেন সুবিধাভোগীরা। পেনশনভোগীদের স্মার্টকার্ড দেয়া হবে। প্রস্তাবিত পেনশন স্কিমে ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের সুবিধা থাকবে।

সার্বজনীন পেনশন পদ্ধতির আওতায় বেসরকারি পর্যায়ে প্রাথমিকভাবে বড় বড় করপোরেট হাউস, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কর্মরত চাকরিজীবীদের আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে অন্য খাতের প্রতিষ্ঠানকেও আনা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর