দুর্নীতির চেয়েও ভয়াবহ প্রশাসনের কাজের ধীর গতি: পরিকল্পনা মন্ত্রী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও কাজের ধীর গতি দুর্নীতির চেয়েও ভয়াবহ বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে দেশ ও দেশের মানুষের ভাগ্যন্নোয়নে বিরামহীন কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে প্রশাসনের শ্লথ গতির কারণে তা অনেক সময় কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে সময় নিচ্ছে অনেক বেশি।

বৃহস্পতিবার পূর্ব লন্ডনের লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মত বিনিময়কালে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রেস ক্লাবের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়েরের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। এসময় তিনি বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন চিত্রও তুলে ধরেন।

সিলেট বিমান বন্দর থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু, ব্রিটেনে মেধাবী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রজন্মকে দেশের কাজে লাগানো, নিজ এলাকাসহ বৃহত্তর সিলেটের মন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কথা তুলে ধরতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, যত দ্রুত সম্ভব সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে বিরামহীন কাজ করছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ আর আগের অবস্থানে নেই মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, এক সময় দরিদ্র ও ক্ষুধার্থ দেশ হিসেবে যে পরিচয় ছিলো বাংলাদেশের, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা থেকে বেরিয়ে এসেছি আমরা।

তিনি বলেন, শিক্ষা, খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা, সারাদেশের প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ এখন বাংলাদেশে আর কল্পনা নয়, বাস্তবতা।

আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির একটি অন্ধকার দিক নিয়ে শঙ্কা ছিলো সবচেয়ে বেশি, এমন মন্তব্য করে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কঠোর না হয়ে উপায় ছিলো না সরকারের।

তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে সফলতা আমরা দেখছি।

শিশু ধর্ষণের মতো ঘটনা রোধে কঠোর আইন আসছে, এমনটি জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, কোনো বিষয় যখন আদালতে চলে যায়, তখন সরকারের আর কিছু করার থাকে না। সরকার শুধু ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আটক করে আদালতে সোপর্দ এবং প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রণয়ন করতে পারে।

শিক্ষার উন্নয়নে সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, মাতৃভাষা শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়েই সরকার জাতিকে শিক্ষিত করতে চায়। এক্ষেত্রে উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার ভিত্তিতে আধুনিক শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হয়।

তিনি এ বিষয়ে বহির্বিশ্বে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের যেকোন পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনার আশ্বাস দেন পরিকল্পনা মন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি একজন আধুনিক মানুষ, বহির্বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে যার রয়েছে বিশেষ জ্ঞান। তিনি নিশ্চয়ই বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা সাজাবেন।

সিলেট থেকে সরাসরি বিমান ফ্লাইট আর কতদুর-এমন অপর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, কাজ চলছে। শ্লথ গতির কারণে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তিরস্কারও করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সিলেটে গিয়ে সরাসরি নামতে পারলে সিলেট থেকে সরাসরি উঠতে পারে না কেন, এমনটি জানতে আমরা খোঁজ নিয়েছি। আসলে সিলেট গিয়ে যখন নামে তখন জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার পথে থাকায় বিমানটি হালকা থাকে, এজন্য নামা সহজ হয়। কিন্তু উঠার সময় জ্বালানি ভর্তি থাকায় বিমানের ওজন থাকে বেশি। এই ওজন নিয়ে উড়তে গেলে যে রানওয়ের প্রয়োজন সেটি এখনও তৈরি হয়নি সিলেটে। তাছাড়া সিলেট থেকে জ্বালানি সংগ্রহের ব্যবস্থাও প্রয়োজন। একাজগুলো সম্পন্ন হলেই সিলেট থেকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে সরাসরি উড়বে বিমান।

তার নিজ এলাকাসহ সিলেটের বিভিন্ন সড়কের বেহাল অবস্থার বিষয়েও প্রশ্নের সম্মুখীন হন পরিকল্পনা মন্ত্রী। তিনি জানান, সিলেটে সড়ক উন্নয়নে সবচেয়ে বড় সমস্যা ঠিকাদার ও কাজের লোক পাওয়া যায় না। অন্য জেলা থেকে ঠিকাদার ও কাজের লোক এনে কাজ করাতে হয়। তবে কাজ চলছে, সড়কগুলোর এই অবস্থা থাকবে না বলে সাংবাদিকদের আশ্বাস দেন মন্ত্রী।

সিলেট বিমান বন্দর সড়কে পর্যাপ্ত লাইট না থাকায় রাতের বেলা তা অন্ধকার থাকে, এমন অভিযোগও শুনতে হয় পরিকল্পনা মন্ত্রীকে। উত্তরে তিনি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হকের প্রশংসা করে বলেন, আমাদের মেয়র তো খুবই করিৎকর্মা মানুষ। নিশ্চয় এটি উনার নজরে পড়েনি। বিষয়টি মেয়রের নজরে নিয়ে আসবো আমি, সব ধরনের সহযোগিতাও করবো তাকে।

অবকাঠামোগত উন্নয়নের কথা বলতে গিয়ে এম এ মান্নান আরও বলেন, ভারতের মত দেশে প্রতি স্কয়ার মাইলে যেখানে ৪০জন মানুষ বসবাস করে, সেখানে আমাদের দেশে বসবাস করে ১২শ’ জন। আমাদের জমির পরিমাণ খুবই সীমিত। এই সীমিত জমি অধিগ্রহণ করে নতুন সড়ক করা খুবই কঠিন। যে সড়কগুলো আছে তার রক্ষণাবেক্ষণেই এই মুহূর্তে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে মালিকরা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না, মন্ত্রীর কাছে এমন অভিযোগ তুললে তা তিনি অস্বীকার করে বলেন, সরকার এক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্যের তিনগুণ মূল্য পরিশোধ করছে।

এমন ঘটনা ঘটে থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করার পরামর্শ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, এমন ঘটনার পেছনে মধ্যস্বত্বভোগী কারো হয়তো ভূমিকা থাকতে পারে।

মতবিনিময় সভার সমাপনী বক্তব্যে লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে আসায় মন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ক্লাব সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী।

তিনি এসময় ব্রিটিশ-বাংলাদেশ কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি ও লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ২৫ বছরপূর্তি আনুষ্ঠানিক উদযাপনে মন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর