গোয়াইনঘাটে পর্যটক স্রোত, দুর্ভোগ ভুলিয়ে দেয় অপরূপ প্রকৃতি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিলেটের গোয়াইনঘাটের পর্যটন স্পটগুলোতে প্রতিবারের মত এবারও পর্যটক-দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। জাফলং জিরো পয়েন্ট, ফাটাছড়া মায়াবতী ঝর্ণা, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, বিছনাকান্দিসহ সবকটি স্পটই লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠেছে। পিকনিক সেন্টার, জিরো পয়েন্ট, খেয়াঘাট সর্বত্রই শুধু পর্যটক আর পর্যটক।

এবার ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে অতীতের ন্যায় জাফলংয়েই বেশি উপস্থিতি পর্যটক-দর্শনার্থীর। সিলেট তামাবিল মহাসড়কের তামাবিল থেকে জাফলং বিজিবি ক্যাম্প, জাফলং বল্লাঘাটসহ প্রকৃতিকন্যা জাফলংয়ের সড়কসমূহ দীর্ঘ যানজটে আবদ্ধ ছিলো। পর্যটক দর্শনার্থীরা পায়ে হেটে শত কষ্টেও ছুটে চলেছেন প্রকৃতির কাছাকাছি। প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠে পর্যটন স্পটগুলো।

ভারতের মেঘালয়ের দণ্ডায়মান সবুজ বিস্তৃত পাহাড়, টিলা, পাহাড়ের গায়ে মেঘের আভা, বয়ে আসা নদী ও ঝর্ণাধারার নির্গত স্বচ্ছ জলরাশির সাথে খেলা করে সাঁতার কাটায় বিমুগ্ধ পর্যটকরা।

বৃহস্পতিবার এবং শুক্রবার সরেজমিন জাফলংয়ে ঘুরে দেখা যায়, হাজার হাজার পর্যটক দর্শনার্থীর ভিড়। সংগ্রাম বিজিবি ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকা পর্যটক দর্শনার্থীর উপস্থিতিতে মুখরিত। বিজিবি ক্যাম্প ঘেঁষা সদ্যনির্মিত সিঁড়ি বেয়ে পর্যটকরা নিরাপদে জিরো-পয়েন্টসহ আশপাশে ঘুরে বেড়াতে পারছেন।

বিছনাকান্দিতেও জাফলংয়ের ন্যায় পাহাড়, নদী আর স্বচ্ছ জলরাশির মাঝে পর্যটকদের দীর্ঘ পদযাত্রা লক্ষ্য করা গেছে। সরেজমিন দেখা যায় রাতারগুলেও ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় করে বনের ভিতর ঘুরে বেড়িয়ে ব্যাকুল হৃদয়কে প্রকৃতির উদারতায় ভরে তোলার চেষ্টা করেছেন আগত পর্যটক দর্শনার্থীরা।

বিছনাকান্দি ও রাতারগুলের পাশাপাশি জৈন্তাপুরের লালাখাল, গোয়াবাড়ি, শ্রীপুর, কোম্পানিগঞ্জের সাদা পাথর নামক স্পটটিও পর্যটক দর্শনার্থীর নজর কেড়েছে। এবারের ঈদে জাফলংয়ে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙেছে পর্যটক আনাগোনা এমনটাই ধারণা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুলসহ আশপাশের পর্যটক স্পটসমূহে পর্যটক দর্শনার্থীর আগমন বেশি হলেও তাদের কষ্টের অন্ত নেই। সিলেট-তামাবিল মহা সড়কের তামাবিল হইতে জাফলং-৪ কিলোমিটার, সারীঘাট থেকে গোয়াইনঘাট হয়ে বিছনাকান্দি যাওয়ার পথে সড়কের খানাখন্দ গর্তময় সড়কে যানবাহন আটকে পর্যটকদের দুর্ভোগ-ভোগান্তির চিত্র ছিলো চোখে পড়ার মতো।

ঈদ উপলক্ষে জাফলংসহ আশপাশে গড়ে উঠা সবকটি আবাসিক হোটেল, রেস্টহাউস, কটেজ, রিসোর্টসমূহ আগেই ফোনে এবং মেইলে যোগাযোগের মাধ্যমে বুকিং হয়ে গেছে বলে জানান, এসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা। খাবার হোটেল এবং পর্যটনকেন্দ্রীক গড়ে ওঠা দোকানসমূহে বেচাকেনা বেড়েছে বহুগুণ।

কথা হয় পর্যটক দর্শনার্থীদের সাথে। গজারিয়া মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা পর্যটক ইসমাইল আলী পেশায় একজন সবজি ব্যবসায়ী। তিনি জানান, পরিবার পরিজনকে নিয়ে তিনি সিলেট হয়ে জাফলং বেড়াতে এসেছেন। পথিমধ্যে সড়ক যোগাযোগের ভোগান্তির কারণে কষ্টের শিকার হন তারা।

জাফলংয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করে বিমুগ্ধ হয়ে তিনি বলেন, জাফলং আসতে সড়কে যে কষ্ট হয়েছে তা ভুলিয়ে দিয়েছে জাফলংয়ের নয়নাভিরাম প্রকৃতির দৃশ্য। এক জায়গায় পাহাড়, টিলা, মেঘ, বহমান নদী, সবুজ বিস্তৃত দিগন্তজোড়া সবুজ বৃক্ষরাজি, নুড়িপাথর, স্বচ্ছ জলরাশিতে সাঁতার কাটা, পাহাড়ের বুক চিঁড়ে আসা স্বচ্ছ পানির ঝর্ণাধারার দৃশ্যাবলী আমাদের এখানে আসার উপলক্ষে ভরিয়ে দিয়েছে।

অভয়নগর যশোর থেকে আসা ৪০জনের একটি ঈদ ভ্রমণ প্যাকেজ টিমের প্রধান নিয়ামুল কবির। তিনি জানান, আমাদের এই প্যাকেজ টুরে সমাজের সব শ্রেণিপেশার মানুষ আছেন। বাসে করে এখানকার সৌন্দর্য অবলোকনে আমরা এসেছি। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আমরা অভিভূত। তবে সরকারের কাছে আমাদের সবিনয় অনুরোধ দ্রুত জাফলংয়ের মতো এত দৃষ্টিনন্দন স্পটকে পর্যটন অবকাঠামো ও সড়ক যোগাযোগ উন্নত করে আধুনিকায়ন করা হোক।

শুক্রবার বিকাল ৩টায় বিছনাকান্দি পর্যটন কেন্দ্রে কথা হয় ঘুরতে আসা নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার পর্যটক সালমান বেপারীর সাথে। তিনি জানান, ঈদের দিন থেকে আজ পর্যন্ত জাফলং ও রাতারগুল ঘুরে বিছনাকান্দি এসেছি। জাফলং রাতারগুলের মতোই মনোলোভা স্পট বিছনাকান্দি। জাফলং, বিছনাকান্দির পাথর উত্তোলন নামক ধ্বংসলীলা চিরতরে বন্ধ করে একটি পরিবেশ নিরাপত্তার বেষ্টনীভুক্ত করিয়া পর্যটনের জন্য বিনিয়োগ করলে আমার বিশ্বাস জাফলং ও বিছনাকান্দি থেকে সরকারের বছরে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আদায় সম্ভব।

রাতারগুল ভ্রমণ করে আসা জাফলং অভিমুখের ঢাকা বংশাল থেকে আসা পর্যটক আব্দুস সামাদ জানান, গোয়াইনঘাটসহ উত্তর সিলেটজুড়ে পর্যটন স্পটের অভাব নেই, কিন্তু অনুন্নত সড়ক যোগাযোগের কারণে পর্যটক দর্শনার্থীর দুর্ভোগ ভোগান্তির শেষ নেই।

গোয়াইনঘাটের পর্যটন স্পট সমূহের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন যাতায়াতের ব্যাপারে কথা হলে গোয়াইনঘাটের উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত কুমার পাল জানান, বরাবরের ন্যায় এবারো জাফলং, বিছনাকান্দি, রাতারগুল, পান্তুমাইসহ পর্যটন স্পটসমূহে পর্যটক দর্শনার্থীর আগমন বেড়েছে। পর্যটক নিরাপত্তায় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বয়ে একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। রোববার স্কাউটসহ স্বেচ্ছাসেবী বিভিন্ন সংগঠনও কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে জাফলংয়ে পর্যটকদের পানিতে ডুবে মৃত্যু হ্রাস কল্পে নেয়া হয়েছে মাইকিংসহ তথ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে বিহিত ব্যবস্থা।

পর্যটন পুলিশ জাফলং অঞ্চলের অফিসার ইনচার্জ দেবাংশু কুমার দে জানান, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি বন্ধসহ পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে পর্যটন পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন পয়েন্টসহ পুরো পর্যটন স্পটে অবস্থান নিয়েছে। এখনো পর্যন্ত কোন পর্যটক অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনার শিকার হয়েছেন এমন খবর পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটির পুরোটা সময় পর্যটকদের নিরাপত্তায় পর্যটন পুলিশ কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণ অব্যাহত থাকবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর