হাওর বার্তা ডেস্কঃ অভিনয় ক্যারিয়ারে ২০ বছরে পূর্ণ করলেন ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খান। ১৯৯৯ সালের আজকের এ দিনে মুক্তি পেয়েছিল সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’ চলচ্চিত্রটি। এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে রূপালি পর্দায় পা রেখেছিলেন শাকিব খান।
ক্যারিয়ারের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন সূত্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাকিব খানকে নিয়ে এ আয়োজনটি সাজিয়েছেন আল কাছির
*১৯৯৯ সালে আফতাব খান টুলু পরিচালিত ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’ চলচ্চিত্রে প্রথম চুক্তিবদ্ধ হন শাকিব খান। কিন্তু মুক্তির দিক থেকে শাকিব খানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘অনন্ত ভালোবাসা’। এতে শাকিব খানের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ইরিন জামান। প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই নায়ক হিসেবে বেশ প্রশংসা পেয়েছিলেন শাকিব খান।
*এর পরের বছর ইস্পাহানী আরিফ জাহান পরিচালিত ‘গোলাম’ চলচ্চিত্রে শাবনূরের বিপরীতে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন শাকিব খান। একই বছর পূর্ণিমা, পপি এবং মুনমুনের বিপরীতে অভিনয় করেন তিনি।
*ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ছিলো শাকিব খানের। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর হঠাৎ ছোটবেলার স্বপ্নগুলো হারিয়ে যায় তার। হলে গিয়ে চলচ্চিত্র দেখতে ভালো লাগত শাকিব খানের। বন্ধুরা মিলে একদিন এফডিসিতে শুটিং দেখতে যান শাকিব খান। দারোয়ানকে ঘুষ দিয়ে প্রথম এফডিসিতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। প্রথম শুটিং দেখেছেন ঝরনা স্পটে গিয়ে। শুটিং দেখতে গিয়েই মায়ায় পড়ে যান তিনি।
*দীর্ঘ ক্যারিয়ারে প্রায় দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন শাকিব খান। অনেক চলচ্চিত্রে সেকেন্ড হিরো চরিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। কোনো চলচ্চিত্রকেই ছোট করে দেখেন না এ চিত্রনায়ক। ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘আমার স্বপ্ন তুমি, ‘কোটি টাকার কাবিন’, ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’ চলচ্চিত্রগুলো শাকিব খানকে দর্শকের মাঝে নতুন করে চিনিয়েছেন। এমনটাই বিশ্বাস করেন তিনি।
*২০০৮ সালে ১৮ এপ্রিল গোপনে বিয়ে করেন অপু বিশ্বাসকে। শাকিব খান-অপু বিশ্বাস জুটি তখন দর্শকপ্রিয়। চলচ্চিত্র নিয়ে তাদের ব্যস্ততাও ছিল তুমুল। ওই সময় পরিবারের অমতেই বিয়ে করেন শাকিব খান। প্রায় দশ বছর পর বিয়ের বিষয়টি প্রকাশ হয় এ চিত্রনায়কের। ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর কলকাতায় জন্ম হয় শাকিব-অপুর প্রথম সন্তান আব্রাম খান জয়ের। তারপর অপু বিশ্বাসকে ঘিরে অনেক জল ঘোলা হয়েছে শাকিব খানের। শেষ পর্যন্ত ২০১৮ সালের মার্চে বিচ্ছেদ ঘটে এ দম্পতির।
*দুই দশকের অভিনয় ক্যারিয়ারে তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাকিব খান। দেশের সীমানা পেরিয়ে ওপার বাংলার চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন তিনি। ঢালিউডের পাশাপাশি টালিউডেও নিজের অবস্থান ও পরিচিতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন এ সুপারস্টার।
শাকিবের বিপরীতে তারা
ইরিন জামান (অনন্ত ভালোবাসা), কারিশমা শেখ (সবাইতো সুখী হতে চায়), পপি (দুজন দুজনার), পূর্ণিমা (আজকের দাপট), মুনমুন (জানের জান), শাবনূর (গোলাম), অপু বিশ্বাস (কোটি টাকার কাবিন), নিপুণ (পিতার আসন), রোমানা (বিয়ে বাড়ি), মৌসুমী (তুই যদি আমার হইতি রে), রেসি (চেহারা), ময়ূরী (পাল্টা হামলা), কেয়া (সাহসী মানুষ চাই), সাহারা (রুখে দাঁড়াও), তামান্না (হিম্মত), শাকিবা (দুর্ধ্বষ), শিমলা (ঠেকাও মাস্তান), একা (বাহাদুর সন্তান), পলি (জাত শত্রু), নেহা (দুই নাম্বার), রত্না (পরেনা চোখের পলক), জনা (জন্ম), নদী (খুনি শিকদার), বিদ্যা সিনহা মিম (আমার প্রাণের প্রিয়া), শখ (বল না তুমি আমার), মিমো (কিং খান), তমা মির্জা (একবার বলো ভালোবাসি), তিন্নি (সে আমার মন কেড়েছে), মুক্তি (জোর করে ভালোবাসা হয় না), মাহিয়া মাহি (ভালোবাসা আজকাল), জয়া আহসান (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী), ববি হক (ফুল অ্যান্ড ফাইনাল), আঁঁচল (ফাঁদ), বিন্দু (এইতো প্রেম), অহনা (দুই পৃথিবী), পরিমণি (আরো ভালবাসবো তোমায়), মৌসুমি হামিদ (পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী-২), তিশা (মেন্টাল), শবনম বুবলী (বসগিরি), স্বস্তিকা মুখার্জী (সবার উপরে তুমি), রচনা ব্যানার্জী (ওরা দালাল), শ্রাবন্তী চ্যাট্টার্জী (শিকারি), পাওলি দাম (সত্তা), শুভশ্রী গাঙ্গুলী (নবাব), পায়েল সরকার (ভাইজান), নুসরাত জাহান (নাকাব), সায়ন্তিকা ব্যানার্জী (নাকাব), নুসরাত ফারিয়া (শাহেনশাহ), রোদেলা জান্নাত (শাহেনশাহ)।
শাকিব-অপু অধ্যায়
চিত্রাঙ্গণে শাকিব-অপু অধ্যায়ের শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে। ‘কোটি টাকার কাবিন’ চলচ্চিত্রে প্রথম জুটিবদ্ধ হয়েছিলেন শাকিব খান ও অপু বিশ্বাস। এ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন এফ আই মানিক। এরপর শাকিব খানের সঙ্গে জুটিবদ্ধ হয়ে আরও ৭২টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন অপু বিশ্বাস। অপু বিশ্বাস শুধু সহকর্মীই ছিলেন না, সহধর্মিণীও ছিলেন। খুব কাছে থেকে দেখেছেন শাকিব খানকে। শাকিব খানের ক্যারিয়ারে দুই দশক পূর্তিতে তাকে শুভ কামনা জানিয়েছেন অপু বিশ্বাস। বলেছেন, ‘দোয়া করি, আরো দুই দশক এভাবে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে জ্বলে থাকুন।’
শু ভ কা ম না
শাকিবের নায়ক হওয়ার যোগ্যতা ছিলো, তাই ওকে নিয়েছিলাম। শুরু থেকেই শাকিব খান তার স্টারডমটা ধরে রেখেছে। সে নিজেকে আরও উন্নতি করেছে, খুব কম লোকই এটা পারে। শাকিব খান আমাদের দেশের একমাত্র নায়ক, যাকে নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ করলে নিশ্চিতে থাকা যায়। লগ্নি ফেরত পাওয়া যায়। দর্শক এখনো তাকে পছন্দ করে। ২০ বছরের পথচলায় অনেক ঝড়-তুফান পেছনে ফেলে এসেছে সে। ওর জীবন আরও সুন্দর হোক, আরও ভালো হোক। ও যেন আরও ভালো শিল্পী হতে পারে সেই দোয়াই আমি করি। ওর জন্য শুভ কামনা রইল।
— সোহানুর রহমান সোহান, চিত্র পরিচালক।
২০ বছর অনেক লম্বা সময়। শাকিব খানের ক্যারিয়ারে ২০ বছর পূর্তিতে অনেক অনেক শুভ কামনা, শ্রদ্ধা উনার প্রতি। এখন পর্যন্ত আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে উনিই দাপটের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। আগামী আরও অনেক বছর উনি এভাবেই কাজ করে যাক। উনার সুস্থতা কামনা করি। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শাকিব খানের নামটা এখন পর্যন্ত যেমন জ্বলজ্বল করছে, আগামীতেও যেন এভাবেই জ্বলে থাকে।
— শবনম বুবলী, চিত্রনায়িকা
আরও কিছু প্রথম
*প্রথম গুঞ্জন : আবু সাঈদ খান পরিচালিত ‘দুজন দুজনার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সময় চিত্রনায়িকা পপির সঙ্গে প্রথম প্রেমের গুঞ্জন ওঠে শাকিব খানের।
*প্রথম হিট : শাকিব খান প্রথম হিট চলচ্চিত্রের স্বাদ পান ‘বিষে ভরা নাগিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে শাকিব খানের বিপরীতে ছিলেন মুনমুন।
*প্রথম যৌথ প্রযোজনা : ২০০৯ সালে প্রথম বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন শাকিব খান। এফ আই মানিক পরিচালিত ‘সবার উপরে তুমি’ চলচ্চিত্রে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন ওপার বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি।
*থম গান গাওয়া : ২০১১ সালে মালেক আফসারী পরিচালিত ‘মনের জ্বালা’ চলচ্চিত্রের গানে প্রথম কণ্ঠ দেন শাকিব খান। ‘আমি চোখ তুলে তাকালে সূর্য লুকায়’ শিরোনামের গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন তিনি।
*প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার : শ্রেষ্ঠ অভিনেতা ক্যাটাগরিতে শাকিব খান প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পরন ২০১০ সালে। জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।
*প্রথম প্রযোজনা : ২০১৪ সালে প্রযোজনায় আসেন শাকিব খান। এসকে ফিল্মসের ব্যানাওে তিনি প্রযোজনা করেন ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’। শাকিব খান প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন বদিউল আলম খোকন।
*প্রথম সাহিত্যভিত্তিক কাজ : রবীন্দ্রনাথের গল্প অবলম্বনে ‘সুভা’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছিলেন চাষী নজরুল ইসলাম। ২০০৬ সালে নির্মিত এ ছবিটি ছিল শাকিব খানের প্রথম সাহিত্যভিত্তিক কাজ। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন পূর্ণিমা।