শেখ হাসিনার যে কথাটি শােনেননি খালেদা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বেগম খালেদা জিয়াকে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা, তা যদি তিনি মানতেন, তাহলে আজ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস অন্যরকম হতাে। হয়তাে, এখন জেলে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হতাে না বেগম জিয়াকে।

২৭ অক্টোবর ১৯৮৭। স্বৈরাচার বিরােধি আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিতে উদ্যোগ নেয়া হলাে দুই নেত্রীর বৈঠক। দুই নেত্রীর বৈঠকের মূল উদ্যোক্তা বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা। সংগঠন এবং নেতৃত্বে শেখ হাসিনা অনেক এগিয়ে। দেশের সুশীল সমাজের একটি অংশ রাজনীতিতে ভারসাম্যের তত্ব নিয়ে উপস্থিত হলেন।

তারাই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেন যে, দুই নেত্রীর বৈঠক না হলে যেন স্বৈরাচারের পতন হবে না। এর সংগে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও সায় দিলেন। অগত্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি রাজী হলেন বৈঠকে। বৈঠকের স্থান ঠিক হলাে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর, বঙ্গবন্ধু ভবন। কিন্তু বেকে বসলেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি ৩২ নম্বরে যাবেন না। বেগম জিয়ার বৈঠক চান নিরপেক্ষ ভেন্যতে। অবাক আওয়ামী লীগ সভাপতি, ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ীতে বৈঠকে যার আপত্তি, তার সঙ্গে কিসের বৈঠক? তারপরও গণতন্ত্রের স্বার্থে রাজী হলেন শেখ হাসিনা।

পরদিন ২৮ অক্টোবর বৈঠকের সময় নির্ধারিত হলাে রাত ৯ টায়। মহাখালিতে, এটোমকি এনার্জি কমিশনের কোয়ার্টারের রেস্ট হাইসে। বেগম জিয়া সেখানে পৌঁছলেন ৯টা ৫ মিনিটে। আমীর হােসেন আমু এবং প্রয়াত ওয়াজেদ মিয়া তাঁকে রিসিভ করে রেস্ট হাউসে নিয়ে যান। ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর থেকে রওনা দিয়ে শেখ হাসিনাও মহাখালীতে পৌছে কিছুক্ষণের মধ্যে। ৯টা ১৭ মিনিট থেকে ৯টা ২৫ মিনিটে দুই নেত্রী প্রথমে ফটোসেশনে অংশগ্রহণ করেন। এরপর তাঁদের চা দেয়া হয়। এসময় কয়েক মিনিট দুই নেতার রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

কয়েক মিনিটের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর দুই দলের নেতৃবৃন্দের বৈঠকে নেতৃত্ব দেন দুই নেতা। রাত পৌনে এগারােটায় একটি যুক্ত বিবৃতি পাঠ করেন দুই দলের পক্ষ থেকে বিএনপি মহাসচিব কে. এম. ওবায়দুর রহমান।

কিন্তু শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়ার মধ্যে ৯টা ১৭ থেকে ৯টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত একান্তে কি কথা হয়েছিল? দুজনই বিভিন্ন সময়ে এ প্রসঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠদের কিছু জানিয়েছেন। বিভিন্ন জনের কাছে দেওয়া দুই নেতার বয়ানের আলােকে তাদের কথােপকথনটি ছিল অনেকটা এরকম।

শেখ হাসিনা: কি খবর? ভালাে?
বেগম জিয়া: এইতাে।
শেখ হাসিনা: ৩২ নম্বরে মিটিং করলে কি অসুবিধা হতাে?
বেগম জিয়া: না এমনই।

শেখ হাসিনা: খুনীদের বিচার বাংলার মাটিতে হবে ইনশাআল্লাহ। যারা খুনীদের মদদ দেয় তাদেরও। বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার না করে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পাবে না। জাতির পিতাকে স্বীকৃতি দেন, ১৫ আগস্ট হত্যার বিচারের অঙ্গীকার করুন। তারপর আসুন একসঙ্গে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করি। এটা না হলে ‘গণতন্ত্র’ অর্থহীন হবে।
বেগম জিয়া: চলুন ওরা অপেক্ষা করছে।

এরপর দুজন বেরিয়ে আসেন এবং নেতৃবৃন্দকে নিয়ে আনুষ্ঠানিক বৈঠক শুরু করেন। শেখ হাসিনার ঐ প্রস্তাব গ্রহণ করলে কি বাংলাদেশে রাজনীতি আঁচ এরকম থাকতাে?

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর